২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। যাতে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার প্রতি মহাকাশ যাত্রা এবং মঙ্গল গ্রহ অভিযানের সরাসরি নির্দেশ প্রদান করা হয়। নাসা নিজস্বভাবে ২০২৪ সালে চাঁদ এবং ২০৩৩ সাল নাগাদ মঙ্গলগ্রহ অভিযানের প্রতি লক্ষ্যস্থির করলেও সকলদিক বিবেচনায় পাশ্ববর্তী গ্রহে অভিযান আরো অনেকদিন পিছিয়ে যাতে পারে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। গেল সপ্তাহে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মঙ্গলগ্রহে পরিচালিত অভিযান প্রসঙ্গে নাসার নির্বাহী কর্মকর্তা জিম ব্রাইডেনস্ট্যাইন বলেন, ‘চাঁদে অভিযান আমাদের মঙ্গল গ্রহে যাবার ব্যাপারে প্রস্তুতির মঞ্চ। চাঁদই আমাদের মঙ্গলগ্রহে পৌঁছে দেয়ার জন্য সম্ভাব্য সবচেয়ে দ্রুত এবং নিরাপদ রাস্তা হতে চলেছে। এ কারণেই আমাদের প্রথম লক্ষ্য চাঁদে অভিযান।’
হিউস্টনের বিখ্যাত জনসন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের ল্যাবরেটরি প্রধান রবার্ট হাওয়ার্ডের মতে, মঙ্গলগ্রহে অভিযান প্রসঙ্গে সবচেয়ে বড় বাঁধা বৈজ্ঞানিক বা প্রযুক্তিগত কোন কিছু নয় বরং পুরোটাই আমাদের বাজেট এবং রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত। তিনি বলেন, ‘অনেকেই চাইছে আমাদের দেশে আবার অ্যাপোলোর মত কিছু একটা হোক, সেইসাথে আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট আসুক যিনি কেনেডির মত করে বলবেন, আমাদের এই কাজটি করতেই হবে এবং পুরো জাতি একসাথে তা সফল করব’।
রবার্ট বলেন, ‘সত্যিই যদি তেমন কিছুই হয় তাহলে আমি বলব, মঙ্গলে আমাদের অভিযানের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৭। কিন্তু আমার মনে হয় না আসলেই এমন কিছু একটা হতে যাচ্ছে। বাস্তবতার নিরিখে আমাদের বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী আমি বলব, ভাগ্য সহায় থাকলে ২০৩৭ সালে আমরা মঙ্গলে যাচ্ছি’। যদিও তার ভাষ্য অনুযায়ী চলমান রাজনৈতিক অবস্থায় যদি মার্কিন প্রশাসনের হতাশ পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয় তবে এই সম্ভাব্য সময় পিছিয়ে যেতে পারে ২০৬০ সাল পর্যন্ত।
সম্ভাব্য যত চ্যালেঞ্জ
স্পেসশিপ ডিজাইন, উৎপাদন কিংবা পরীক্ষণ সবদিক বিবেচনায় বলতে গেলে মঙ্গল অভিযান এখনো মাটিতেই পড়ে আছে। চাঁদে অভিযানের জন্য তিনদিনের ভ্রমণের বিপরীতে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছাতে নভোচারীদের সময় লাগবে আনুমানিক ছয় মাস। তবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগবে দুই বছরের বেশি। প্রতি ২৬ মাস পরপর মঙ্গল এবং পৃথিবী যে সময়ে সবচেয়ে কাছাকাছি আসে বিজ্ঞানীরা সেই সময়েই অভিযান সম্পন্ন করতে চাইছেন।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নভোচারীদের স্পেসস্যুট কেন্দ্র করে। নাসার প্রধান বিজ্ঞানী জুলি রবিনসনের মতে, যেকোন বড় রকমের সৌর এবং কসমিক বিকিরণ থেকে নভোচারীদের রক্ষা করা নাসার এই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যে বিগত চল্লিশ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম নাসা নতুন এক ধরনের স্পেসস্যুট ‘এক্সইমু’ তৈরির কাজে হাত দিয়েছে যদিও আগামী কয়েক বছরের মাঝে পরিচালিত কোন অভিযানেই এর ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জুলি রবিনসনের মতে, নাসার দ্বিতীয় চিন্তার কারণ, খাদ্য সমস্যা। তার মতে, ‘আমাদের বর্তমান ব্যবস্থা প্রক্রিয়াজাত উপযোগী নয়, বহনযোগ্যতার দিক থেকেও নাজুক এবং মঙ্গল গ্রহে অভিযানের পক্ষে এটি বেশ অপ্রতুল’। তৃতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে। যেকোন দুর্ঘটনায় নভোযানে থাকা ব্যক্তিরা যেন নিজেরাই নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারেন সেদিকে নাসা আলাদা গুরুত্ব দিতে চাইছে।
চতুর্থ সমস্যা হিসেবে মঙ্গলের ধুলোর পাশাপাশি দেখা দিয়েছে এমন এক প্রযুক্তি যা বলতে গেলে এখনো মানবজাতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি। মঙ্গলের প্রকৃতি থেকে পানি, অক্সিজেন এবং জ্বালানি আলাদা করে তা জীবন ধারণের উপযোগী করে তাতে টিকে থাকার মত পরিস্থিরি এখনো তৈরি হয়নি বলেই মেনে নিচ্ছে নাসা। আর পৃথিবী ছেড়ে একদল মানুষ দুই বছর স্পেসশিপে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ মানসিক শক্তি আসলেই পাবে কিনা সে নিয়েও থাকছে বড় সংশয়। প্রতিবার যোগাযোগে একদিক থেকেই সংকেত আসতে সময় লাগে ৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ড, তাই যোগাযোগ এবং তার সাথে তাল মিলিয়ে পুরো অভিযান শেষ করা বেশ একটি দুঃসাধ্য কাজ বলেই মেনে নিতে হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি