চীনভিত্তিক অংশীদারদের অ্যাডভান্সড কম্পিউটার চিপ উন্নয়নে সহায়তা করতে অন্যায়ভাবে নিজেদের প্রযুক্তি বিনিময় করেছে মার্কিন বহুজাতিক সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেস (এএমডি)। গত সপ্তাহে এ নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন ঘিরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। তবে এমন খবর নাকচ করেছে এএমডি। খবর রয়টার্স।
বিবৃতিতে জানানো হয়, এএমডির বিরুদ্ধে চীনের সঙ্গে অন্যায়ভাবে চিপ প্রযুক্তি বিনিময়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মনগড়া। যথাযথ তথ্যপ্রমাণ ছাড়া প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। আমরা অস্বীকার করছি না চীনের অংশীদারদের সঙ্গে প্রযুক্তি বিনিময় করিনি। এক্ষেত্রে এএমডি যেটা করেছে, তার প্রতিটি পদক্ষেপ সঠিক এবং স্বচ্ছভাবে করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রযুক্তি বিনিময়ের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কারণ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন পণ্য ডিজাইন ও উন্নয়নের জন্য একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। আমরা চীনা অংশীদারদের সঙ্গে চিপ প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে মার্কিন আইন লঙ্ঘন করিনি।
গত সপ্তাহে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানায়, চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সুগোন ইনফরমেশন ইন্ডাস্ট্রি নামক একটি সুপার কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে চিপ প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে এএমডি। প্রতিষ্ঠানটি চীনের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রযুক্তি সরবরাহকারী। এএমডির প্রযুক্তির কারণে চীন ‘স্টেট-অব-দি-আর্ট এক্স৮৬ চিপ’-এ প্রবেশাধিকার পেয়েছে, যা শুধু এএমডি ও ইন্টেল উৎপাদন করে আসছে।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিপ প্রযুক্তি বিনিময়ের লক্ষ্যে চীন সরকার এএমডিকে ২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার অর্থ পরিশোধ করেছে। এ অর্থ দেয়া হয় লাইসেন্সিং ও রয়াল্টি ফি বাবদ। এতে এএমডির প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নয়নকৃত যেকোনো চিপ বিক্রির অনুমোদন পেয়েছে চীন।
বিবৃতিতে এএমডি জানায়, চিপ প্রযুক্তি বিনিময়ের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। আমরা মার্কিন প্রযুক্তি বেহাত হওয়া ঠেকাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। চীনা অংশীদারের সঙ্গে যে প্রযুক্তি বিনিময় করা হয়েছে, তা নিম্ন কার্যক্ষমতার প্রসেসরসংশ্লিষ্ট।
বৈশ্বিক চিপ নির্মাণ বা সেমিকন্ডাক্টর খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এএমডি। সংশ্লিষ্ট খাতে একসময় রমরমা ব্যবসা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ব্যবসায় পরিস্থিতি বদলে গেছে। এ খাতেও এমনটাই ঘটেছে। চিপ ব্যবসায় এখন প্রতিযোগী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে। এতে পাঁচ বছর ধরে লোকসানের সম্মুখীন এএমডি। তা সত্ত্বেও খাতটির শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি ইন্টেলের জন্য হুমকি মনে করা হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। ব্যবসায় মন্দা সত্ত্বেও সম্প্রতি শেয়ারধারীদের পে-অফের ঘোষণা দিয়েছে এএমডি। এরপর থেকে বলা হচ্ছে, সেমিকন্ডাক্টর খাতের লোকসানি প্রতিষ্ঠান হয়েও ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে এএমডি, যা সংশ্লিষ্টদের সাম্প্রতিক গৃহীত কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তি খাতের গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীন। গত এপ্রিলে দেশটি থেকে লাইসেন্সিং চুক্তির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের ঘোষণা দেয় এএমডি। এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তির কথাও জানানো হয়েছে।
এএমডির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিসা সু বিবৃতিতে জানান, চীন থেকে লাইসেন্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের যে চুক্তি, তা তিনি নিজেই দেখাশোনা করছেন। এটি রাজস্ব আয় পরিকল্পনার নতুন একটি উৎস হবে। চিপ ব্যবসার বাইরে এটি হবে সম্পূর্ণ নতুন এক আয়ের উৎস।
চীনে এএমডির যৌথ উদ্যোগ বিষয়ে বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষক—উভয় পক্ষই যখন খুশি, তখন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম কিছুটা হলেও ব্যাহত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এ উদ্যোগ বৈশ্বিক সার্ভার চিপ বাজারে এএমডির দৃঢ় অবস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এরই মধ্যে তিয়ানজিন হেগুয়াং অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব ভাগাভাগি করেছে। চীনা ওই প্রতিষ্ঠানে চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সের অংশীদারিত্ব রয়েছে। যৌথ উদ্যোগে এক নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে, যা চীনের বাজারের জন্য সার্ভার যন্ত্রাংশ নির্মাণ করবে। এ বিষয়টিকে একটি পক্ষ দাবি করছে, চীনের সঙ্গে চিপ প্রযুক্তি বিনিময় করেছে এএমডি। অথচ প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক পর্যায়ে ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ অর্থ।