প্রতিটি মানুষের জীবনে স্মার্টফোন ব্যবহার এক অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফোন ছাড়া যেন মানুষের এক মুহূর্তও কাটে না। সম্প্রতি বিটিআরসির দেওয়া এক তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোনের সংযোগ আছে ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার।
অনেকে আবার নিজের চেয়েও বেশি এই মোবাইলকে ভালোবাসে। কিন্ত ব্যস্ত এ নগরীতে যে কোনো মুহূর্তে আপনার এই প্রিয় ফোনটি হারিয়ে যেতে পারে বা ছিনতাই বা চুরি হতে পারে। আর সেই সঙ্গে আপনার সব ব্যক্তিগত তথ্যও চুরি হয়ে যেতে পারে। যা থেকে আপনাকে কেউ ব্ল্যাকমেইলও করতে পারে।
তবে অনেকেই ফোন চুরি হওয়ার পর দিগ্বিদিক হারিয়ে ফেলেন। এক্ষেত্রে আপনি ঘরে বসেই জানতে পারেন নিজের ফোনটি কোথায় আছে। আর এখান থেকে চুরি বা হারিয়ে যাওয়া ফোনটি উদ্ধারও করতে পারবেন।
ফাইন্ড মাই ডিভাইস
অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলেই এখন ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ ফিচারটি দেখা যায়। আর এই সার্ভিসের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপনার ফোনের অবস্থান ট্র্যাক করা সম্ভব। ফোন হারিয়ে গেলে অন্য আরেকটি ডিভাইস থেকে গুগল অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে ফোনের অবস্থান জানার পাশাপাশি ফোনটিকে লক করে ফোনের সকল তথ্য মুছে দেওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য অবশ্যই আপনার ফোনে এই সার্ভিসটি চালু থাকতে হবে। আর অবশ্যই ইন্টারনেট কানেকশন রাখতে হবে।
চলুন জেনে নেই কীভাবে ফোনে সার্ভিসটি চালু করবেন:
সেটিংস অপশনে গিয়ে খুঁজে দেখতে হবে আপনার ফোনে ফাইন্ড মাই ডিভাইস ফাংশনটি আছে কি না। যদি না থাকে তাহলে গুগল প্লে স্টোর থেকে আপনি এই অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে নিতে হবে। সার্ভিসটি সক্রিয় করতে নিচের কাজগুলো করতে হবে।
প্রথমে ফোনের সেটিংস এ গিয়ে সিকিউরিটি অপশনে যান। এরপর ডিভাইস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অপশনে প্রবেশ গিয়ে ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ নামে যে অপশনটি আছে সেটি চালু করুন।
ফোনের অবস্থান নিখুঁতভাবে ট্র্যাক করতে লোকেশন অ্যাকিউরিসির জন্য পুনরায় সেটিংসে যান। সেখান থেকে লোকেশন অপশনে প্রবেশ করুন। উপরে ডানে দেখুন এটি চালু করা আছে কি না। চালু না করা থাকলে সেটিকে সক্রিয় করুন। পরে মোড অপশনে ক্লিক করে হাই অ্যাকিউরিসি নির্বাচন করুন।
এবার আবার লোকেশনে গিয়ে গুগল লোকেশন হিস্ট্রিতে প্রবেশ করুন। সেখানে ইউজ লোকেশন হিস্ট্রি নামে একটি অপশন পাবেন, সেটিকে চালু করে নিন। এখন আপনার ফোন তার অবস্থান জানানোর জন্য প্রস্তুত।
যেভাবে হারানো ফোন বের করবেন
• প্রথমে যেকোনো ল্যাপটপ/স্মার্টফোনের ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকে “Android.com/find” এই ঠিকানায় প্রবেশ করুন।
• এবার জিমেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে নিজের আইডিতে লগ ইন করুন।
• সেখানে গুগল অ্যাকাউন্ট কয়েকটি ডিভাইসে ব্যবহার করে থাকেন সেগুলোর একটি তালিকা দেখতে পাবেন। সেই তালিকা থেকে আপনার যে ডিভাইসটি হারিয়ে গেছে, সেটিকে নির্বাচন করলে তখনই গুগল ম্যাপের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া ফোনের অবস্থান দেখতে পাবেন।
একই সাথে ৩টি ভিন্ন অপশনও দেখা যাবে। যেমন-
১.“প্লে সাউন্ড” নামের অপশনটি বাছাই করলে ফোনে একটানা ৫ মিনিট মিউজিক বাজিয়ে যাবে। এমনকি ফোনটি সাইলেন্ট থাকলেও এই অপশন কাজ করবে।
২.“লক অপশন” নির্বাচন করে আপনি ফোনকে লক করে দিতে পারবেন এবং তার সাথে ফোনের ডিসপ্লেতে একটি বার্তাও রেখে দিতে পারবেন।
৩.“ইরেজ” অপশনটি বাছাই করলে আপনার ফোনটির সকল ডাটা মুছে যাবে; যাকে সাধারণত ফরম্যাট বলা হয়ে থাকে। এই অপশনটি বাছাই করলে গুগল একাউন্টের সমস্ত তথ্য ঐ ফোন থেকে মুছে যাবে। যার ফলে ফোনটিকে ও আর ট্র্যাক করা সম্ভব হবে না।
এছাড়া ও ফোন খুঁজে বের করার জন্য কয়েকটি জনপ্রিয় থার্ড-পার্টি অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। যেমন-
Cerberus Anti Theft
আপনি হারিয়ে যাওয়া ফোনটিকে এই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে দূরে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এটি ব্যবহার করে ফোনকে ট্র্যাক করার পাশাপাশি মেসেজের মাধ্যমে কোড পাঠিয়ে ফোনটিতে সিকিউরিটি লক করা যাবে। এমনকি মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা ব্যবহার করে চোরের ছবিও নেওয়া যাবে।
Where’s My Droid
ট্র্যাক করার সুবিধাসহ এই অ্যাপ্লিকেশনে আরও কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। যেমন- জরুরি অ্যালার্ম বাজানোর একটি ফিচার আছে, আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোনে নির্দিষ্ট একটি মেসেজ পাঠালে সেটি বেজে উঠবে। আর রয়েছে Stealth Mode ফাংশন, যেটি হারানো ফোনে যাওয়া সকল ধরনের মেসেজ লুকিয়ে রাখবে। এছাড়াও সিম কার্ড মনিটর করার একটি সুবিধাও রয়েছে।
তবে আপনার এই ডিভাইসটি যদি পেশাদার কোনো চোরের হাতে পড়ে তাহলে একে ট্র্যাক করাটা বেশ কষ্টকর হবে। কেননা পেশাদার চোরেরা ফোন পেলে সিম কার্ড ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে ফার্মওয়্যার ইনস্টল করে ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে এখানকার কোনো সফটওয়্যারই কাজে আসবে না।
কিন্তু অনভিজ্ঞ চোরের কাছে গেলে সেটি খুঁজে পাবার সম্ভাবনা আছে। তাই চেষ্টা করতে দোষ কী?