বৃহত্তর চীন ব্যতীত বিশ্বজুড়ে সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাপল ইনকরপোরেশন। উৎপত্তিস্থল চীনে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। তবে ভাইরাসটির সংক্রমণ এখন ইউরোপে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচালিত নিজেদের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। খবর রয়টার্স।
অ্যাপলের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুকের লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, বৃহত্তর চীন ব্যতীত বিশ্বজুড়ে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটির সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র ২৭ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন করে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতেই এ সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, অ্যাপলের সব কার্যালয়ে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অ্যাপল কার্যালয়ে কাজের ধরনে নীতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমরা বিশ্বজুড়ে থাকা অ্যাপল কর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এ কারণে কর্মীদের বাড়িতে থেকে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বৃহত্তর চীনের উহান প্রদেশে প্রথম নভেল করোনাভাইস শনাক্ত হয়। এরপর ভাইরাসটি দ্রুত বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। ভাইরাসটিতে চীনে নতুন সংক্রমণের হার কমলেও এখন ইউরোপজুড়ে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, ইতালিতে ভয়াবহ রূপে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ।
টিম কুক কর্মীদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা অঞ্চলের জন্য নয়, বিশ্ববাসীর জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্তদের সহায়তায় দেড় কোটি ডলার আর্থিক অনুদান দিয়েছি।
বিশ্বজুড়ে সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও আইফোনের গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীনে নিজেদের সব বিক্রয়কেন্দ্র খুলে দিয়েছে অ্যাপল। দেশটির উহান প্রদেশে কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে প্রথমে নিজেদের ফ্ল্যাগশিপ স্টোর বন্ধ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। এরপর কর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করা হয়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় গত সপ্তাহজুড়ে ধারাবাহিকভাবে দেশটিতে থাকা মোট ৪২টি খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র খুলে দিয়েছে অ্যাপল। বিশ্বজুড়ে পাঁচ শতাধিক খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করছে অ্যাপল। এর প্রায় অর্ধেকই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত।
বিবৃতিতে অ্যাপল জানায়, চীনে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা কমতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় দেশটিতে অ্যাপল স্টোরগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। তবে চীনে নিজেদের স্টোরগুলো টানা কয়েক সপ্তাহ বন্ধ থাকায় অ্যাপলের আইফোন ব্যবসা বিভাগের প্রথম প্রান্তিকের আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
অ্যাপলের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে সতর্ক করা হয়েছে, চীনভিত্তিক ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের প্রভাব অ্যাপলের আইফোন ব্যবসা বিভাগের ওপরও তীব্র প্রভাব ফেলছে। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে চীনে আইফোনের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তাদের আগাম পূর্বাভাসের তুলনায় রাজস্ব আয় অনেকাংশে কম হবে। প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করে নেয় তাদের আইফোন উৎপাদন ও বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী আইফোন সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বজুড়ে নিজেদের সব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠানটির জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের রাজস্বে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
বহুজাতিক প্রথম কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল, যা চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেয়। দেশটিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আইফোন উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। অ্যাপল জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ৪ কোটি ১০ লাখ ইউনিট আইফোন উৎপাদনের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, তা পূরণ সম্ভব হবে না। কারণ ফক্সকনের কারখানায় টানা কয়েক সপ্তাহ আইফোন উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। উৎপাদন বিভ্রাটের কারণে সরবরাহ ও বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।