চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কভিড-১৯ মহামারীসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও হুয়াওয়ের আয় ২ হাজার ৫৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের চূড়ান্ত আর্থিক খতিয়ানে এমন তথ্যই জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে হুয়াওয়ে জানায়, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় তারা কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। কর্মীদের প্রয়োজনীয় সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে বড় ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে কাজ চলছে। বিপর্যস্ত এ সময়ের মধ্যেও হুয়াওয়ের ব্যবসা আগের মতোই চলছে। যে কারণে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে আশানুরূপ মুনাফা অর্জিত হয়েছে।
বৈশ্বিক সংকটপূর্ণ এ সময়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেকটা প্রাণস্বরূপ। কাজেই এ মুহূর্তে নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক রাখাটা হুয়াওয়ের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বিঘ্ন নেটওয়ার্ক সরবরাহে নিজেদের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে ক্যারিয়ারগুলোকে সাহায্য করে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অবস্থায় নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে মানুষ এখন টেলিযোগাযোগ, অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি ও ই-কমার্সের প্রতি বেশি ঝুঁকছে। এর ফলে নেটওয়ার্কের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদা পূরণে ক্যারিয়ারগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে হুয়াওয়ে।
কভিড-১৯ মহামারী আকারে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই হুয়াওয়ে এবং অংশীদাররা মিলে দ্রুততার সঙ্গে ফাইভজি ও এআইনির্ভর একাধিক মেডিকেল অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছে। যোগাযোগ প্রযুক্তিতে নিজেদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে করোনা মোকাবেলা এবং জীবন রক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এআইনির্ভর করোনা ডায়াগনোসিস সমাধানের মাধ্যমে সিটি স্ক্যান পর্যালোচনার সময় ১২ মিনিট থেকে ২ মিনিটে নেমে এসেছে, যা করোনা চিকিৎসায় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সহায়তা করছে।
হুয়াওয়ের দাবি, ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে তাদের ফাইভজিনির্ভর ‘ভিডিও পরামর্শ’ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সহায়তার পাশাপাশি করোনা শনাক্তকরণ ও গুরুতর রোগীর চিকিৎসা প্রদানের দক্ষতা বাড়িয়েছে। এআইনির্ভর থার্মাল ইমেজিং যন্ত্র সন্দেহভাজন রোগীর শরীরের তাপমাত্রা মাপতে পারছে, যা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনমতো মাস্ক, টেস্ট কিটসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, লাওসসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল এবং আসিয়ানভুক্ত অনেক দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে হুয়াওয়ে। অভিনব প্রযুক্তি সহায়তার মাধ্যমে যোগাযোগ ঝুঁকি চিহ্নিত করার পাশাপাশি নির্বিঘ্ন সংযোগসহ অন্যান্য দরকারী সেবা প্রদানে সর্বোচ্চ সহায়তা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
হুয়াওয়ের দাবি, তাদের ফাইভজি নেটওয়ার্কনির্ভর এআই প্রযুক্তি রোগ নির্ণয়ের সক্ষমতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ২০ হাজার সিটি স্ক্যানের ফলাফল বিশ্লেষণ করা যায়। এছাড়া বিদ্যমান ডাটাবেজের নমুনার সঙ্গে তুলনা করে এটি সহজেই রোগ শনাক্ত করতে পারে। পাশাপাশি তাদের টেলিকনসালটেশন সুবিধা স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সংক্রমণ ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রান্তে রোগ নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা গড়ে তোলার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়।
এ বিষয়ে হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান এরিক জু বলেন, আমরা আশা করি, বৈশ্বিক এ মহামারী শিগগিরই থেমে যাবে। সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত প্রতিটি রোগী যথাযথ চিকিৎসা পাবে এবং দ্রুতই সেরে উঠবে বলেও আমরা আশা করি। ভয়াবহ এমন বিপর্যয় মোকাবেলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। কারণ ভাইরাস কোনো সীমানা মানে না।