বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার ভারত। দেশটিতে সাশ্রয়ী আইফোন দিয়ে বাজিমাত করছে অ্যাপল। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ভারতে আইফোন সরবরাহে ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে মার্কিন এ প্রযুক্তি জায়ান্ট, যা ২০১০ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর সর্বোচ্চ। গত এক দশকে ভারতের বাজারে এমন প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেনি আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। খবর ইটি টেলিকম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকজুড়ে ক্রমবর্ধমান ভারতের স্মার্টফোন বাজারে দখল বাড়াতে সক্ষম হয়েছে অ্যাপল। শুধু জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি দুই মাসেই আইফোন সরবরাহে ভারতে এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি, যা নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট মহামারীর মধ্যেও জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক উল্লেখযোগ্য সরবরাহ প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
ভারতের স্মার্টফোন বাজারের সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নিয়ে দেশটিতে স্থানীয়ভাবে আইফোন উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু করেছিল অ্যাপল। শুরুতে দেশটিতে ফক্সকনসহ তৃতীয় পক্ষের চুক্তিভিত্তিক অন্তত তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাশ্রয়ী আইফোন এসই উৎপাদন করা হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে হাই-এন্ড আইফোনও উৎপাদন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ভারতে উৎপাদিত আইফোন দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক বাজারে সরবরাহ করছে অ্যাপল। যে কারণে আগের চেয়ে তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে আইফোন সরবরাহ করতে সক্ষম হচ্ছে প্র িতষ্ঠানটি, যা সরবরাহ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইন্ডাস্ট্রি ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ সিএমআরের প্রধান প্রভু রাম বলেন, অ্যাপল ভারতে যতসংখ্যক ইউনিট আইফোন বিক্রি করছে, তার ৭০ শতাংশই সাশ্রয়ী আইফোন এক্সআর ও আইফোন ১১ সিরিজের ডিভাইস। সাশ্রয়ী মূল্যের পাশাপাশি আকর্ষণীয় ছাড় অফার এবং পর্যাপ্ত সরবরাহের বিষয়টি ভারতীয় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ভারতে আইফোন সরবরাহে অ্যাপলের প্রবৃদ্ধি সত্যিই নজরকাড়ার মতো। কারণ গত বছরজুড়ে বাজারটিতে আইফোন সরবরাহে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ শতাংশ, যা চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই প্রায় চার গুণ বেড়েছে।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। এরপর ভাইরাসটির সংক্রমণ দ্রুত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নভেল করোনাভাইরাসকে মহামারী ঘোষণা দিয়ে সতর্কতা জারি করে। ভাইরাসটি এমন সময় ছড়ায়, যখন চীনে নববর্ষ পালিত হচ্ছিল। সংক্রমণ এড়াতে চাইনিজ নববর্ষ পালনের জন্য তাইওয়ানে থাকা কর্মচারীদের চীনের উহান প্লান্টে ফিরে না আসতে সতর্ক করেছিল অ্যাপলের প্রধান চুক্তিভিত্তিক পণ্য সরবরাহকারী ফক্সকন। যে কারণে অ্যাপলের ডিভাইস ব্যবসায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছিল। চীন এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ডিভাইস উৎপাদন কার্যক্রমও স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরেছে। যে কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে অ্যাপল।
তাইওয়ানভিত্তিক ফক্সকন অ্যাপলের প্রধান চুক্তিভিত্তিক পণ্য সরবরাহকারী। প্রতিষ্ঠানটি চীনের উহান কারখানায় আইফোনসহ অ্যাপলের আরো কিছু ডিভাইস সংযোজনের কাজ করে আসছে। তবে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীর কারণে আইফোনসহ অ্যাপলের অন্যান্য ডিভাইস উৎপাদন কয়েক সপ্তাহের জন্য স্থবির হয়ে পড়েছিল। ফলে চলতি বছরের প্রথমার্ধে আইফোন উৎপাদন ১০ শতাংশ বাড়ানোর যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা বাধার মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে অ্যাপল ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উহান থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির কারণে কারখানা কর্মচারীদের অহেতুক ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চায়নি ফক্সকন। এটা প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের জন্য খুব একটা সুবিধার হবে না। নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে ফক্সকন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা ইতিবাচক ছিল। তবে ওই সিদ্ধান্তে অ্যাপল ডিভাইস উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে, যা অ্যাপলের ডিভাইস ব্যবসা বিভাগের জন্য খুব একটা সুখকর হবে না। তবে ভারতের বাজারে আইফোন সরবরাহে দৃঢ় প্রবৃদ্ধি প্রতিষ্ঠানটির সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফক্সকনকে চলতি বছরের প্রথমার্ধে আট কোটি আইফোন উৎপাদনের নির্দেশ দিয়েছিল অ্যাপল। গত ফেব্রুয়ারিতে বড় পরিসরে এ উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছিল ফক্সকন। কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অ্যাপলের ৯০ শতাংশ পণ্যই এখনো চীনে সংযোজন করা হয়। যে কারণে ভারতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা দ্বিতীয় (এপ্রিল-জুন) প্রান্তিকের আর্থিক খতিয়ানে স্পষ্ট হতে পারে।