ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক শব্দ । মুজিব মানে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানে শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধু এক এবং একক তার তুলনা বিশ্বে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ত্বদানকারী অনেক নেতা আছেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ত্ব, আত্মত্যাগ, জাতিস্বত্ত্বা গঠন ও একটি সশস্ত্র যুদ্ধে সমগ্র জাতিকে পরিপূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ করার সবগুলো গুণ আর কোন স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ত্বদানকারী নেতার নেই। এজন্য তিনি অনন্য ও অসাধারণ।
মন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। একাত্তরের পরাজিত শক্তি তাদের দোসরদের সহায়তায় এই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করে যাতে তারা বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারে। বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের প্রকাশিত ভিডিও সাক্ষাতকারের বক্তব্য থেকে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। কারা ১৫ আগস্ট হত্যার নেপথ্য নায়ক ছিলো তাও পরিস্কার হয়েছে।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় ডাক ভবনে ডিজিটাল প্লাটফর্ম এ ডাক অধিদপ্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: নূর-উর-রহমান এর সভাপতিত্বে এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএস ভদ্র এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: শাহাদাত হোসেন, যুগ্ন-সচিব জিসান আহমেদ, মোহাম্মদ আবদুল হান্নান, টেলিকম অধিদপ্তরের পরিচালক মহসীনুল আলম, বিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: রফিকুল মতিন, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন্স স্যাটেলাইট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী এবং ডাক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ প্রমূখ বক্তৃতা করেন।
মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শীতার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষের ভাষা বুঝতেন। ১৯৪৭ সালের পর থেকে বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে এমনভাবে সংগঠিত করেছেন যা ইতিহাসে বিরল। এরই ধারাবাহিকতায় মাত্র নয় মাসে ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈনিককে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল বাঙালি।আমরা প্রায় বিনা হাতিয়ারে কিংবা হালকা হাতিয়ার নিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এদেশের প্রতিটি মা নিজের সন্তানের মত করে আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, খেতে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকুক এ জন্য হাজার হাজার নামাজ পড়েছেন, রোজা রেখেছেন দোয়া, পুজা ও প্রার্থনা করেছেন। এটা জাতিকে বঙ্গবন্ধুর সুসংগঠিত করার ফসল।
বঙ্গবন্ধু সমস্ত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে লড়াই করেছেন উল্লেখ করে একাত্তরের রণাঙ্গণের সম্মুখ যোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার বলেন, বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শীতা পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মহান বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ হুচিমিন, মাওসেতুং কিংবা চেকুয়েভারার প্রতি পরম শ্রদ্ধা জানিয়েই মন্ত্রী বলেন, কারো সাথে বঙ্গবন্ধুর তুলনা করা যায় না। এদের প্রত্যেকেই কোন কোন বিশেষ পন্থা, বিশেষ জনগোষ্ঠী বা বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেছেন-কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার দূরদর্শিতায় সমগ্র জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সামগ্রিক জনযুদ্ধ। গোটা কয়েক রাজাকার – আলবদর ছাড়া সমস্ত জাতিকে এককাতারে এনে সুদীর্ঘ্য সময়ে বিশেষ নেতৃত্ত্বের গুণে জাতি রাষ্ট্র তিনি গঠন করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের প্রামাণ্য দলীল ৭২ সালের মূল সংবিধান।এই রাষ্ট্র মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সকলের। বাংলা হচ্ছে আমাদের জাতিসত্তার ভিত্তি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়েও প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ, আইটিইউ, ইউপিইউ এর সদস্যপদ অর্জন এবং বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা্সহ সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয় এই শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে নানা কর্মকৌশল নিয়ে দেশ পূণগর্ঠনের যাত্রা তিনি শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে ঘুরে দাঁড়াতো। তার সুযোগ্য উত্তরসূরী জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ একুশ বছরের জঞ্জাল পরিস্কার করে ৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল এবং ২০০৯ সাল থেকে পরবর্তী এগারো বছরসহ ১৬ বছরে দেশকে বিশ্বে বিস্ময়কর অগ্রগতির দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে উন্নীত করেছেন। করোনাকালেও আমাদের প্রবৃদ্ধি, মাথা পিছু আয় এবং রিজার্ভ বাড়ছে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু যে বীজ বপন করে গেছেন তা শেখ হাসিনার হাতে একটি মহিরূহে রূপ নিচ্ছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময় বলতেন আমার মানুষ। তিনি প্রতিজন মানুষকে নিজের মানুষ মনে করতেন। এত বড় হৃদয়ের মানুষ পৃথিবীতে বিরল। তিনি শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে সোনার বাংলা গড়ে উঠতো। তারা এই মহান নেতার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।