বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগল এবং এর প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাই বলেছেন, কভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী কর্মক্ষেত্র একটি হাইব্রিড মডেলভিত্তিক হবে। মহামারীর ভয়াবহতা বিবেচনায় যেহেতু বিপুলসংখ্যক কর্মী বাসায় থেকে কাজ করছে, তাই কার্যালয় ঢেলে সাজানোর কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। খবর ইয়াহু নিউজ।
টাইম ১০০ ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে সুন্দর পিচাই বলেন, আরো বেশিসংখ্যক কর্মীকে বাসায় থেকে কাজের স্থায়ী সুবিধা দেয়ার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে কার্যালয় ঢেলে সাজানো শুরু করেছে গুগল। একই সঙ্গে প্রথাগত অফিস ব্যবস্থা একেবারে থাকবে না এমনটাও বিশ্বাস না করার কথা জানিয়েছেন পিচাই।
সুন্দর পিচাই বলেন, প্রথাগত কর্মপরিবেশও বিদ্যমান থাকবে। কারণ এটা থেকে সব প্রতিষ্ঠানের বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীবাহিনীর একটি বড় অংশ স্থায়ীভাবে বাসায় থেকে কাজ করতে পারবেন। কভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী কর্মক্ষেত্র একটি হাইব্রিড মডেলভিত্তিক হবে। এখন যেসব গুগল কর্মী বাসায় থেকে অফিসের কাজ করছেন, তারা যখন অফিসে ফিরবেন, তখন গুগল কার্যালয় তাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন মনে হবে।
সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে সুন্দর পিচাই বলেন, তারা নিজেদের ফিজিক্যাল স্পেসে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। ভবিষ্যতে গুগল কর্মীদের আরো ভালো কর্মপরিবেশ দেয়ার লক্ষ্য থেকে এ পরিবর্তন। যেখানে একটি হাইব্রিড মডেল থাকবে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র এখনকার চেয়ে আরো ফ্লেক্সিবল হবে। আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একত্রিত হয়ে কাজ করায় বিশ্বাস করি। কারণ কোনো কঠিন সমস্যা সমাধানে কিংবা নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য কমিউনিটির মধ্যে থেকে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। যে কারণে আমরা ভবিষ্যতের জন্য শতভাগ রিমোট ওয়ার্ক বিশ্বাস করছি না।
সুন্দর পিচাই সাক্ষাত্কারে বলেন, গুগল অফিসে বাসায় থেকে কাজ করে চলা কর্মীদের জন্য মাঝে মধ্যে ফিজিক্যালি একত্রিত হয়ে বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে।
কভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিজেদের অধিকাংশ কর্মীকে আগামী বছরের জুলাই পর্যন্ত বাড়িতে থেকে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন সুন্দর পিচাই। বিশ্বজুড়ে গুগলের প্রায় দুই লাখ কর্মী রয়েছেন। তাদের সবার জন্য এ নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গুগল সিইওর নির্দেশনা সম্পর্কে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। জানা গেছে, বাড়িতে থেকে কাজ করার সময়সীমা বাড়ানোসংক্রান্ত নোটিসের কাগজপত্র গুগল কর্মীরা আগামী জানুয়ারির শেষদিকে পেয়ে যাবেন। করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নীতিতে বদল এনেছে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা। কর্মীদের বাড়িতে থেকে কাজ করার সুযোগের মেয়াদ বৃদ্ধি করছে তারা।
গুগলের পাশাপাশি কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে কর্মীদের আগামী বছরের জুলাই পর্যন্ত বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকও। একই সঙ্গে বাসা থেকে কাজ করার সময় কর্মীদের ১ হাজার ডলার প্রণোদনা দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছরের শুরুর দিকে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকলে একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল বৃহৎ আরো কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে যতদিন খুশি কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে টুইটার।
বিবৃতিতে ফেসবুকের মুখপাত্র বলেন, স্বাস্থ্য ও সরকারি বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা এবং এ বিষয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ আলোচনার ভিত্তিতে কিছু কর্মীকে আগামী বছরের জুলাই পর্যন্ত বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছি, যা ফেসবুকের কর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতিরই বহিঃপ্রকাশ। একই সঙ্গে বাসায় কর্মীদের অফিসের চাহিদা মেটাতে বাড়তি ১ হাজার ডলার দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কভিড-১৯ মহামারীর বাস্তবতায় অনেক প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেও গুগল ও ফেসবুকের ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।