নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে পাঠদান, অফিস মিটিং থেকে শুরু করে কেনাকাটা পর্যন্ত অনেক কাজ ইন্টারনেটে স্থানান্তরিত হয়েছে। আর এ কারণে শহর থেকে গ্রাম প্রতিটি মানুষের জীবনে ইন্টারনেট একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। এমন প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও পৃথিবীর অনেক মানুষই এখনো ইন্টারনেট সেবার বাইরে থেকে গেছে। সম্প্রতি শহর ও গ্রামের মানুষদের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ ও প্রাপ্তির উদ্বেগজনক ব্যবধান প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিই) একটি নতুন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের পরিবারগুলোতে ইন্টারনেটের ব্যবহার অর্ধেক। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।
সোমবার প্রকাশিত ‘মিজারিং ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট: ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগার ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে শহরাঞ্চলে প্রায় ৭২ শতাংশ পরিবারে ইন্টারনেট ছিল। এ হার গ্রামাঞ্চলের ৩৮ শতাংশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
আইটিইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামীণ অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবধান বিশেষত স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে উচ্চারিত হয়। সেখানে গ্রামীণ জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ এমন অঞ্চলে বসবাস করে, যেখানে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। এছাড়া দেশগুলোর গ্রামীণ জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ কেবল টুজি নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত।
আইটিইউর মহাসচিব হোলিন ঝাও এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা নগর ও গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে পারিবারিক ইন্টারনেট সংযোগের এমন উল্লেখযোগ্য ব্যবধানকে আর কত সময়ে মেনে নিতে পারি। কভিড-১৯ মহামারীর এ সময়ে অনেক মানুষই বাড়ি থেকে কাজ করছেন এবং ছেলে-মেয়েরা ভার্চুয়ালি পড়াশোনা করছেন। এমন সময়ে নতুন চিত্রগুলো আমাদের স্পষ্ট বার্তা দেয়, বিস্তৃত অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা আমাদের অন্যতম জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।
গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রায় এক-চতুর্থাংশ জনসংখ্যা এবং স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রায় ১৫ শতাংশ নাগরিক মোবাইল-ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে। যদিও এটি এখন আর আশ্চর্যের বিষয় নয় যে অঞ্চল ও উন্নয়নের স্তর নির্বিশেষে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
বিশ্বজুড়ে যেখানে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ১৫-২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ৩৮ শতাংশ তরুণ-তরুণী ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। যেখানে তাদেরসহ মোট জনসংখ্যায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ১৯ শতাংশ।
অন্যদিকে উন্নত দেশগুলোতে শতভাগ তরুণ-তরুণী ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামগ্রিকভাবে সর্বাধিক অনুপাতে তরুণ-তরুণী ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। সর্বশেষ আইটিইউর ডাটা প্রমাণ করে ২০২০ সালে মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কগুলোর আওতা বাড়ানোর প্রক্রিয়াগুলো ধীর হয়ে গেছে।
২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ফোরজি নেটওয়ার্কে কাভারেজ বিশ্বজুড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও ২০১৭ সাল থেকে নেটওয়ার্কের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে গেছে এবং গত বছরের তুলনায় ২০২০ সালে নেটওয়ার্কের কাভারেজ মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
আইটিইউ বলছে, অবকাঠামোর বিস্তৃতি ছাড়াও ডিজিটাল লিঙ্গ বৈষম্য, ডিজিটাল দক্ষতা ও সামর্থ্যের অভাবের মতো বিভাজনগুলো একটি ডিজিটাল সমাজে অব্যাহতভাবে চলছে। এগুলো সবচেয়ে বেশি বিশেষত উন্নয়নশীল বিশ্বে, যেখানে অনেকের জন্যই মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট খুব ব্যয়বহুল।