বগুড়ার আদমদীঘিতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মেশিনের তৈরি প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তৈরি মাদুর এখন স্থানীয়সহ দেশের হাটবাজারগুলো দখল করে নিয়েছে। এর ফলে স্থানীয় চাষ করা পাতির তৈরি মাদুর দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এতে বেকার হয়ে পড়ছে মাদুর তৈরি কাজে জড়িত শত শত নারী, পুরুষ শ্রমিক।
বগুড়ার জেলার আদমদীঘি থানার হেলালিয়া হাট পূর্ব ও পশ্চিম ছাতনী, সান্তাহারের মাদার মোল্লা এবং রাণীনগরের ত্রিমোহনী এলাকায় প্রাকৃতিক পাতি তৈরি হত । মাদুরের চাহিদা দিন দিন কমে যাওয়ায় সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া, তারাপুর, কাজিপুর, ছাতনী, ঢেকড়া, প্রান্নাথপুর, পানলা, চকজান, দরিয়াপুর, সান্তাহার পৌরসভার মালশন, পাশের নওগাঁ সদরের শিমুলিয়া, ইলশাবাড়ি, চন্ডিপুর সহ বিভিন্ন এলাকা শত শত মানুষ ছেড়ে দিয়েছে প্রাকৃতিক উৎস থেকে তৈরি মাদূর।
এমনকি বিভিন্ন হাটবাজারে আত্রাইয়ের চাপড়াগ্রামের মাদুরের ব্যাপক চাহিদা ছিল। এ জন্য ওই গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামে মাদুর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করত শত শত পরিবার। আর এসব মাদুর তৈরির জন্য চাষ করা হতো পাতির। যা এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন প্লাস্টিক জাতের মাদুরে বাজার সয়লাব হওয়ায় পাতির মাদুরের চাহিদা কমে যায়। ফলে এলাকায় পাতি চাষও হ্রাস পায়। তার পরও অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও কিছু কৃষক চাষ করছেন পাতির।
স্বাস্থ্যসম্মত মাদুর। এক সময় ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু এখন আর বেশি পাওয়া যায় না। কারণ সেই মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ পাতি চাষ বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।
প্রাকৃতিক পাতর মাদুরের স্থান দখল করেছে ভারতীয় প্লাস্টিকের তৈরি কৃত্রিম পাতি ও মাদুর। দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ার কারণে প্লাস্টিকের তৈরি রং বে-রঙের চোখ ধাঁধানো পাতি (পাইপ) ও মাদুর তৈরির কারখানা স্থাপন ও বিক্রির ধুম পড়েছে। ফলে পাতি চাষ ও মাদুর উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে।
এখনও যারা চাষ করা পাতির মাদুর তৈরিতে নিয়োজিত, তারা বাহারি নক্সা কেমিকেল যুক্ত ক্ষতিকর রঙ করতে পারে না। পাতিতে রং করে মাদুর তৈরি করে বাজার জাত না করে পেশা ছেড়ে দিয়েছে । হার মেনেছে তারা এই বিদেশি মেশিন নলের পাইপে তৈরি মাদূরের কাছে। গুটিয়ে নিয়েছে তাদের হাত ও পূর্ব পুরুষ এর রেখে যাওয়া তাঁত।
বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আর আসে না সান্তাহারের হেলালিয়া এবং রাণীনগরের ত্রিমোহনী হাটের প্রাকৃতিক পাতির তৈরি মাদুর কিনতে। তারা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন প্লাস্টিকের মাদূর। পাইপে তৈরি ও মাদুর বুননের স্বয়ংক্রিয় মেশিনের কারখানায় চাকরি করছেন অনেকেই যারা একসময় বাড়িতে হাতে প্রাকৃতিক মাদূর বুনার কারিগর ছিলেন।
প্রচার প্রসার করে ফেলেছে প্রাকৃতিক মাদুর আর চলে না মানুষ আর কিনে না। তাই যে সব নারী-পুরুষ প্রাকৃতিক মাদূর বুনতো তারা পাইকারের কাছে প্রাকৃতিক মাদূর বেচতে না পেরে দুটি পয়সা ইনকামের পথ যেন না হারায় এইজন্য ছুটে যাচ্ছেন প্লাস্টিকের মাদূর কারখানায়। নতুন প্রযুক্তির পাইপ বাড়ি তে এনে মজুরির বিনিময়ে বাড়িতে হাতে বুনন করছে নক্সা ছাড়া মাদুর। এই শিল্প কে শেষ করতে কোন পথই ছাড়ে নি এরা। কাজে লাগিয়েছে দূর্বল গরীব মানুষ গুলো র অসহায় অবস্থা কে।
বর্তমানে প্লাস্টিক মাদুরের চাহিদা আকাশমুখী হলেও অদূর ভবিষ্যতে তা আর থাকবে না। কারণ প্রাকৃতিক পণ্যের চাহিদা কমবেশি সর্বকালের । যারা এর কদর জানে তাদের বাহারি প্লাস্টিক মাদুর ফ্রী তেও ব্যবহার করে না। এজন্য আজও আশা করি, আবারও সগৌরবে ফিরবে প্রাকৃতিক পাতির চাষাবাদ। হাসি ফুটবে কৃষাণ-কৃষাণীর মুখে। কারিগররা আবারও ঘরে ঘরে বুনবে বনজ মাদুর।
লেখক
নুসরাত জাহান