আমরা স্বপ্ন দেখি,স্বপ্ন সাজাই কিন্তু সেটিকে বাস্তবায়নের চেষ্টায় সাহস করে এগিয়ে যেতে পারি না অনেকেই।আবার উল্টো রকমও দেখা যায়, দেখা যায় অনেককেই চাকরীর পাশাপাশি উদ্যোক্তা জীবনও সমানভাবে এগিয়ে নিতে।এমনই একজনের সাথে আজ আমরা গল্প করবো আর জানবো তাঁর উঠে আসার কথা।ফেনীতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিগার সুলতানা বর্তমানে চাকরীর পাশাপাশি দেশিপণ্যের উদ্যোক্তা।তিনি “আরিয়ানা”র স্বত্ত্বাধীকারী এবং এটি বাটিকপণ্যের উদ্যোগ।নিগার সুলতানা ফেনী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রী এবং ঢাকা বাংলা কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর করেছেন।
টেকজুমঃ কিভাবে “আরিয়ানা”র পথচলা শুরু?
নিগার সুলতানাঃ ছোট থেকে একটি ইচ্ছা সবসময় মাথায় ছিল বড় হয়ে চাকরি করবো।এইচ.এস.সি কমপ্লিট করার পর ফেনীতে একটা কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করি। চাকরির পাশাপাশি বেশ ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়েছি এবং বেশ জমজমাট ভাবে অনেকগুলো টিউশনি করতাম।এরমধ্যে ভালো চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ মাথায় আসলো অনলাইন ব্যবসা করবো।নেমে গেলাম কি নিয়ে ব্যবসা করলে আমি সফল হতে পারব তা নিয়ে গবেষণা।গবেষণা শেষে বেছে নিলাম বাটিক পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবো; এরই মধ্যে একটা পেইজ খুলে নিলাম পেইজের নাম হল “আরিয়ানা”। প্ল্যানটা ছিল অনলাইন ব্যবসা করবো তবে ব্যবসাটা অনলাইন ছিল না অফলাইনে বেশি ছিল।শুরু করে দিলাম “আরিয়ানা”র যাত্রা।আরিয়ানাকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল আমার আকাশ ছোঁয়া।আরিয়ানাকে সাজানোর জন্য শুরু করি বিভিন্ন জায়গা থেকে বাটিক পণ্য সোর্সিং। ইচ্ছে ছিল আরিয়ানার পন্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে গিয়ে পৌঁছবে। আলহামদুলিল্লাহ সেই ইচ্ছে এখন পূরণ হচ্ছে “উই” এর কারনে।
টেকজুমঃ চাকরী থাকা স্বত্ত্বেও কেন এফ-কমার্স উদ্যোগে আসতে ইচ্ছে হলো?
নিগার সুলতানাঃ চাকরি থাকা সত্বেও এফ-কমার্স উদ্যোগ বেছে নেওয়ার কারণ হলো স্কুলের চাকরির পাশাপাশি মাথায় আসে এই উদ্যোগের কথা। বড় বড় চাকরীর পেছনে ছোটাছুটি করে কেন যেন মনে হলো চাকরী,পড়াশোনা পাশাপাশি অনলাইন ব্যবসা সুবিধাজনক। আলহামদুলিল্লাহ চাকরী টিউশনির এবং পড়াশোনা সবকিছুর সাথে আমার আরিয়ানা একটু একটু করে বড় হচ্ছে।
টেকজুমঃ উদ্যোগের পথে বাধা এসেছে কখনোও?
নিগার সুলতানাঃ নারী হিসেবে প্রচুর বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে; উদ্যোক্তা জীবন মানে চ্যালেঞ্জে ভরপুর। প্রথমত বাধা বলতে আমার আব্বুই আমার প্রথম বাধা ছিল।আব্বু বলতেন এত পড়াশোনা করে ব্যবসা কেন করবি?ভালো চাকরি করবি। কিন্তু আব্বুকে আমার ব্যবসা সম্পর্কে বোঝানোই মহাকষ্ট ছিল।চাকরির বাজার অনেক কঠিন যাইহোক আব্বুর সামনে পণ্য এবং ক্রেতা সামলানোই ছিল আমার জন্য ডিফিকাল্ট।এরমধ্যে আত্মীয় স্বজনদের খোঁচা দেওয়া কথা তো আছেই। তবে রিসেন্টলি আমার আব্বু আমার ব্যবসা মেনে নিয়েছেন।
টেকজুমঃ উদ্যোগের জন্য বাটিককে কেন বেছে নিলেন এবং এটি দেশিপণ্য হিসেবে এর ভবিষ্যত কেমন দেখেন?
নিগার সুলতানাঃ বাটিক পণ্য সারাদেশে খুবই জনপ্রিয়। এই পণ্য সকল বয়সী মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করে এবং খুবই আরাম অনুভব করে।তাছাড়া আমি নিজেও খুব পছন্দ করি এটি। ছোট থেকে বাটিকের প্রতি দুর্বলতা কাজ করতো তাই নিজের পছন্দের কাপড়কে পেশায় পরিণত করে নিলাম। বাটিক নিয়ে স্বপ্ন আমার আকাশ ছোঁয়া। ভবিষ্যতে বাটিক কারখানা গড়ে তুলে গরীব অসহায় নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার খুবই ইচ্ছা।
টেকজুমঃ “আরিয়ানা”র সফলতায় অনুপ্রেরণা কি এবং কেন জানতে চাই।
নিগার সুলতানাঃ আমার উদ্যোগের সবচেয়ে বেশি আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি আমার আম্মুর কাছ থেকে। আমার আম্মুর সাপোর্টে আমি বের হতে পেরেছি পণ্য সোর্সিংয়ে এবং উদ্যোক্তা জীবনের প্রথম ইনভেস্ট আমার আম্মুর করেছিল। আমার আম্মু সবসময় বলতেন আম্মুর টাকা নাকি কোথাও বিনিয়োগ করলে সেটি বরকতময় হয়। সত্যি আজ আমার ব্যবসা বরকতময় হয়েছে।। আম্মু থেকে ৫০০০ টাকা নিয়ে আমার আরিয়ানার যাত্রা শুরু করেছিলাম।
টেকজুমঃ “আরিয়ানা”কে নিয়ে কেমন স্বপ্ন নিগারের?
নিগার সুলতানাঃ আমার সকল স্বপ্ন এখন “আরিয়ানা”কে নিয়ে। বাটিক পণ্যের জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। এ জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা ধরে রাখতে আমার “আরিয়ানা” ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ। আমি চাই আরিয়ানাকে দেশের সবার কাছে পরিচিত করে তুলতে এবং আমার আরিয়ানাকে সবাই এক নামে চিনবে।আমার স্বপ্নের অনেকটাই বাস্তবতা পেয়েছে উই এর সাথে থেকে।উই এন্ড ই-কমার্স ফোরাম(উই) দেশীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। আমার চিন্তা ভাবনা অনলাইন ব্যবসা নিয়ে হলেও প্রথম অবস্থায় আমি অনলাইন ব্যবসায়ী ছিলাম না। তখন আমি অফলাইন ব্যবসায়ী ছিলাম আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ (উই)এর কারনে আজ আমি অনলাইন ব্যবসায়ী হয়েছি।।। উই প্ল্যাটফর্মের জন্য আজ আমাকে ৬৪ জেলার অন্তত ৬৪ জন করে হলেও আমাকে চিনে এবং আমার উদ্যোগ আরিয়ানা কে চিনে।আমরা যারা দেশিপণ্য নিয়ে কাজ করি তাদের জন্য উই এর ফেসবুক গ্রুপ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জায়গা। আমাদের মত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কে তুলে ধরার জন্য ই ক্যাব এর প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদ স্যারের ভূমিকা অপরিসীম। দিনরাত পরিশ্রম করে গিয়েছেন উইয়ের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপু।রাজিব আহমেদ স্যার এবং নাসিমা আক্তার নিশা আপুর কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো।
টেকজুমঃ ধন্যবাদ নিগার আপনাকে।আপনার “আরিয়ানা” এগিয়ে যাক এই শুভকামনা রইলো।
নিগার সুলতানাঃ আমার পক্ষ থেকেও ধন্যবাদ টেকজুমকে।