চারদিকে ভেজালের ছড়াছড়ি। স্বাস্থ্যকর খাবার কে না চায়। এ কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘হোম মেইড’ খাবার। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেক নারী উদ্যোক্তাই এখন নিজের বাসায় রান্না করে এসব খাবার সরবরাহ করছেন। আর অনলাইনে এসব খাবারের অর্ডার ও ডেলিভারি হচ্ছে। কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্য পাওয়ার বিশ্বজুড়ে অসংখ্য উদাহরণ আছে। নিজের তৈরি খাবার নিয়ে নিজের পরিচয় তৈরি করার চেষ্টা করছেন তরুণ নারী উদ্যোক্তা কানিজ ফাতেমা পিয়া । কানিজ ফাতেমা পিয়া উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুম এবারের আয়োজন ।
টেকজুম:নিজের সম্পর্কে কিছু বলা
পিয়া: বাবা ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী, আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা ভোলাতে।উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা ভোলাতেই। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরপরই বিয়ে হয়েছে। আর বিয়ের পর স্বামীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ার কারনে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় এসে সিদ্ধেশ্বরী কলেজে অনার্স এ ভর্তি হই। পড়ালেখা চলাকালীন সময়ে আল্লাহর রহমতে আমার মেয়ের জন্ম। তাই কিছুদিন পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে। মেয়ে একটু বড় হওয়ার পরে আবার নতুন করে পড়ালেখা শুরু করি এবং অনার্স কমপ্লিট করি। সত্যি কথা বলতে আমি কখনো উদ্যোক্তা হবো এইরকম চিন্তাভাবনা বা স্বপ্ন ছিলনা। ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করবো। কিন্তু সংসার,ছোট মেয়ে এগুলো কে সামলাবে তাই আর চাকরি করা হয়নি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে কিছু একটা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। করোনার আগ পর্যন্ত কিছুদিন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেছি পাশাপাশি বাসায় বাচ্চাদের পড়াতাম। কিন্তু করোনা এসে সব উলটপালট করে দিলো। তখন ই কমার্স বিজনেস সম্পর্কে আমার তেমন একটা ধারনা ছিলনা। অবশ্য ফেসবুকে বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে অনেকে অনলাইন বিজনেস করতেছে সেটা দেখেছি। উইকেও আমি চিনতাম না। আমার স্বামীই প্রথম আমাকে উই সম্পর্কে বলে,এবং আমাকে জয়েন করতে বলে।
টেকজুম:উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু কিভাবে
পিয়া: করোনাকালীন লকডাউনের কারনে আগের সেই ব্যস্ততা নেই,বাচ্চার স্কুল নেই, বাসায় বসে মনে হচ্ছিলো কিছু করতে পারলে মন্দ হত না, নিজের যদি আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করতে পরি তাহলে ভাল হয়। ঠিক তখনি উইরে সাথে পরিচয়। উইতে জয়েন করে দেখি এখানে হাজারো উদ্যোক্তা। সবার গল্প সবার পোস্ট পড়ে আরো অনুপ্রাণিত হই,উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করি। রাজিব স্যারের কথামতো প্রতিদিন অনেক পোস্ট পড়া,লাইক কমেন্টের মাধ্যমে নিজেকে একটিভ রাখা। যেটা এখনও করে যাচ্ছি। কারন একটিভ এর কোন বিকল্প নেই। বেশি বেশি সময় দিয়ে প্রতিনিয়ত জানার চেষ্টা করতেছি।তাছাড়া ডিএসবিতেও সময় দিচ্ছি। ডিএসবি হচ্ছে জানার জায়গা শেখার জায়গা, নিজেকে আরো ভালভাবে তৈরি করা।
ক্যারিয়ারে ই-কমার্স বেছে নিয়েছি এই কারনে যে এখানে চাকরির তুলনায় ব্যক্তি স্বাধীনতা বেশি। নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে পারবো। ভাল লাগা মন্দ লাগা সবই নিজের।তাছাড়া উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হলে অনেকেই আমাকে চিনবে আমার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে পারবে।আমার পরিচিতি বাড়বে সেই সাথে ইনকামও বাড়বে।আমার ফেসবুক পেইজ — ‘খেতে মজা কিচেন’।
টেকজুম: কি কি পন্য বিক্রি করি
পিয়া: আমি উইতে জয়েন করে দেখি একেকজন একেক পণ্য বিক্রি করে। এবং যার যার জায়গায় তারা সফল। তখন আমি ভাবলাম আমি যেই জিনিসটা ভাল পারি বা বুঝি সেই জিনিসটাই করা উচিত। তখন মাথায় আসলো হোম মেড ফুড নিয়ে কাজ করার। নিজে সম্পৃক্ত থেকে কাউকে খুশি করতে পারলে সেটা আরো তৃপ্তিদায়ক হয়।আমার তৈরি খাবার খেয়ে কেউ যখন খুশি হয় বা রিভিউ দেয় তখন আনন্দে মনটা ভরে যায়। আমার সিগনেচার আইটেম রসগোল্লা রসমালাই। সেই সাথে আরো মিষ্টি আইটেম কাচাগোল্লা, কালোজাম রয়েছে।বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি পিজ্জা এগুলোও রয়েছে আমার বানানোর তালিকায়। আর শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে রেডি টু কুক হাসের মাংস নিয়ে কাজ করছি।যেটার অবদান সম্পুর্ন রাজিব স্যার। কারন স্যার শীতের আগেই শালের ওয়েভ শুরু করার কথা বলেছিল। এবং কিছুদিন পরে বলেছিল শীতের অন্য পন্যেরও ওয়েভ শুরু করা যায়।আমি ভাবলাম,আমি শীতের কি পন্য নিয়ে কাজ করবো। হঠাৎ করে মনে হলো,আমি যেহেতু হোম মেড ফুড নিয়ে কাজ করি সেহেতু রেডি টু কুক হাসের মাংস নিয়ে কাজ করা যায়। কারন শীত আসলেই হাস খাওয়ার ধুম পড়ে। আলহামদুলিল্লাহ এই পর্যন্ত অনেকগুলো হাস রেডি টু কুক আর রান্না করা ডেলিভারি দিয়েছি। যার কৃতিত্ব পুরোপুরি রাজিব স্যারের। আইডিয়াটা তার।
টেকজুম: ‘খেতে মজা কিচেন’ নিয়ে পরিকল্পনা
পিয়া: বর্তমান পন্যের সাথে আগামীতে কিচেনের সাথে জড়িত অন্যান্য পন্যও বিক্রি করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে।আমার খেতে মজা কিচেনের নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে,।সবার কাছে প্রশংসিত হবে এটাই আমার স্বপ্ন।কেউ কাউকে বেশিদিন মনে রাখেনা,কর্মের কারনেই একজন আরেকজনকে মনে রাখে,কর্মই মানুষকে বাচিয়ে রাখে।
টেকজুম: নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি
পিয়া: আমি প্রায় জিরো ইনভেস্টমেন্ট থেকে শুরু করেছিলাম । আমার লক্ষ্য ছিল যে আমাকে যেন কারোর থেকে সাহায্য নিয়ে কিছু করতে না হয়। আমি সেটাই করেছি এবং করছি। আমার এ পর্যন্ত সেল এক লাখ টাকা প্রায়। শুরুতে অর্ডার কম থাকলেও আমার কিছুদিনের মধ্যেই ক্রেতা বাড়তে থাকে এবং আলহামদুলিল্লাহ প্রতিদিন নতুন নতুন কাস্টমার তৈরি হচ্ছে সাথে রিপিট কাস্টমার তো আছেই। শুরুতে স্বামীর সাপোর্ট ছাড়া আর কারো সাপোর্ট পাইনি।বর্তমানে পরিবার এবং আত্নীয় স্বজন এর মধ্যে অনেকের সাপোর্ট পাচ্ছি। আমার বাবার বাড়ি শশুরবাড়ী কেউই আমাকে নিরুৎসাহিত করেননি দুই-একজন ছাড়া।
টেকজুম: উই কিভাবে আমার উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছে?
পিয়া: আমি উই তে জুলাই মাসের ৬ তারিখে জয়েন করি। এখানে এসে বুঝলাম উই নি:সন্দেহে এক একটা মানুষের স্বপ্ন পূরনের এবং স্বপ্ন গুলোকে বাস্তবে রুপ দেয়ার মতন একটা চমৎকার গ্রুপ। আমি উই থেকে এতকিছু শিখেছি যেটা আসলেই আমার উদ্যোক্তা জীবনে কাজে এসেছে। শুধু উদ্যোক্তা হলেই হয়না, অনেক পড়াশোনার ও প্রয়োজন পড়ে যেটা উই এবং রাজীব স্যারের ডিজিটাল স্কিল গ্রুপ আমাকে শিখিয়েছে আরো জোরালোভাবে। আমি প্রতিদিন এই গ্রুপদুটোতে সময় দেই। আমি খুব কৃতজ্ঞ রাজীব স্যার এবং নিশা আপুর কাছে।