প্রিয়াংকা সানা। সহকারী শিক্ষিকা বোরহানউদ্দিন উপজেলা, ভোলা। তিনি গত ৩ বছর যাবৎ অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কেনাকাটা করে ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। গত একবছরে অনলাইনে দেশি পণ্যের কেনাকাটা নিয়ে কথা বলেছেন টেকজুমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
টেকজুম : অনলাইনে দেশি পণ্য কেনাকাটা শুরু হয়েছে কিভাবে?
প্রিয়াংকা : আমি বরাবরই মফস্বলে থাকি। সেখানের দোকান থেকেই কেনাকাটা করি। দোকান থেকে কিছু কেনার পরই দেখা যায়, একি জিনিস আরও কয়েকজন ব্যবহার করছে। স্বাভাবিক ভাবেই মন খারাপ হতো। সেখান থেকেই অনলাইন কেনাকাটা শুরু। তবে দেশি পণ্য কেনাকাটা করছি গত ৩ বছর ধরে। উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) তে এসে অনলাইনে দেশি পণ্যের বিক্রি সম্পর্কে জেনেছি। সেখান থেকেই ভালোলাগা আর কেনাকাটা ও শুরু হয়েছে।
টেকজুম : গত এক বছরে দেশি পণ্যের কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি কি ছিলো?
প্রিয়াংকা : গত একবছরে অনেক কিছু কিনেছি, তবে কেনাকাটার শীর্ষে ছিলো জামদানী শাড়ি, দেশি কুর্তি, চা পাতা, হাতে বানানো গয়না, শতরঞ্জি, মসলা, ঘি, মধু, হারবাল তেল সহ আরও অনেক কিছু।
টেকজুম : কাকলী এটিয়্যার’সে কেনাকাটা অভিজ্ঞতা বলেন।
প্রিয়াংকা : কাকলী এটিয়্যার’সে কেনাকাটা এককথায় অসাধারণ! এতো বিশ্বাসযোগ্য অনলাইন প্রতিষ্ঠান আমি সত্যিই পাইনি। আমার মনে আছে, আমার জীবনের প্রথম জামদানী ক্রয় করেছি পরিচিত এক আপুর রিকমেন্ডেশনে। কি অসাধারণ ছিলো সেটা। সেই প্রথম আমার জামদানীর প্রেমে পড়া। তারপর ৪ মাসের মধ্যে জামদানী কিনেছি প্রায় ১২ টা। প্রতিটি কি সুন্দর। হাত দিলেই শান্তি লাগে। অনেক সময় টাকা নেই, অথচ পছন্দ হয়েছে। কাকলী এটিয়্যার’সের স্বতাধিকারী কাকলী রাসেল তালুকদার আপুকে বলেছি শুধু। আমাকে না জানিয়ে শাড়ি পাঠায় দিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা গুলো অসাধারণ।
টেকজুম : ফেসবুকে কেনাকাটা করতে পারিবারিক কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে?
প্রিয়াংকা : মাঝে মাঝে হতে হয়েছে। প্রথম যখন অনলাইন থেকে শাড়ি ক্রয় করেছি, সেটার দাম ছিলো ৫০০০ টাকা। এতো দাম দিয়ে কিনতে সবাই মানা করেছিলো। কিন্তু আমার পছন্দ ছিল তাই কিনেছিলাম। সেটা এতটাই খারাপ ছিলো যে আমাকে অনেক বকা শুনতে হয়েছিল। তারপর অনেকদিন অনলাইনে কেনাকাটা করিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে ভালো কিছু পেজ চিনলাম। উইতে জয়েন হলাম। সেখান থেকেই নিয়মিত কেনাকাটা করি। প্রোডাক্ট এর মান ভালো হয় বলে এখন আর কেউ আমাকে বারণ করে না। জামদানী শাড়ির জন্য তো আরো না। কারন অনলাইনে জামদানী শাড়ি আমি যার থেকে কিনি সে যে আমাকে ঠকাবেনা, সেটা আমার বাড়ির সবাই জানে।
টেকজুম : দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তাদের থেকে কেনাকাটা করে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা ঘটেছে?
প্রিয়াংকা : অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বলতে গেলে, বলতে হবে জামদানী শাড়ি না চেনা নিয়ে। মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে আমি। ছোটোবেলা থেকে জানি, জামদানী শাড়ির অনেক দাম। এক একটা শাড়ির দাম দিয়ে ২ মাসের হাত খরচ হয়ে যায়। এসব শুনেই জামদানী শাড়ি কেনার সাহস করি নি কখনও। বিয়ের পর বর বলল, আমি চাইলে জামদানী কিনতে পারি। তো এক পরিচিত আপুকেই বললাম, শাড়ি দেয়ার কথা। উনি বাজেট জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি বলেছিলাম পাঁচ হাজারের ভিতর। চার হাজার পাঁচ’শ টাকা করে উনি আমাকে জামদানী দিয়েছিলেন। উনি বলেছিলেন এই দামে দেশি জামদানী হবে না। ইন্ডিয়ান নিতে হবে। আমি ভাবলাম, যেহেতু হয় না, জামদানীও শখ। তাহলে নিয়েই ফেলি। আশানুরূপ পছন্দ হয় নি। তবুও তো জামদানী, তাই নিয়েছিলাম কয়েকটি। কিছুদিন পর দেখি, ওগুলো দুই হাজার পাঁচশত টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।উনাকে জিজ্ঞেস করলে, কোনো উত্তর দেন নি। তো এটাই খারাপ লাগা যে বিশ্বাস করেছিলাম বলে উনি এমনটা করলেন।
টেকজুম : যদি কাউকে উপহার দিয়ে থাকেন তাদের ফিডব্যাক কি ছিল?
প্রিয়াংকা : গিফট করেছি অনেক কেই। শাড়িই বেশি। সবার ভীষণ পছন্দ ছিলো। জামদানী কাউকে দেই নি। তবে আমার জামদানী দেখে ভালো লেগেছিল আমার বন্ধুদের। তারাও কাকলী আপুর থেকে অর্ডার করেছে। বাকি যাদের যা দিয়েছি, সবাই খুব পছন্দ করেছিলেন। যেমনঃ চা পাতা, ঘি, সেমাই, খেশ শাড়ি, গয়না, শতরঞ্জি, পোলাওর চাল, চানাচুর, চকলেট আরও অনেক কিছু।
টেকজুম : আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রিয়াংকা: টেকজুমকেও ধন্যবাদ।