‘স্যামসাং’ ব্র্যান্ড আমাদের খুব পরিচিত। এই ব্র্যান্ডের সাথে অনেকেই পরিচিত এর বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস সামগ্রী বা স্মার্টফোনের মাধ্যমে। স্মার্টফোন উৎপাদনের দিক দিয়ে বিশ্বের এক নাম্বার ব্র্যান্ড ভ্যালু হচ্ছে বর্তমানে ‘স্যামসাং’। কিন্তু, অনেকেই হয়তো জানেনা এই ‘স্যামসাং’ এর পিছনের ইতিহাস। সেই ইতিহাস পার করেই আজ এই অবস্থানে এসেছে ‘স্যামসাং’। আজ আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো এই ‘স্যামসাং’ এর অজানা কিছু ইতিহাস বা ফ্যাক্টস নিয়ে। তো চলুন নিচে গিয়ে জেনে আসা যাক বিস্তারিতঃ⤵
‘স্যামসাং’কে অনেকেই চিনে থাকি মোবাইল ব্র্যান্ড হিসেবে। এর বাইরে হয়তো ইলেকট্রনিকস। কিন্তু, অদ্ভুত হলেও সত্য, এই ব্র্যান্ডের ‘জাহাজ নির্মান কেন্দ্র’ রয়েছে। এই কেন্দ্রের আয়তন ৪০কোটি বর্গফুট।
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে উচু দালান ‘বুর্জ খালিফা’ও নির্মান করেছে ‘স্যামসাং’।
কিন্তু, এই ‘স্যামসাং’ এর শুরুটা হয়েছিলো সামান্য একজন নুডলস বিক্রেতার হাত ধরে। ব্যাবসায়িক চিন্তাভাবনার শুরুতেই তার ভাবনা ছিলো মুদি দোকান গড়ে তোলা।
যাই হোক এই ‘স্যামসাং’ ব্র্যান্ড হচ্ছে মূলত দক্ষিন কোরিয়ান একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ‘লি বিয়ং চল’। তিনি দক্ষিন কোরিয়ার ‘ইউরিয়ং’ এ এক ধনাঢ্য পরিবারে ১৯১০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রাজুয়েশন শেষ করতে তাকে পাঠানো হয়েছিলো টোকিও’র ‘ওয়াসেডা’ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৩৮ সালের ১লা মার্চ মাত্র ২৭ ডলার দিয়ে একটি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করলেন। যেটির নাম দিলেন ‘স্যামসাং’। ৪০ জন কর্মচারী এবং কয়েকটি ট্রাক নিয়ে একটি গ্যারেজে যাত্রা শুরু হয় এই প্রতিষ্ঠানটির। গ্যারেজটি ছিল একটি গুদাম ঘরের মতো। শহরের মধ্যে যেসব মুদি দোকান রয়েছে সেখানে তারা পণ্য পরিবহন করতো।
আস্তে আস্তে এই ব্যবসা সামনে এগুতে থাকলো। ‘লি’ তখন তার সব সঞ্চয় একেবারে বিনিয়োগ করে বিশাল পরিমাণ পণ্য কিনলেন এবং সেইসাথে সেই পণ্যগুলোর ভিতরে দিলেন আকর্ষণীয় ছাড়। ফলে মানুষজন তার পণ্যের প্রতি ঝুঁকতে থাকলো। কয়েকদিনের মধ্যেই দেখা গেল অসংখ্য ট্রাক নানারকম মুদি দ্রব্য নিয়ে চীনের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করছে। এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকলো ‘স্যামসাং’।খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তখন স্যামসাংয়ের পাবলিসিটি বেড়ে চলেছিল। কিছুদিনের মধ্যেই সেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এটির প্রতি অন্যদেশের জনপ্রিয়তা শুরু হয়ে যায়।
‘স্যামসাং’ শব্দটি হচ্ছে একটি কোরিয়ান শব্দ। যেখানে স্যাম অর্থ হচ্ছে তিন এবং সাং অর্থ হচ্ছে তারা। অর্থাৎ পুরোটা মিলে হয় থ্রি স্টার বা তিন তারা। এছাড়াও কোরিয়ান ভাষায় স্যাম শব্দটির আরেকটি অর্থ হচ্ছে শক্তিশালী। স্থানীয় পণ্যের পাশাপাশি তারা যে নুডুলস বিক্রি করতো সেটার প্যাকেটে দেয়া থাকতো এই থ্রি স্টারের চিহ্ন। যেটি ছিলো তাদের কোম্পানির লোগো। ১৯৪৫ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধ এবং কিছু রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে এই কোম্পানিটিকে নানান দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কোরিয়ান জাপানি এবং উপনিবেশিক শাসনের পতন ঘটে। এসময় বিচক্ষণ এবং দূরদর্শী সেই ‘লি’ কোম্পানিটির সদরদপ্তর সরিয়ে নিয়ে খুব দ্রুত ‘সিউলে’ নিয়ে আসেন। বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন পদের মানুষের সাথে সে সময় ‘লি’ এর ছিল ভালো সম্পর্ক। ফলে নানা বিপদ আপদের মধ্য দিয়েও তিনি তার এ প্রতিষ্ঠানটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। সে সময়ে সেই সিউলে আক্রমণ হলে ‘লি’ তার এই প্রতিষ্ঠানটি আবারও পরিবর্তন করে নিয়ে যান উত্তর কোরিয়াতে। সেই সাথে তিনি ‘বুসাণ’ শহরে একটি গোল্ফ নির্মাণ করেন।
১৯৬১ সালে ‘লি’ নতুন সরকারের সাথে একটি লেনদেনের চুক্তি করেন। তার পরিকল্পনা ছিল কোরিয়ার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে তার এই ব্যবসাকে নতুনভাবে আবারো গড়ে তুলবেন। ১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয় ‘স্যামসাং’ কর্পোরেশনের সঙ্গে। ১৯৭০ সালে ‘স্যামসাং’ তাদের প্রথম তৈরীকৃত সাদাকালো টেলিভিশন বাজারে ছাড়ে। মূলত এই টেলিভিশনের মাধ্যমেই তারা তাদের ইলেকট্রনিকস যাত্রা শুরু করে। এরপর আস্তে আস্তে ইলেকট্রনিকস দুনিয়ায় ‘স্যামসাং’ আস্তে আস্তে তাদের অবস্থান অনেক শক্ত করতে থাকে। ইলেকট্রনিক্স দুনিয়ায় ব্যাপক সফলতার আভাস পেয়ে, পরের বছরগুলোতে ‘স্যামসাং’ তাদের ইলেকট্রনিক্স পণ্য সামগ্রী নির্মাণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিশ্রম করে।
১৯৮০ সালে ‘স্যামসাং’ ইলেকট্রনিকস গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করতে শুরু করে। এর ফলে গড়ে ওঠে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, স্যামসাং কর্নিং, স্যামসাং ইলেক্ট্রো মেকানিক্স এবং স্যামসাং টেলিকমিউনিকেশনের মত নানান শাখা। ১৯৯০ সালে স্যামসাং আন্তর্জাতিক কর্পোরেশন হওয়া শুরু করে। ১৯৯২ সালে বিশ্বের বৃহত্তম মেমোরি চিপ প্রস্তুতকারক হয়ে ওঠে এই স্যামসাং।
২০০০ সালে সব ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি কে পিছনে ফেলে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে নাম করে নেয় ‘স্যামসাং’। ২০১০ সালে ব্র্যান্ড ভ্যালুর দিক দিয়ে সারা বিশ্বে ১৯তম স্থান দখল করে ‘স্যামসাং ।