সারা পৃথিবী জুড়ে অত্যন্ত পরিচিত একটি ব্র্যান্ডের নাম হচ্ছে ‘এলজি’। বর্তমানে সারা বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে এর সরাসরি ব্যাবসা রয়েছে। ‘এলজি’ শুধুমাত্র ইলেকট্রনিকস প্রোডাক্ট নিয়েই ব্যাবসা করেনা। এর পাশাপাশি ক্যামিকেল, টেলিকমিউনিকেশন, ইনফরমেশন টেকনোলজিস ইত্যাদির ব্যাবসাও করে ‘এলজি’। এর রয়েছে ছয়টি সাবসিটারি কোম্পানি।
দিনটা ১৯৪৭ সালের ৫ই জানুয়ারী । ‘কো ইন হুয়ি’ প্রথম ‘এলজি’ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুর দিকে এটি ক্যামিকেল তৈরীর কোম্পানি হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫২ সালে লেগ হয়েছিলো প্রথম কোনো দক্ষিন কোরিআন কোম্পানি। যারা প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের ব্যাবসা বাড়ানোর চেষ্টা করে।
১৯৫৮ সালে তারা তাদের দুইটি কোম্পানি এক করে নতুন কোম্পানি তৈরী করে এবং সেটির নাম দেয় ‘লাকি গোল্ডস্টার’। যেটা সংক্ষেপে ‘এলজি’। ‘এলজি’ তখন প্রথমবারের মতো বাজারে নিয়ে আসে কোনো ‘রেডিও’। সেই সাথে তারা আরও বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট বাজারজাত করে। যেগুলো তখন দক্ষিন কোরিয়ার বাইরের কোথাও পাওয়া যেতোনা।
১৯৯৫ সালে এই কোম্পানির চেয়ারম্যান অফিসিয়ালভাবে এর নাম ‘এলজি’ ঘোষনা করেন। যেটির নতুন ফুল মিনিং ছিলো ‘লাইফ’স গুড’। অতঃপর ২০০৯ সালে তারা ‘এলজি.কম’ ডোমেইন নামটি কিনে নেয়। বর্তমানে সারা বিশ্বে ‘এলজি’র ১২৮ টি অপারেশন্স রয়েছে। এর এম্প্লোয়িদের সংখ্যা ২,২২,০০০জন। ‘এলজি’র সব মিলিয়ে রয়েছে মোট ছয়টি সাবসিটারি কোম্পানি। যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে ‘এলজি ইলেকট্রনিকস’। যেগুলোতে ‘এলজি’ তৈরী করে থাকে হোম এন্টারটেইনমেন্ট, মোবাইল কমিউনিকেশন, হোম অ্যাপ্লায়েন্স ইত্যাদি।
‘এলজি’ উৎপাদিত মোটরব্যাসুস কোম্পানিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হচ্ছে ব্যাটারীপ্যাক, পাওয়ার ট্রেইন, থার্মাল সিস্টেম, নেভিগেশন, এইচইউডি, ল্যাম্প, ওয়ারলেস চার্জার ইত্যাদি। ‘এলজি’র ডিসপ্লে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘থিন ফিল ট্রানজিস্টার লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে’ ম্যানুফেকচারার। এছাড়াও তারা আরও তৈরী করে ‘অএলইডি’ এবং ‘ফ্লেক্সিবল’ ধরনের ডিসপ্লে। গত বছর শুধু ডিসপ্লে বিক্রি করেই ‘এলজি’ আয় করেছে ২০ মিলিওন মার্কিন ডলার।
‘এলজি’র আরও রয়েছে ‘এলজি ইউ+’। যেটি মূলত বিভিন্ন ধরনের মোবাইল সার্ভিস প্রদান করে থাকে দক্ষিন কোরিয়ায়। ‘এলজি’র আন্ডারে রয়েছে ‘এলজি চেম’। যেটি মূলত দক্ষিন কোরিয়ার সবচেয়ে বড় ক্যামিকেল কোম্পানি। ‘এলজি’ তাদের ব্যাবসা আরও বেশি প্রসারিত করেছে ‘এলজি হাউজহোল্ড এবং হেলথকেয়ার’ এর মাধ্যমে। সাবসিটারি না হলেও ‘এলজি’র অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে ৭টি কোম্পানির সাথে।
এছাড়াও ‘এলজি’র রয়েছে বিশাল স্পোর্টস পার্টনারশিপ। বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক খেলাধুলায় ‘এলজি’ স্পন্সর করে।
গতবছর সব মিলিয়ে ‘এলজি’ আয় করেছে ১৪৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
‘এলজি’ আমাদের দেশেও অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। বিশেষ করে এর রেফ্রিজারেটর এবং টেলিভিশন আমাদের অনেকের বাসাতেই দেখা যায়।
‘এলজি’ বর্তমান বিশ্বের লিডিং অর্থনৈতিক কোম্পানিগুলোর সাথে কোনভাবেই দৌরত্বে পিছিয়ে নেই। কেমিক্যাল এবং প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি দিয়ে ব্যবসা শুরু করা কোম্পানিটি বর্তমান পৃথিবীতে লিডিং ইলেকট্রনিকস ইন্ডাস্ট্রিয়াল একটি কোম্পানি। এছাড়াও এলজি মোবাইল ফোনও তৈরি করে এবং সেগুলো সুপরিচিত। আশা করা যায় ভবিষ্যৎে ‘এলজি’ আরও বড়মানের একটি কোম্পানিতে তৈরী হবে।