বর্ষজীবী ফসল পাট উৎপাদনের শীর্ষে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ১,৫২৩,৩২৫ টনস পাট উৎপাদন হয়। দেশের বিভিন্ন জেলার ন্যায় ময়মনসিংহেও ব্যাপক উৎপাদন হয় পাট। বর্তমান বাজারে পাটের দাম চড়া হওয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে পাটের উৎপাদন।
শিল্প বিপ্লবের সময় ফ্লাক্স এবং হেম্প এর জায়গা দখল করে পাট। বর্তমানে পলিথিন ও প্লাস্টিকের জায়গাও পাটের দখলে। সোনালী আঁশ পাটের ব্যবহার বাড়াতে সরকার আলাদা নীতিমালা, আইন ও মন্ত্রণালয় করেছে। বিজ্ঞানিরা জোড়ালো গবেষণা চালাচ্ছে পাটের নানামুখী ব্যবহার বাড়াতে।
মার হাড়ি পাতিল টানানোর সিকা, বাবার ইউরিয়া সারের বস্তা আর দাদার বাজার ব্যাগে পরিচয় হয় পাটের সাথে। তবে কচি পাটপাতা খেয়েছি শাক হিসেবে। ”ছোট বেলায় রচনা পড়তাম পাট আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, পাট ও পাটজাতদ্রব্য রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ।” বর্তমানে পাটের নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ, ফুলপুর, নান্দাইল, গফরগাঁও, সদর উপজেলা, ফুলবাড়ীয়া, গৌরীপুর উপজেলায় পাটের ব্যাপক চাষ হয়। এছাড়াও শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদন হয় পাট। এসব অঞ্চলের নারীরা ঘরে বসে বিভিন্ন শো-পিছ তৈরি করে। এসব শো-পিছের সম্ভাবনাময় বাজার ই-কমর্সে। পাটের উল্লেকযোগ্য ব্যবহার বস্তা, চট, কার্পেট তৈরিতে। তবে শাড়ি, পাঞ্জবি, লুঙ্গি, ফতুয়া, শোপিস, ওয়ালমেট, জুতা, শিকা, ডায়রি সহ প্রায় ২’শ রকমের পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি হয় দেশের বাজারে। কিন্তু এসব পণ্য বাজারে বা সুপার শপ গুলোতে দেখা মিলে না।
দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তারা নিজেদের সাধ্যমতো পাটের শোপিছ, শপিং ব্যাগ, লোগো ডিজাইন, অফিস ডকুমেন্ট ফাইল, অর্নামেন্ট সহ নানা পণ্য উৎপাদন করছে। এবং ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়ে তা বিক্রি করছে। উদ্যোক্তারা মনে করে পাট পণ্যের সহজলভ্যতায় সম্ভাবনা বেশি ই-কমার্সে। অফলাইনে পাট পণ্য সহজলভ্য করতে ও বিক্রি বাড়াতে প্রচুর পরিমাণ মার্কেটিং বাজেট প্রয়োজন। একই কাজ অনলাইনের করলে অল্প সময় ও ইনভেস্টেমেন্টে সর্বত্রে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) থাকায় ই-কমার্স উদ্যোক্তারা সম্ভাবনা দেখছে। তারা মনে করে এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন রকম উদ্ভাবন গুলো কাজে লাগাতে পারবে। গত ১৯ শে মার্চ ময়মনসিংহ ”ই-কমার্স সমস্যা ও সম্ভাবনা” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে শুকনা পাটশাকের উপকারিতার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এর বিভাগীয় প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন শুকনা পাটশাক ক্যান্সর প্রতিরোধক। তার মতে, দেশের বাজারে শুকনা পাটপাতার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যা ই-কমার্স উদ্যোক্তারা দখল করতে পারে।
একই অনুষ্ঠানে ৭ ঋতুর স্বত্বাধিকারী শামিমা নাসরিন ঋতু পাটের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, মায়মনসিংহে বিপুল পরিমাণ পাট উৎপাদন হয়। পাটের ফাইবার থেকে পোশাক, পাটকাঠি থেকে পারটেক্স বোর্ড, চারকোল, ঘর সাজানোর সৌখিন সামগ্রী, পাটের চা ইত্যাদি উৎপাদন হয়। ই-কমার্সের মাধ্যমে এসবের প্রচর প্রসার বাড়ানো সম্ভব।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশের (নাসিব) কেন্দ্রীয় সভাপতি মির্জা নূরুল গণী শোভন (সিআইপি) পাটের সম্ভাবনা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, বাংলার গৌরব সোনালি আঁশ আমাদের পাট। সময়ের বির্বতনে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছিল এই শিল্প। জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশের উদ্যোগে দেশের প্রতিটি জেলায় নির্দিষ্ট জনশক্তিকে প্রশিক্ষিণ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে আবার নতুনরূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমাদের পাট পণ্য সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো উদ্যোক্তা আমাদের আছে। এসব উদ্যোক্তাদের পণ্যের মান ও বাজারজাতকরণসহ সামগ্রিক উন্নয়নে সরকারকে নজর দিতে হবে। সূত্র : সারাবাংলা