গ্রাহকের ব্যক্তিগত ফোনালাপ এবং তথ্য প্রকাশ সংবিধান ও আইন পরিপন্থী বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠন। বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানায় সংগঠনটি।
সংগঠনটি দাবি করেছে, আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায় গ্রাহকের ব্যক্তিগত ফোনালাপ ও তথ্য টেলিভিশন, গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হরহামেশা প্রকাশিত হচ্ছে। গ্রাহকের ব্যক্তিগত ফোনালাপ এবং তথ্য প্রকাশ করায় গ্রাহকরা সংবিধান ও আইনের নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা আমাদের সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানের ৪৩ (খ) ধারায় বলা আছে, চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ে গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-এর (২৬) ধারায় অনুমতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অনুযায়ী (অনুচ্ছেদ-১২) নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে আন্তর্জাতিক সনদ (অনুচ্ছেদ-১৭) জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী (অনুচ্ছেদ-১৪) এবং শিশু অধিকার সনদ (অনুচ্ছেদ-১৬) এ গোপনীয়তাকে অধিকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ এর ৭১ ধারায় টেলিফোনে আড়িপাতার বিষয়ে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি অপর দু’জন ব্যক্তির টেলিফোন আলাপে ইচ্ছাকৃতভাবে আড়ি পাতে, তা হলে প্রথমত ব্যক্তির এই কাজ হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি অনধিক ৫৩ দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। তবে শর্ত থাকে যে, ধারা ৯৭-ক এর অধীন সরকার হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা বা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার কোনো কর্মকর্তার ক্ষেত্রে এই ধারার বিধান প্রযোজ্য হবে না।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আইনে সুস্পষ্ট বলা রয়েছে, গ্রাহকের ব্যক্তিগত ফোনালাপ ও তথ্যের নিরাপত্তার দায়িত্ব সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের এই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রায় সময় দেখা যায়, ব্যক্তিস্বার্থ এমনকি রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই বিভিন্ন ব্যক্তির মান-মর্যাদা ক্ষুন্ন করতে ব্যক্তিগত টেলিফোন আলাপ প্রকাশ করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত বিপদজনক। এভাবে ব্যক্তির গোপনীয়তা প্রকাশ হলে মানুষ মোবাইল সেবা গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারেন। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে, সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ফোনালাপ প্রকাশকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।