চীনের উৎক্ষেপণ করা রকেটের একটি বড় অংশ এই সপ্তাহের শেষ দিকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে যাচ্ছে। তবে এর ভীতিকে খাটো করে দেখছে বেইজিং। তাদের দাবি, এতে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি খুবই কম। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
চীনের নতুন মহাকাশ স্টেশনের প্রথম মডিউল হিসেবে গত ২৯ এপ্রিল পৃথিবীর কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করা হয় মার্চ-৫বি রকেট। এর ১৮ টন ওজনের মূল অংশটি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পড়ছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কবে ও কোথায় এটি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ফিরে আসবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন বলছে, শনিবার গ্রিনিচ মান সময় ২৩টায় এটি পৃথিবীর কক্ষপথে ফিরতে পারে। তবে এই সময়ের নয় ঘণ্টা এদিক-ওদিক হতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।
চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, রকেটের বেশিরভাগ উপাদানই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশের সময়ই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবেইন শুক্রবার বলেছেন, ‘ক্ষতির কারণ হওয়ার আশঙ্কা… মাঠ পর্যায়ে খুবই কম।’
তারপরও বহু মানুষের আশঙ্কা রয়েছে রকেটটি কিংবা এর অংশ বিশেষ ঠিক কোথায় পড়বে। আবার যদি কোনও ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে চলেও আসে তাহলে তার সমুদ্রে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা পৃথিবীর ৭০ ভাগ জায়গাই সমুদ্র।
পেন্টাগনের মুখপাত্র মাইক হাওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা আশা করছি এটি এমন এক জায়গায় পড়বে যেখানে কারোরই ক্ষতি হবে না।’ হাওয়ার্ড জানান রকেটের অংশবিশেষটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশের কয়েক ঘণ্টা আগে ছাড়া কোন স্থান দিয়ে এটি প্রবেশ করবে তা শনাক্ত করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন, এটি ভূপাতিত করার কোনও পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। তার মতে চীনের অবহেলার কারণেই এটি কক্ষপথ থেকে পড়ে গেছে।
প্যারিস-পিএসএল অবজারভেটরির জ্যোতিষবিজ্ঞানী ফ্লোরেন্ট ডেলেফি বলেন, জিনিসটি আকারের কারণেই বড় একটি অংশই পৃথিবীতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ধ্বংসাবশেষটি জনবসতিতে পড়ার আশঙ্কা খুবই কম, সম্ভবত দশ লাখে একবার।’
২০২০ সালে আরেকটি মার্চ রকেটের ধ্বংসাবশেষ আইভরি কোস্টের এক গ্রামের ওপর পড়ে। এতে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কেউ আহত কিংবা নিহত হয়নি।
হার্ভার্ড-স্মিথসন সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বিজ্ঞানী জোনাথন ম্যাকডোয়েল বলেন, খুব বেশি ভীত হওয়ার কিছু না থাকলেও ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে রকেটের ডিজাইন নিয়ে আবারও ভাবতে হবে। তিনি বলেন, ‘ঘণ্টায় শত শত কিলোমিটার গতিতে টন টন ওজনের ধাতব বস্তু পৃথিবীর ওপর পড়তে থাকা ভালো কোনও চর্চা নয় আর চীনের উচিত এই ঘটনা এড়াতে লং-মার্চ ৫বি মিশন নতুন করে ডিজাইন করা।’