পাবনা জেলার ভাঙুরা উপজেলার জরিনা রহিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মোসাম্মৎ মুক্তি খাতুন সংসদ ভবন দেখে অভিভূত। মুক্তি বলেছেন, ‘আমি বইপত্রে পড়েছিলাম এটা লুই আই কান বানিয়েছেন। কিন্তু এটা যে এত সুন্দর সামনে থেকে না দেখলে বুঝতাম না।’
তারই মতো শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার শহীদ বুদ্ধিজীবী হুমায়ূন কবীর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম নভোথিয়েটার দেখে আনন্দিত। নভোথিয়েটারে এসে গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছে সে। প্লুটো গ্রহ হিসেবে থাকা না থাকার বিতর্ক সম্পর্কে জানতে পেরে সানজিদা খুশি।
মুক্তি ও সানজিদার মতো ৭৩ জন ছাত্রী গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনভর ঢাকার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও আইসিটি বিষয়ক বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। শরীয়তপুর ও পাবনা থেকে আসা এ শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করে গড়ে তোলার উদ্দেশে ‘অবাক কুতুহলে’ নামে একটি কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এর উদ্যোক্তা বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান কাজি আইটি সেন্টারের পৃষ্ঠপোষকতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উভয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২২ ফেব্রুয়ারি ট্রেন ও লঞ্চযোগে ঢাকায় এসে পৌঁছায়। স্থানীয় একটি ডরমিটরিতে তাদের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নোভা আহমেদ, রবির মহাব্যবস্থাপক কানিজ ফাতেমা এবং উইম্যান ইন ডিজিটালের উদ্যোক্তা আছিয়া নীলা।
এসময় অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ছাত্রীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় ছড়িয়ে পড়তে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা ও অধ্যাবসায়ের সঙ্গে যথাযথ অনুশীলন ও শিক্ষা যে কোন মানুষকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যায়।’ পরে তিনি সব ছাত্রীকে নিজের অটোগ্রাফসহ বই উপহার দেন।
২৩ তারিখ দুটি বাসযোগে দুটি বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা সংসদ ভবন, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ডিবিসি টেলিভিশন কেন্দ্র এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস ও কাজি আইটি সেন্টার পরিদর্শন করে। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরিয়ে দেখায়।
আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক কাজি আইটি সেন্টারের কর্মীরা ছাত্রীদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হতে আহ্বান জানান। সে সময় তাদের আগামী দিনের লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আইসিটি ও ভাষা জ্ঞান অর্জন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
কাজি আইটি সেন্টারের চেয়ারম্যান মাইক কাজী বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের মেয়েদের মেধা ও প্রচেষ্টা বিশ্বমানের। তাদের জন্যও আমাদের সব সুযোগ উন্মুক্ত করা প্রয়োজন।’ সে উদ্দেশে এ কাজের সঙ্গে কাজি আইটি যুক্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
মেয়েদের সঙ্গে আসা শরীয়তপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. হুমায়ূন কবির উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘মেয়েদের জন্য এমন সুযোগ আগে ছিল না। এখন এ সুযোগ পাওয়ায় মেয়েরা অনেক কিছু শিখতে পারছে। এটি তাদের আরও এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’
বিডিওএসএনের #মিসিংডটার কার্যক্রমের আওতায় এ পরিদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার তাপস হালদার। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রায় ২০০ ছাত্রীকে এ পরিদর্শনে আসার সুযোগ দেওয়া হবে।