দেশের বাজারে এখন ৫৫ লাখের বেশি অবৈধ মোবাইল ফোন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এসব ফোন বিভিন্নভাবে দেশে এসেছে— কোনোটা চোরাই পথে, লাগেজের মাধ্যমে, বা অন্যকোনোভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে। কিন্তু ফোন সেটগুলো বাজারে বিক্রি হয়নি। দেশে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার) সিস্টেম চালু হয়েছে। ফলে এসব অবৈধ ফোন আর চালু করতে পারবেন না ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘৫৫ লাখ অবৈধ মোবাইল ফোন বাজারে আছে বলে আমরা জেনেছি। এগুলোর কোনও ভবিষ্যৎ নেই।’ তিনি আরও জানান, দেশে চোরাই পথে মোবাইল ফোন আসা বন্ধ হয়েছে। আমরা এটাই চেয়েছিলাম। এনইআইআর সিস্টেম বাস্তবায়ন করার ফলে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে। সবকিছু একটা নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে।
নতুন নিয়মের ফলে গত ১ অক্টোবর থেকে অবৈধ মোবাইল ফোন চালু করা হলে তা ‘অবৈধ চিহ্নিত’ হয়ে বন্ধ হওয়ার প্রহর গুনছে। অবৈধ ফোন হলেও তা নেটওয়ার্কে চালু করার সময় ফোনটি ‘অবৈধ’ বলে ফোনসেটে মেসেজ পাঠাচ্ছে বিটিআরসি। অর্থাৎ ফোনটি যেকোনও সময় বন্ধ হয়ে যাবে। গত ১ থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ দিনে প্রায় ২ লাখ মোবাইল ফোন অবৈধ বলে চিহ্নিত হয়েছে এবং ফোনগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আইএমইআই-এর সংখ্যা ৪৪ দশমিক ৫৩ কোটি, যা ইতোমধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআর সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২২ কোটি ২৬ লাখ মোবাইল হ্যান্ডসেট মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রয়েছে।
দেশে এনইআইআর সিস্টেম চালুর পর অবৈধ মোবাইল ফোনের বিক্রি বন্ধ হওয়ায় দেশীয় উৎপাদক, আমদানিকারকরা খুশি। বেড়েছে মোবাইলের বিক্রি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই মোবাইলফোন আমদানিকারক ও একজন উৎপাদক জানান, মোবাইল ফোনের বিক্রি বেশ বেড়েছে। তবে পরিষ্কার চিত্র পেতে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চালু করা ফোনগুলোর বিক্রি শেষ হওয়ার পর প্রকৃত বাজার বোঝা যাবে। তারা জানান, সারাবিশ্বে এখন চিপ সংকট চলছে। এ কারণে মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ীদের কাছে ফোনের স্টক কম। সংকট কাটতে শুরু করলেই বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে অবৈধ মোবাইল ফোন আছে। সেগুলো নিবন্ধিত হওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’ তিনি জানান, দেশে এখন অবৈধ উপায়ে মোবাইল ফোন প্রবেশ করছে না। তবে গত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনেকে মোবাইল ফোন নিবন্ধন করে রেখেছেন বলে জানতে পেরেছি। সেসব মোবাইল ফোন এখন কিছু কিছু বিক্রি হচ্ছে। এগুলো দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, এরইমধ্যে অনেক মোবাইল ফোনসেট চালু করতে গিয়ে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সেসবের মধ্যে কিছু বন্ধ হয়েছে, কিছু বন্ধ হয়নি বলে জানা গেছে।
বিটিআরসির সূত্রে জানা গেছে, এনইআইআর সিস্টেম তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
বিএমপিআইএ জানায়, দেশে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মোবাইল ফোন বিক্রি হয়। এরমধ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ অবৈধ ফোন ধরলেও সেই সংখ্যা হয় ৩ লাখ। বিএমপিআইএ বলছে, দেশে প্রতি মাসে অবৈধ মোবাইল (চোরাই পথে, অবৈধভাবে দেশে আসা) বিক্রির পরিমাণ ৩ থেকে ৫ লাখ। যদিও মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে বিক্রি হওয়া মোট ফোনের মধ্যে ৩০ শতাংশই অবৈধ ফোন।