অধিক শক্তিশালী প্রসেসরসহ বাজারে নতুন ম্যাকবুক এনেছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। এম১ প্রো ও এম১ ম্যাক্স নামে দুটো শক্তিশালী প্রসেসরসহ ১৮ অক্টোবর বাজারে এসেছে ম্যাকবুক প্রো। খবর গিজমোচায়না।
সোমবার দুটো ম্যাকবুক প্রো ল্যাপটপের পাশাপাশি এয়ারপড ও বর্ণিল হোমপড বাজারে এনেছে অ্যাপল। গত বছর রেকর্ড ম্যাকবুক বিক্রির বিষয়টি মাথায় নিয়ে এবারের ভার্চুয়াল পণ্য উন্মোচনে জোর দেয়া হয়েছে এ পণ্যটিতেই। দুটি শক্তিশালী চিপসেটকে এবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ বলে দাবি তাদের। এম১ প্রো ব্যবহূত ম্যাকবুক গত বছরের এম১ মডেলের চেয়ে ৭০ গুণ শক্তিশালী, যাতে ৩২ জিবি র্যাম ব্যবহার করা যাবে। অন্যদিকে একই সিপিইউ সক্ষমতার এম১ ম্যাক্সে ৬৪ জিবি র্যাম সাপোর্ট করবে। ফলে গ্রাফিকস ও ভারী কাজ আয়াসেই করা যাবে নতুন ম্যাকবুকে।
আগের নকশায় ‘ত্রুটিপূর্ণ কিবোর্ড ডিজাইন’ থেকে শুরু করে ‘ইউএসবি সি’ বাদে পোর্ট না থাকা ইত্যাদি অনেক সমস্যাই ভুগিয়েছে ব্যবহারকারীদের। কিন্তু নতুন নকশায় হয়তো মুক্তি মিলবে সেগুলোর হাত থেকে।
এনগ্যাজেটের প্রতিবেদন বলছে, আগের মডেলের তুলনায় উন্নত রেজুলিউশনে ১৪.২ ইঞ্চি ও ১৬.২ ইঞ্চি আকারে পাওয়া যাবে নতুন ম্যাকবুক প্রো। এর মধ্যে ১৪ ইঞ্চি মডেলটির রেজুলিউশন হবে ৩,০২৪ X ১,৯৬৪। অন্যদিকে, ১৬ ইঞ্চি মডেলটির রেজুলিউশন হবে ৩,৪৫৬ X ২,২৩৪।
এ ছাড়াও দেখা মিলবে ১২০ হার্টজ পর্যন্ত রিফ্রেশ রেট অপশনের প্রো মোশন হাই রিফ্রেশ রেট। আইফোনের মতোই ল্যাপটপে রয়েছে ‘ক্যামেরা নচ’। এনগ্যাজেট বলছে, নচটি মেনু বার আকৃতির। তবে, আগের তুলনায় ডিসপ্লের জায়গা বেড়েছে। দুটো মডেলেই মিনি এলইডি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে অ্যাপল। বর্তমানের ১২.৯ ইঞ্চি আইপ্যাড প্রো’র সঙ্গে মিল রয়েছে প্রযুক্তিটির।
এবারের ম্যাকবুক প্রো দুটিতে অ্যাপলের নিজস্ব সিলিকন ‘এম১ প্রো’ ব্যবহার করা হয়েছে। গুজবে যা শোনা গিয়েছিল বাস্তবেও তা-ই দেখা গেছে। এটির আকার পাঁচ ন্যানোমিটার, সবমিলিয়ে দশ কোর যার মধ্যে আটটি ‘হাই-পারফরম্যান্স’ এবং দুটি ‘এফিশিয়েন্সি’ কোর। এম১ এর তুলনায় এটি ৭০ শতাংশ দ্রুতগতির এবং এতে রয়েছে ১৬ গ্রাফিক্স কোর।
এই সিলিকন বাদেও ৩২ গ্রাফিক্স কোরের নতুন ‘এম১ম্যাক্স’ নিয়েও ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টের ওই সিলিকনে এম১প্রো’র তুলনায় দ্বিগুণ মেমোরি ব্যান্ডউইথ থাকবে। বলে রাখা ভালো, এম১ প্রো’র মেমোরি ব্যান্ডউইথ চারশ’ গিগাবাইট প্রতি সেকেন্ড।
এম১ ম্যাক্স ৬৪ গিগাবাইট মেমোরি সমর্থন করবে। অথচ আগের এম১ চিপ সমর্থন করতো ১৬ গিগাবাইট মেমোরি। সে হিসেবে মেমোরি সমর্থন বাড়ছে অনেকটাই।
নতুন ম্যাকবুক প্রো-তে দেখা যাবে ‘ইউএসবি সি/ থান্ডারবোল্ট পোর্টস’। ফিরে এসেছে এইচডিএমআই সকেট ও এসডি কার্ড স্লট।
এনগ্যাজেটের প্রতিবেদন বলছে, কোনো ‘ইউএসবি-এ পোর্ট’ না থাকলেও বিদ্যমান এসডি কার্ড স্লট ও এইচডিএমআই পোর্ট মানুষের ‘ডঙ্গলের’ উপর নির্ভরতা কমাবে। ম্যাকবুক প্রো’তে ‘ম্যাগসেফ কানেক্টর’-ও ফিরিয়ে এনেছে অ্যাপল। ডিভাইসে দেখা মিলবে নতুন সংস্করণের ম্যাগসেফ কানেক্টরের। ২০১৬ সালের আগে ল্যাপটপে ম্যাগসেফ কানেক্টর ব্যবহার করতো মার্কিন এ প্রযুক্তি জায়ান্ট।
ম্যাগসেফ কানেক্টরের নতুন সংস্করণ পুরোনোটি থেকে ভিন্ন। ফলে পুরোনো চার্জার ব্যবহার করার চেষ্টা করে কাজ হবে না। তবে, চাইলে ইউএসবি-সি ব্যবহার করে চার্জ দেওয়া যাবে।
ক্যামেরা সিস্টেমকেও উন্নত হয়েছে আগের তুলনায়। দেখা মিলবে কমপিউটেশনাল ভিডিও এবং ১০৮০পি রেজুলিউশনের। থাকবে এফ/২.০ চার এলিমেন্ট লেন্সও। এ ছাড়াও ১৬ ইঞ্চি মডেলটিতে রয়েছে ছয়-স্পিকার সিস্টেমও।
নতুন কিবোর্ড নকশায় দেখা যাবে ‘সিজর সুইচ মেকানিজম’। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘টাচ বার’। এর বদলে সেখানে দেওয়া হয়েছে ‘স্ট্যান্ডার্ড ফাংশন কি রো’।
ল্যাপটপগুলোর ব্যাটারি লাইফ অনেকটাই ভালো হওয়া উচিত বলে মনে করছে এনগ্যাজেট। অ্যাপল বলেছে, ১৪-ইঞ্চি মডেলে টানা ১৭ ঘণ্টা ভিডিও চালানো যাবে। অন্যদিকে, ১৬ ইঞ্চি মডেলে ভিডিও চলতে পারবে টানা ২১ ঘণ্টা। এ ছাড়াও মডেল দুটিতে রয়েছে ফার্স্ট চার্জিং সুবিধা। ফলে প্রায় ৩০ মিনিটেই ৫০ শতাংশ চার্জ করা যাবে।
দুটো ম্যাকবুক প্রো-ই দামী বলে উল্লেখ করেছে এনগ্যাজেট। অ্যাপল ১৪-ইঞ্চি মডেলটির দাম ধরেছে এক হাজার নয়শ’ ৯৯ ডলার। অন্যদিকে, ১৬-ইঞ্চি সংস্করণের দাম ধরা হয়েছে দুই হাজার চারশ’ ৯৯ ডলার।
একদম প্রাথমিক ধাপে ১৪ ইঞ্চি মডেলের দাম পড়বে এক হাজার নয়শ’ ৯৯ ডলার। সঙ্গে মিলবে আট সিপিইউ কোরের এম১ প্রো, ১৪ গ্রাফিক্স কোর, ১৬ গিগাবাইট র্যাম এবং ৫১২ গিগাবাইট স্টোরেজ। অন্যদিকে, পুরো দশ কোরের এম১ প্রো সিপিইউ এবং ১৬ কোরের গ্রাফিক্স পেতে ক্রেতাকে খরচ করতে হবে দুই হাজার চারশ’ ৯৯ ডলার। এই দামে বাড়তি হিসেবে মিলবে এক টেরাবাইট স্টোরেজ সুবিধা।
অন্যদিকে, ১৬ ইঞ্চি ম্যাকবুক প্রো -এর প্রাথমিক পর্যায়ের দাম ধরা হয়েছে দুই হাজার চারশ’ ৯৯ ডলার। এই দামে ১৪ ইঞ্চি মডেলের মতোই প্রসেসর, গ্রাফিক্স কোর ও স্টোরেজ সুবিধা মিলবে। বাড়তি দুইশ’ ডলার খরচ করলেই মিলবে এক টেরাবাইট স্টোরেজ। আর এম১ ম্যাক্স চালিত ৩২ গিগাবাইট র্যাম ও এক টেরাবাইট স্টোরেজের ১৬ ইঞ্চি মডেল পেতে খরচ করতে হবে তিন হাজার চারশ’ ৯৯ ডলার।
বর্তমানে আগ্রহীরা প্রি-অর্ডার করতে পারছেন। অক্টোবরের ২৬ থেকে হাতে পাওয়া যাবে ল্যাপটপ দুটি।