লক্ষ্মীপুর জেলায় অনেক বিখ্যাত স্থাপনা রয়েছে যেগুলো ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্য শৈলীর দিক থেকে অনেক উন্নত। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য রামগতি একটি উপযুক্ত স্থান। রামগতি বাজারের পশ্চিম দিক দিয়ে মেঘনা নদী বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এখানকার নৈসর্গিক দৃশ্য খুবই মনোরম। এটি একটি প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। পর্যটকরা এখানে বসে ইলিশ ধরার রোমাঞ্চকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারে। রামগতি ভ্রমণের সময় পর্যটকরা সেখানকার মিষ্টি এবং মহিষের দুধে তৈরী ঐতিহ্যবাহী দই সংগ্রহ ও উপভোগ করতে পারে। এখানে কুয়াকাটার মত সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য অবলোকন করা যায়। রঙ-বেরঙের পালতোলা নৌকার সারি পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। এ দৃশ্য তুলনাহীন। বন বিভাগের বিশাল বনায়ন, কেয়াবনের সবুজ বেস্টনীও নজরে আসবে। যাতে সড়ক ও নৌপথে পর্যটকদের যাতায়াতে সুবিধা হয়। পর্যটন স্পটগুলো সরকারের সংরক্ষণ নীতিমালার আওতায় রাখা এবং এর উন্নয়ন প্রয়োজন। পর্যটকদের সুবিধার্থে আধুনিক হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট স্থাপন করা প্রয়োজন।
লক্ষ্মীপুর দায়রা বাড়ি জামে মসজিদ
লক্ষ্মীপুরের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ আজিম শাহ দায়রা বাড়ি মসজিদ। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৮৭৫ সালে মরহুম আজিম শাহ(র.) তদীয় পীর, দায়েম শাহ(র.) এর নির্দেশে লক্ষ্মীপুর আসেন। লক্ষ্মীপুর বাসষ্ট্যান্ড থেকে ১০০ গজ দক্ষিণে রাস্তার পশ্চিম পাশে যেখানে বর্তমানে দায়রা বাড়ি অবস্থিত সে সময়ে এই স্থান ছিলো ঝড় জঙ্গলে পরিপূর্ণ।
আজিম শাহ যখন লক্ষ্মীপুর পৌঁছান তখন বেলা অপরাহ্ন, আজিম শাহ জঙ্গলে প্রবেশ করেন, কিন্তু তাঁর বের হতো বিলম্ব দেখে লোকজনের আশঙ্কা বেড়ে যায় কথিত ছিলো এই জঙ্গলে তখন বাঘ ছিলো! তারা ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পান একটি ইবাদতখানা৷ আজিম শাহ ভিতরে সেজদায় রত৷ দরজায় দুটি জীবন্ত বাঘ। তখনকার সে ইবাদতখানা আজকের দায়রা বাড়ি মসজিদ!
সে সময় ঝাড় জঙ্গল পরিস্কার পরিস্কার করে আজিম শাহ(র.) বসতি স্থাপন করেন। বহুদূর থেকে তখন মানুষ তাঁর কাছে কুরআন হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করতে আসত।
আজিম শাহ(র.) নিজ হাতে পাটখড়ি দিয়ে কাগজ তৈরি করতেন। সে কাগজে তাঁর অসংখ্য কেতাব এখনও সংরক্ষিত আছে।
এখানে উল্লেখ্যযোগ্য হলো, আজিম শাহের পূর্ব-পুরুষ হযরত শাহ মোহাম্মদ লুদুন্নি হযরত শাহ জালালের সাথে এদেশে আসেন।
রায়পুর জিনের মসজিদ
রায়পুর বাজারের মেইন রোড থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ১ কি.মি দূরে রায়পুর মোল্লারহাট সড়কের দক্ষিণে জিনের মসজিদ নামক মসজিদটির অবস্থান। মসজিদের পূর্ব এবং দক্ষিণ পাশে বিশাল আকৃতির দুইটি দিঘী আছে। এই উপজেলা + জেলায় কথিত আছে এই দিঘী এবং মসজিদ জিনেরা নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে মরহুম মাওলানা আবদুল্লাহ সাহেব দেওবন্দ থেকে লেখাপড়া করে দিল্লীর জামে মসজিদের ন্যায় অনরূপ একটি মসজিদ নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সে হিসাবে বহু লোকজন দিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে দিঘি এবং মসজিদের মূল অংশ সম্পন্ন করেন। তা দেখেই এলাকার মানুষ মনে করে মসজিদটি জিনেরা নির্মাণ করেন।
এছাড়া এ মসজিদটি অত্র অঞ্চলে অভিনব যা সচরাচর এমন মসজিদ দেখা যায় না। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি সুউচ্চ প্রাচীরে মসজিদটি নির্মিত। পূর্ব ভাগে রয়েছে তিনটি অসম্পূর্ণ মিনার। মরহুম আবদুল্লাহ মসজিদের কাজ শুরু করলে করলেও যেটুকু সম্পন্ন হয়েছে তা শেষ করেন তাঁর পুত্র মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনিও দেওবন্দ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। মসজিদের দক্ষিণ অংশে ভূমি সমতল থেকে নিচে অন্ধকার প্রকোষ্ঠ আছে। যাকে আধাঁর মানিক নাম দিয়েছে। এটিতে বসে মোহাম্মদ উল্ল্যাহ এবাদত করতেন।
কিন্তু বর্তমানে সে প্রকোষ্ঠ পানি থাকে। মসজিদের পূর্ব দিকে আজান দেওয়ার জন্য একটি স্তম্ভ রয়েছে।
মসজিদটি আমাদের গ্রামের বিল থেকে দেখা যায় এবং নামাজ আদায়ের জন্য প্রায় সময় যাওয়া হয়।
রায়পুর বড় মসজিদ
লক্ষ্মীপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ রায়পুর বড় মসজিদ। এই মসজিদটি রায়পুর বাজারের উত্তর প্রান্তে ফরিদগঞ্জ সড়কের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত।
এটি ১২১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা মরহুম পীর ফয়জলল্লাহ এলাকার মানুষের সহযোগিতার মাধ্যমে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম অবস্থায় এই মসজিদটি খড় দিয়ে নির্মিত হয়। এই মসজিদের জায়গা দান করেন মরহুম রৌশন ব্যাপারী৷
বর্তমানে মসজিদটি অনেকগুলো গম্বুজ বিশিষ্ট বিশাল আয়তনের এক মসজিদ। এই মসজিদে বর্তমানে ৫ হাজার লোক নামাজ আদায় করতে পারে।
১৯৩৫ সালে মসজিদটি পাকাকরণ, পুকুর ঘাট, মিনার, গম্বুজ, বারান্দা ও মাঠ পাকা করা হয়।
এই মসজিদের প্রথম ইমাম পীর ফয়জুলল্লাহ, দ্বিতীয় ইমাম পীর ফজলুল হক। এইভাবে বংশানুক্রম ইমামতির দায়িত্ব পালন করে আসছে।
ধন্যবাদ
নাসির উদ্দিন