চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ড্রাগনফল চাষ বেশ ভালোভাবেই হচ্ছে বলা যায়।ড্রাগন চাষ করা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে বিরাট এলাকাজুড়ে এবং এর মাধ্যমে ভালোভাবেই ফলন হচ্ছে বলে স্বচ্ছল হয়েছেন বিভিন্ন স্থানীয় ও প্রান্তিক কৃষকেরা।
লাল, সাদা রং এর ড্রাগন ফল যেনো সকালেরই অতি পছন্দের ও প্রিয় ফলের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার নাহার এগ্রো এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা এবং সেইসাথে লাভবান হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। মীরসরাই এর সোনাপাহাড়,পশ্চিম আলীনগর ও করেরহাট এলাকায় এ ফলের বিরাট প্রকল্পজুড়ে চাষ রয়েছে। সেখানে বিরাট এলাকাজুড়ে ড্রাগন ফলগাছ বিস্তরলাভ করেছে।ড্রাগন
ড্রাগন ফল সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য –
বৈজ্ঞানিক নামঃ Hylocereus undatus.দেখতে অনেকটা ক্যাকটাস এর মতো কাঁটাযুক্ত। এটি সাদা, হলুদ ও লাল তিন ধরনের হয়ে থাকে সাধারণত। তবে লাল রং এর ড্রাগনফল সহজে পাওয়া যায় সবজায়গায়।
বৈদেশিক এ ফল চাষাবাদ করে চাষীরা একেবারেই সন্তুষ্ট। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি সম্ভাবনাময় সোর্স। কারণ বর্তমানে এ ফলের চাহিদা অনেক বেশি।দেশীয় পণ্যের সোর্স যদি নিজ জেলার মধ্যে থাকে তাহলে চাহিদা অনুযায়ী যোগান দেয়া যায় সব ধরনের পণ্য। আলহামদুলিল্লাহ এ ফলের উদ্যোগে সফল হচ্ছেন চট্টগ্রাম সহ অন্যান্য জেলার উদ্যোক্তারা।
ড্রাগনফলের ব্যাপকভাবে চাষ হয় মূলত ভিয়েতনামে। মধ্য আমেরিকায় ড্রাগন ফলের আদি অবস্থান রয়েছে বলে জানা যায়।তবে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশে ড্রাগন ফলের চাষ হয়।ড্রাগন গাছে এপ্রিল মাস থেকে ফুল আসা শুরু করে এবং সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ফল ধরা শুরু করে।সাধরণত উষ্ণমন্ডলীয় আবহাওয়ায় ড্রাগন ফল ভালো জন্মে।
ড্রাগন ফলের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। যার কারণে এর চাহিদা বাজারে দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলুন এর উপকারিতা গুলো একনজরে পড়ে নিই-
হাঁড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখেঃ
আজকাল হাঁড়ের সমস্যা সব ধরনের মানুষ বিশেষ করে চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের বেশি হয়ে থাকে।এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার কোনো জুড়ি নেই।তাছাড়া অস্টিওপরোসিস নামক হাড়ের রোগ উপশমে ড্রাগন ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হার্টকে সুস্থ রাখেঃ
হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল কে দূরে রাখা ভীষণ জরুরি। এটি আমাদের শরীরের খুবই ক্ষতি করে থাকে।ড্রাগন ফল খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল দূর করে ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল বৃদ্ধি তে সহায়তা করে থাকে।
কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করেঃ
ড্রাগন ফলে খেলে হজম প্রক্রিয়া সহজসাধ্য হয় বলে এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখেঃ
শরীরের প্রতিটি অঙ্গে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা ভীষণ জরুরি। রক্ত চলাচলের গতিকে সুষ্ঠু রাখতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল।যাদের শরীরে আয়রনের অভাব তাদের জন্য ড্রাগনফল বেশ উপকারী।
চুল ঝরে পরা রোধ করেঃ
নারী-পুরুষ, ছোটো-বড় সব বয়সী মানুষের জন্য এই চুল ঝরে পরার সমস্যা যেনো বিরাট এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।এ সমস্যার সমাধান আমাদের কে দিতে পারে ড্রাগন ফল নিয়মিত খাওয়া।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরের ইমিউন সিস্টেম কে সচল রাখতে ড্রাগন ফল অবিশ্বাস্য ভূমিকা পালন করে।আমাদের শরীরকে সব ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা করার বিশেষ কাজ করে থাকে এটি।
সম্প্রতি ভাইরাসের আক্রমণে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই ইমিউন সিস্টেম কে সচল রাখতে ড্রাগন ফল আহার করে মানুষ উপকারিতা পাচ্ছে। এতে রয়েছে ক্যালরি,ম্যাগনেশিয়াম,ভিটামিন সি,ওমেগা ৩, ওমেগা ৯ ও বিভিন্ন এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।এসব উপাদান শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে ড্রাগন ফল গর্ভবতী নারীদের জন্য বেশ উপকারী।
আজকাল বাড়ির ছাদে অনেকে শখের বশে ড্রাগনফল গাছ লাগিয়ে থাকেন।নিজেদের পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এ ফল বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন অনেকেই।এটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় সব বয়সী মানুষ রা খেতে পারেন বলেই সকলের জন্যই সমানভাবে উপকারী এবং এর চাহিদাও রয়েছে।
শুধুই কি ড্রাগনফল?
না,ড্রাগনফলের চারা বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছেন অনেকে। ড্রাগন ফল দেশের সর্বত্র উৎপাদিত হয়না এখনো পর্যন্ত তাই দাম হয়তো সামান্য বেশি।কিন্তু মানুষের চেষ্টার মাধ্যমে বর্তমানে এটি চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ড্রাগন ফল খেতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না।বাইরে থেকে খোসা ফেলে ভেতরের অংশটুকু টুকরো করে খাওয়া যায়। অল্প যত্ন করলে ড্রাগনফল ভালোভাবে চাষ করা যায় বলে এ ফল চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।ই-কমার্সে ড্রাগন ফল নিয়ে কাজ করলে চাহিদা সৃষ্টি হবে অনেক বেশি এবং এ ফলের সম্ভাবনাও ব্যাপক।
ফারজানা ফাতেমা