চলতি বছর স্যামসাংয়ের মেমোরি চিপ ব্যবসা খুব ভালো যাবে না বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বাজারের সংকোচন ও ডাটা সেন্টার কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ হ্রাসের কথা জানিয়েছে দক্ষিণ কোরীয় টেক জায়ান্ট স্যামসাং। গতকাল স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বাজারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শেয়ারহোল্ডারদের সামনে এমন চিত্রই তুলে ধরেন কোম্পানির সহ-প্রধান নির্বাহী (কো-সিইও) কিম কি-নাম।
চিপ ও স্মার্টফোনের বিক্রি কমে যাওয়ার এ পরিস্থিতিতে স্যামসাং এখন নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাণের ব্যবসার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে বলে জানান কিম। পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবসায় আরো সাহসী বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার কথাও বলেন তিনি।
বাজার বিশ্লেষকদের তথ্য অনুযায়ী, অনলাইন বাজারে স্যামসাং স্মার্টফোনের চাহিদা এখনো সন্তোষজনক নয়। কোম্পানিটিকে স্মার্টফোন বিক্রির ক্ষেত্রে এখনো খুচরা দোকান এবং শিপমেন্ট চ্যানেলের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাছাড়া দুই বছর ধরে তাদের উদ্ভাবনও তেমন নজর কাড়তে সক্ষম হয়নি।
২০১৮ সালে স্যামসাং মোট ২৯ কোটি ২৩ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহ করেছে। এ সময় বাজারে অংশীদারিত্ব ছিল ২০ দশমিক ৮ শতাংশ। আর চীনা প্রতিদ্বন্দ্বী শাওমি ১২ কোটি ২৬ লাখ ইউনিট সরবরাহ করে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বাজার অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করেছে।
পাশাপাশি ২০১৮ সালের শেষ প্রান্তিকে স্যামসাং স্মার্টফোনের বিক্রিও ৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৭ কোটি ৪০ লাখে নেমে যায়। যদিও বাজার অংশীদারিত্ব অ্যাপল ও হুয়াওয়ের চেয়ে সামান্য বেশিই ছিল। একই সঙ্গে ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী স্যামসাং স্মার্টফোনের বিক্রি ৮ শতাংশ কমে ২৯ কোটি ২৩ লাখে নেমে যায়।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) বলছে, দুয়ারে কড়া নাড়ছে ফাইভজি প্রযুক্তি। এখন এ নতুন প্রতিযোগিতার বাজারে স্যামসাং নিজের অস্তিত্ব কতটা জোরালোভাবে জানান দিতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।
যেখানে কো-সিইও কিম কি-নাম এজিএমে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উত্তেজনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি এবং ডাটা সেন্টার কোম্পানিগুলো থেকে মেমোরি চিপের চাহিদা কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯কে কঠিন বছর হিসেবেই দেখছেন তারা।
এ পরিস্থিতিতে শাওমির জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছে আইডিসি। তারা বলছে, পশ্চিম ইউরোপ, বিশেষ করে স্পেনে শাওমি অসম্ভব ভালো করেছে। উদীয়মান বাজারগুলোয় তাদের রেডমি সিরিজ সবচেয়ে এগিয়ে আছে। তবে মি মিক্স/ম্যাক/প্রো ডিভাইসগুলো ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসে পরিণত হচ্ছে। এখানে ডিভাইসগুলোর দামই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।
এদিকে স্মার্টফোনের লাইনআপ নিয়েও ভাবছে শাওমি। তারা বেশি দামের ডিভাইসের দিকে নজর দিচ্ছে, যা তাদের প্রান্তিক মুনাফা (প্রফিট মার্জিন) বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। শাওমির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, চীনের বাজারে শাওমির ফোনগুলোর গড় দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশে ১০ শতাংশ।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির হিসাবে, শাওমির বিক্রি ১১ কোটি ৮৭ লাখে পৌঁছেছে। এর ফলে ২০১৮ সালে বিক্রি বেড়েছে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ। যেখানে একই সময়ে স্মার্টফোনের বৈশ্বিক বাজার কমেছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
স্মার্টফোনের বাজার সংকোচনের এ ধারাবাহিতা চলতি বছরও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আইডিসি। তাদের হিসাবে, ২০১৯ সালে স্মার্টফোনের বাজার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ কমে ১৩৯ কোটি ইউনিটে নেমে যাবে। স্মার্টফোন নির্মাতারা এ বছর ৬৭ লাখ ফাইভজি স্মার্টফোন, ৫ কোটি ৭৫ লাখ থ্রিজি এবং ফোরজি স্মার্টফোন সরবরাহ করবে ১৩৩ কোটি ৬ লাখ ইউনিট।