কভিড-১৯ মহামারীর সংক্রমণ রোধে আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে চীনে অ্যাপলের অধিকাংশ কারখানার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি তাদের নতুন আইফোন ১৪ সিরিজের বাজারজাত বা সরবরাহ কমার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে বছর শেষের ছুটির মৌসুমের বিক্রিতে প্রভাব ফেলবে। খবর রয়টার্স।
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও সুদহার বেড়ে যাওয়ায় প্রযুক্তিপণ্য ক্রয়ে ভোক্তা ব্যয় অনেকাংশেই কমে এসেছে। তবে নতুন সিরিজের আইফোন বাজারজাতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক প্রযুক্তিবাজারে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার এ প্রযুক্তি জায়ান্ট কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে চীনের জিরো টলারেন্স নীতির ভুক্তভোগীতে পরিণত হয়েছে। এর কারণে এরই মধ্যে ইস্টি লডার কোম্পানি ও কানাডা গুজ হোল্ডিংস ইনকরপোরেশনস চীনে তাদের স্টোর বন্ধ করে দিয়েছে এবং পুরো বছরের পূর্বাভাস বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
সম্প্রতি দেয়া এক বিবৃতিতে অ্যাপল জানায়, বর্তমানে কারখানাগুলো খুবই স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উৎপাদনের মোট ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আইফোন ১৪ প্রো ও ১৪ প্রো ম্যাক্স ডিভাইসের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা আইফোন ১৪ প্রো ও ১৪ প্রো ম্যাক্সের বাজারজাত আগের পূর্বাভাসের তুলনায় আরো কমিয়ে এনেছি। গত মাসে বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে কভিড-১৯ সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম বড় একটি কারখানার উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে যাবে।
চীনের মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত ঝেংঝুতে দুই লাখের মতো কর্মী রয়েছেন। তবে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল সেগুলো তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছে। অনেক কর্মীকে কারখানা ছেড়ে পালাতেও দেখা গেছে। বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ট্রেন্ডফোর্স গত সপ্তাহে ডিসেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকের জন্য আইফোন বাজারজাতের পূর্বাভাস ২০-৩০ লাখ ইউনিট কমিয়েছে, আগে যার পরিমাণ ছিল আট কোটি ইউনিট।
সেপ্টেম্বরে গ্রাহকদের জন্য নতুন সিরিজের আইফোন বাজারজাত করেছে অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, নতুন পণ্য হাতে পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হবে। ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন বাজার মূলধনের প্রযুক্তি জায়ান্টটি অক্টোবরে দেয়া পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, ডিসেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে তাদের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি কমে ৮ শতাংশের নিচে চলে যাবে।
নর্থ ক্যারোলাইনার এলপিএল ফাইন্যান্সিয়ালের প্রধান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিস্ট কুইন্সি ক্রসবি বলেন, অ্যাপলের উৎপাদন কার্যক্রমে যেটি প্রভাব বিস্তার করে সেটি তাদের শেয়ার মূল্যকে প্রভাবিত করে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি আরো গভীর। মূলত চীনের অর্থনীতিকে ঘিরে ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেটি মুখ্য। সম্প্রতি চীন ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক কভিড-১৯ সংক্রমণের তথ্য প্রকাশ করেছে। এর একদিন আগেই দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, মহামারীর সংক্রমণ রোধে তারা কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলবে, যেটি দেশটিতে বিনিয়োগকারীদের আশার গুড়ে বালির সঞ্চার করেছে।
ঝেংঝুতে অবস্থিত কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করে তাইওয়ানের ফক্সকন। গতকাল দেয়া এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কারখানায় পুরোদমে উৎপাদন শুরুর জন্য তারা যধাসাধ্য চেষ্টা করছে। পাশাপাশি চতুর্থ প্রান্তিকের জন্য তারা যে পূর্বাভাস দিয়েছিল সেখানেও পরিবর্তন এনেছে। কারখানায় কভিড-১৯-এর সংক্রমণ রোধে তারা নতুন পদক্ষেপ নেবে। এর মধ্যে কারখানা থেকে ডরমিটরিতে যাতায়াত বন্ধ করার মতো বিষয়ও রয়েছে।
সম্প্রতি কারখানাটি কর্মীদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি উদ্যোগ নিয়েছে। যেসব কর্মী কারখানা থেকে চলে গেছেন তারা ফিরে এলে এককালীন ৫০০ ইউয়ান বা ৬৯ ডলার দেয়া হবে। এছাড়া কারখানাটি কর্মীদের প্রতি ঘণ্টায় ৩০ ইউয়ান পারিশ্রমিক দেয়ার প্রচারণা চালিয়েছে।
গত বুধবার ঝেংঝু এয়ারপোর্ট ইকোনমি জোনে সাতদিনের লকডাউন জারি করা হয়েছে। এখানে আইফোনের কারখানা অবস্থিত। নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো অধিবাসী নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে যেতে পারবে না। পাশাপাশি অনুমতিপ্রাপ্ত যানবাহন ছাড়া রাস্তায় কেউ চলাচল করতে পারবে না। এক বিবৃতিতে ফক্সকন জানায়, হেনানের প্রাদেশিক সরকার সবসময় সহায়তার বিষয়ে তাদের পরিষ্কার অবস্থানের কথা জানিয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি কভিড-১৯ মহামারীর সংক্রমণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণ উৎপাদনে যাওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।
সাবেক হন হাই প্রিসিশন ইন্ডাস্ট্রি ও বর্তমান ফক্সকন আইফোনের অন্যতম উৎপাদনকারী। প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক বাজারজাতের ৭০ শতাংশ সম্পন্ন করে। ভারত ও দক্ষিণ চীনে প্রতিষ্ঠানটির ছোট উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। বছরের চতুর্থ বা শেষ প্রান্তিক তাইওয়ানের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য। কেননা ছুটির মৌসুমে পশ্চিমের বাজারে সেলফোন, ট্যাবলেট ও অন্যান্য ইলেকট্রনিকস পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা হয়।