করোনা মহামারীতে সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা কোম্পানিগুলো যে বড় অংকের বিনিয়োগে ঝুঁকেছিল তাতে ভাটা পড়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শ্লথগতির শঙ্কায় কোম্পানিগুলো তার বিনিয়োগের রাশ টেনে ধরছে। নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা করোনা মহামারীতে অল্প যে কয়েকটি খাতে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়েছে তার মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর খাত অন্যতম। ইন্টেল থেকে শুরু করে টিএসএমসি, মাইক্রন, স্যামসাং সবাই নতুন কারখানা স্থাপন, নতুন কর্মী নিয়োগ ও অধিক যন্ত্রাংশ ক্রয়ে ব্যয় বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে সেমিকন্ডাক্টর খাতে তীব্র প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে ফের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই মূল্যস্ফীতি তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং মন্দার ভয় জেঁকে বসেছে। এমন পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ কোম্পানিই নতুন বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকছে বা পিছিয়ে দিচ্ছে। সেমিকন্ডাক্টর খাতেও এ প্রবণতা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পসংশ্লিষ্ট জোট এসইএমআই তাদের সাম্প্রতিক এক পূর্বাভাসে জানায়, আগামী বছর সেমিকন্ডাক্টর খাতে বৈশ্বিক মূলধন বিনিয়োগ হবে ১৩ হাজার ৮১০ কোটি ডলার, গত এপ্রিলে যেখানে ১৬ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
বিশেষ করে লক্ষণীয়, ওয়েফার ফ্যাব্রিকেশন ইকুইপমেন্ট বা ডব্লিউএফই খাতে বিনিয়োগ কমছে। এসইএমআইর পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে ডব্লিউএফই খাতে ৯ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হবে। এর আগের পূর্বাভাসে যেখানে ১০ হাজার ১৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। চিপ উৎপাদনে ডব্লিউএফই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ খাতের সম্প্রসারণ পরিমাপকের প্রধান সূচক। চিপ নির্মাতারা এখনো তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা সমন্বয় করছেন বলে ডব্লিউএফই খাতে বিনিয়োগ আরো কমতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
গত বুধবার মর্কিন চিপ নির্মাতা কোম্পানি মাইক্রন জানায়, ডির্যাম ও ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরির জন্য নির্মিত চিপ উৎপাদন ২০ শতাংশ কমাবে। ২০২৩ সালে মাইক্রনের মূলধন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৮০০ কোটি, ২০২২ অর্থবছরে যেখানে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে মেমরি চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এসকে হাইনিক্স জানায়, ২০২৩ সালে তাদের বিনিয়োগ অর্ধেক কমিয়ে আনা হচ্ছে। তৃতীয় প্রান্তিকে নিট মুনাফায় ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ পতনের পর বিনিয়োগ কমানোর এ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ডির্যাম চিপ নির্মাতা কোম্পানিটি।
বিশ্বের শীর্ষ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা কোম্পানি টিএসএমসি তার বার্ষিক মূলধন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পরিবর্তন আনে। ২০২২ সালে ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় করতে যাচ্ছে তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানিটি। অথচ বছরের শুরুতে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল।