মানবদেহে ব্রেইন চিপ পরীক্ষার অনুমোদন পাওয়ার আগে প্রাণীদেহে পরীক্ষা চালিয়েছে নিউরোলিংক। এ পরীক্ষার বিরুদ্ধে প্রাণী সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ। খবর রয়টার্স।
ইলোন মাস্ক মালিকানাধীন মেডিকেল ডিভাইস কোম্পানি নিউরোলিংকের কর্মীরা জানান, ব্রেইন চিপ প্রযুক্তির কার্যক্ষমতা যাচাইয়ে মাস্কের কোম্পানি অনেক তাড়াহুড়ো করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি প্রাণী মারা গিয়েছে। অন্যদিকে নিউরোলিংকের দাবি, তারা এমন একটি চিপের উন্নয়নে কাজ করছে যেটি চলাচলে অক্ষমদের স্বাভাবিক হতে সহায়তা করবে।
২০১৬ সালে নিউরোলিংকের যাত্রা। সে সময় ইলোন মাস্ক সহপ্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। কোম্পানির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ স্থাপনের প্রযুক্তি নির্মাণ। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের ইন্সপেক্টর জেনারেলস অফিস তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে প্রাণী কল্যাণ আইনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ আইনে পরীক্ষাগারে কোনো প্রাণীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর সময় কোন বিষয়গুলো গ্রহণযোগ্য আর কোনগুলো নয় তার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের গতি বাড়াতে মাস্ক ক্রমাগত চাপ দিয়েছেন। যা পরীক্ষাগারে প্রাণীগুলোর ওপর অভাবনীয় নির্যাতনের সূচনা করেছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রস্তুতি ছাড়াই আর কিছু ক্ষেত্রে একই পরীক্ষা বারবার চালাতে বাধ্য হয়েছেন গবেষকরা। এসকল কারণে অনেক প্রাণী মারা গেছে।
২০১৮ সাল থেকে নিউরোলিংকের পরীক্ষাগারে যে দেড় হাজার প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে এর মধ্যে ২৮০টি ভেড়া, শূকর আর ম্যাকাক বানর আছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে তথ্য সংরক্ষণের বেলায় নিউরোলিংক ভুল করেছিল বলেও অভিমত রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিবেদনে যে পরিমাণ প্রাণহানির কথা বলা হয়েছে তার হার আরো বেশি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিজিশিয়ান কমিটি ফর রেসপনসিবল মেডিসিন নিউরোলিংকের এ কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করেছে। সংস্থাটি জানায়, ইলোন মাস্কের কোম্পানি ব্রেইন মেশিন ইন্টারফেসের নামে ম্যাকাক বানরগুলোর অঙ্গ বিচ্ছেদ করে বিকৃত করছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে এক ব্লগ পোস্টে নিউরোলিংক নিজেদের প্রাণী কল্যাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দাবি জানিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
অন্যদিকে গত ৩০ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে ছয় মাসের মধ্যে মানবদেহে ওয়্যারলেস ব্রেইন চিপ পরীক্ষার কথা জানিয়েছেন ইলোন মাস্ক। নতুন এ চিপের বিষয়ে সর্বশেষ দেয়া এক আপডেটে মাস্ক জানান, মানবদেহে প্রতিস্থাপনের আগে চিপটির শতভাগ কার্যকারিতা নিশ্চিতে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি।
তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে দুজন মানুষের ওপর নিউরোলিংক ডিভাইসের পরীক্ষা চালানো হবে। বিশেষ করে যাদের দৃষ্টিশক্তি নেই বা দুর্বল ও চলাচলে অক্ষম তাদের প্রাধান্য দেয়া হবে। তিনি বলেন, যদি জন্মের সময় কেউ দৃষ্টিশক্তি ছাড়া জন্মায় আমাদের বিশ্বাস তাদেরও আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারব।