গত ১৯ এপ্রিল কুমিল্লার জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ই-কমার্স নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আয়োজনে ছিল উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক বা ডিসি মহোদয় মোঃ আবুল ফজল মীর, স্ট্রার্ট আপ বাংলাদেশের বিনিয়োগ উপদেষ্টা টিনা জাবিন, ই-ক্যাবের যুগ্মসচিব ও উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা, দ্যা স্প্রিরিট অব সুমাইয়া টেকের স্বত্বাধিকারী রিপা আর জাহান ও জাগ্রত মানবিকতার সাধারণ সম্পাদক ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদ সন্তান কমান্ড এর কুমিল্লা মহানগরের আহবায়ক তাহসিন বাহার সূচনা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা কাস্টের ফাউন্ডার ডঃ ফাহরিন হান্নান।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ আবুল ফজল মীর প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কুমিল্লাতে ই-কমার্স এর প্রসারে তার ব্যক্তিগত এবং তার অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আগামি কয়েক মাসের মধ্যে কুমিল্লাতে ই-কমার্স এর উপর দিন ব্যাপী কনফারেন্স আর মেলা আয়োজনের ব্যপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাহসিন বাহার সূচনা কুমিল্লাতে ই-কমার্স এর প্রসার ঘটানোর ব্যপারে কাজ করার কথাও বলেন।
এই অনুষ্ঠানে কি নোট স্পিকার হিসেবে আমি (রাজিব আহমেদ, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রাক্তন সভাপতি ই-ক্যাব) আমার বক্তব্য রাখি। আমার বক্তব্যে মূলত বলার চেষ্টা করেছি যে কুমিল্লাতে ই-কমার্সকে ছড়িয়ে দেবার এখন উপযুক্ত সময় এবং অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। যেসব সমস্যা আছে সেগুলো তেমন বড় নয় এবং সবাই মিলে চেষ্টা করলে তা সহজেই মোকাবেলা করা যাবে।
কুমিল্লাতে রয়েছে দেশের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার। এছাড়া শিক্ষা সংস্কৃতিতে জেলাটি সব সময় বেশ এগিয়ে। প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স আয়েও কুমিল্লা জেলা এক নম্বরে। ঢাকা থেকে বেশ কাছে এবং ঢাকা চট্টগ্রামের মাঝে অবস্থিত। জেলার রস মালাই এবং খাদি কাপড় সারা দেশে এক পরিচিত। এ দুটি পন্য একথাই আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কুমিল্লার মানুষের জাতীয় পর্যায়ে সেরা কিছু উৎপাদনের ক্ষমতা প্রমানিত অনেক বছর ধরে। শালবন বৌদ্ধ বিহারের কারনে পর্যটনের ব্যপক সম্ভাবনাও আছে। এসব প্রতিটি দিকে ই-কমার্সের ছোয়া পেলে কুমিল্লা আরো এগিয়ে যাবে সন্দেহ নেই।
এ জেলাতে এখন পর্যন্ত সেই অর্থে কোন বড় ই-কমার্স এর ওয়েবসাইট গড়ে উঠে নি। ফেসবুক ভিত্তিক এফ কমার্সের উদ্যোগ আছে বেশ কিছু এবং তাদের অনেকেই নারী উদ্যোক্তা। এটি হয়তো সমস্যা কিন্তু এটিই অনেক বড় সম্ভাবনা। কারন ঢাকার খুব কাছে বলে ঢাকা থেকে ২০ টি ই-কমার্স কোম্পানি যদি তাদের অফিস খুলে বা তাদের অপারেশন কুমিল্লা থেকে পরিচালনা করা শুরু করে তাহলেই এক বছরের মধ্যে কুমিল্লার ই-কমার্সের চেহারা পাল্টে যেতে বাধ্য।
যা করা দরকার তাহল একটি ভবন বা মার্কেটকে ই-কমার্স পার্কে রূপান্তর করা যেখানে অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ভিত্তিক উদ্যোক্তা, কুরিয়ার সার্ভিস, পেমেন্ট গেইটওয়ে ও মোবাইল ফিনান্স, ডোমেইন হোস্টিং সহ ই-কমার্সের সাথে সম্পর্কিত সব ধরনের কোম্পানি একই জায়গাতে থাকবে। এটি করা গেলে অনেক দ্রুত গতিতে ই-কমার্স এর প্রসার ঘটবে কুমিল্লাতে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ, আইসিটি ডিভিশন, কুমিল্লার ডিসি অফিস, উই, কুমিল্লার মেয়র অফিস, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সবাই এক সাথে চেষ্টা করলে কুমিল্লাতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠা করা আসলেই সময়ের ব্যপার মাত্র। সরকারি ট্রেনিং, উদ্যোক্তাদের সাহায্য, ইনোভেশন তহবিল- মোট কথা বিদ্যমান অবকাঠামোতে যা যা আছে তা দিয়েই কুমিল্লার উদ্যোক্তা এবং যারা এদিকে জানতে চায় শিখতে চায় তাদের সাহায্য করা সম্ভব। শুধু দরকার সদিচ্ছা আর আন্তরিকতা।
ই-কমার্স ইভেন্টে ১৫০ জনের উপস্থিতি একথাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে কুমিল্লাতে মাঠে কাজ করার জন্য অনেক তরুন-তরুণী আছে, যারা কিছু করতে চায়। আর ই-কমার্স হল শিক্ষিত লোকের জন্য আগামি দিনের চাকুরি, ব্যবসা বা সেরা পেশা। একটু চেষ্টা করলে এক বছরের মধ্যে কুমিল্লার ই-কমার্সের বাজারকে দিনে ১০ হাজার ডেলিভারিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর তা করা গেলে অন্তত ১০ হাজার শিক্ষিত লোকের প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ কর্ম সংস্থান হবে।
একদিকে কুমিল্লার রয়েছে রস মালাই ও বস্ত্র শিল্প এবং সারা দেশে ই-কমার্সের মাধ্যমে শুধু জেলা পর্যায়ে নয় বরং ইউনিয়ন পর্যায়ে এসব পন্য পাঠানো সম্ভব কারন চাহিদা আছে, সুনাম আছে। অন্যদিকে কুমিল্লা জেলার ৫০ লক্ষের বেশি লোকের বাজার রয়েছে সারা দেশের ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য। রেমিটেন্সের কারনে একদম গ্রামে বসবাসকারী পরিবার গুলোর মধ্যেও ই-কমার্স এর পন্যের প্রতি আগ্রহ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
চিনের উদাহরণ থেকে দেখেছি একদম প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ যা উৎপাদন করছে তা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সারা দেশে শুধু নয় বরং সারা বিশ্বে বিক্রি করছে। কুমিল্লা সেই অর্থে প্রত্যন্ত কোন জেলা নয়। ঢাকার একদম কাছে আর চট্টগ্রাম বন্দরে কোন পন্য পাঠাতেও হলে ঢাকার থেকেও কম সময় লাগে।
কুমিল্লাতে ই-কমার্সকে ছড়িয়ে দেয়া গেলে পাশের জেলা গুলোতে এ নিয়ে কাজ করা অনেক সহজ হবে। কুমিল্লার উদাহরন থেকে শিক্ষা নিয়ে তা দেশের বাকি জেলা গুলোতে ছড়িয়ে দেয়া যাবে। ই-কমার্সে এমনিতেই আমরা অনেক দেরিতে শুরু করেছি। আশা করি ঢাকার বাইরে ই-কমার্সকে ছড়িয়ে দিতে আর দেরি করবো না।
রাজিব আহমেদ
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)