স্মার্টফোনের বাজার হিসেবে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে দেশটিতে ৬ কোটি ৫৪ লাখ ইউনিটের বেশি স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন প্রকাশিত প্রান্তিকওয়ারি মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চীনের মোবাইল ফোন মার্কেটের জন্য ২০২৩ সালের শুরুটা তেমন ভালো ছিল না। ২০২২ সালের তুলনায় প্রান্তিক হিসেবে স্মার্টফোন বাজারজাত ১০ শতাংশ কমেছে। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেশটির বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হলেও গ্রাহক পর্যায়ের চাহিদা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। যে কারণে নির্দিষ্ট সময় পর সেলফোন পরিবর্তনের যে ধারা সেটিতেও পরিবর্তন এসেছে। ভোক্তারা বর্তমানে একটি স্মার্টফোন তিন-চার বছর পর্যন্ত ব্যবহার করছে।
ডিভাইস পরিবর্তনের হার কমে যাওয়ার পেছনে উৎপাদনকারীরাও ভূমিকা রেখেছে। প্রচারণার সময় কোম্পানিগুলো ৪৮ মাস পর্যন্ত সেলফোন ভালো থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি ডিভাইসে বেশি র্যাম ও ইন্টারনাল স্টোরেজ থাকার সুবিধাও প্রভাব ফেলেছে। তবে এত সমস্যার মধ্যেও চীনের পাঁচ শীর্ষ স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাজারে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ হিস্যা নিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে শীর্ষে আসে অপো। দুটি ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস বাজারজাতের মাধ্যমে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সেটি অপোর জন্য সুফল বয়ে আনছে। কোম্পানিটির ফাইন্ড এন২ ও ফ্লিপ সিরিজ প্রথম প্রান্তিকে ফোল্ডেবল বাজারে শীর্ষে ছিল। এছাড়া অতিসম্প্রতি উন্মোচন করা ফাইন্ড এক্স-৬ সিরিজ আরো বেশি জনপ্রিয়তা পায়। এর মাধ্যমে অপোর ফ্ল্যাগশিপ সিরিজের বাজার হিস্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
১৭ দশমিক ৬ শতাংশ হিস্যা নিয়ে চীনের বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অ্যাপল। জানুয়ারিতে সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে অ্যাপল প্রথমবারের মতো পণ্যের দাম পুনর্নির্ধারণ করে। ফেব্রুয়ারিতে কুপারটিনোর প্রযুক্তি জায়ান্টটি আইফোন ১৪ প্রো ও ম্যাক্সের চ্যানেল মূল্য কমিয়েছে। এ দুটি ডিভাইসের ভালো চাহিদা ছিল এবং বিক্রিও হয়েছে অনেক। তবে নতুন রঙের ভার্সন আনার পর আইফোন ১৪ ও প্লাস সেভাবে বাজারে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের বাজারে তৃতীয় অবস্থান দখলে রেখেছে ভিভো। বিশেষ করে ভাঁজযোগ্য ডিভাইস এক্স ফোল্ড ২ ও এক্স ফ্লিপ বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত। প্রযুক্তিবিদ ও বিশ্লেষকদের আশা, এ দুটি ডিভাইস ফ্ল্যাগশিপ বাজারে ভিভোর হিস্যা বাড়াতে সহায়তা করবে। অফলাইন বাজারে এস১৬ সিরিজ ভালো পারফর্ম করেছে এবং ২০০-৪০০ ডলারের বাজারে শীর্ষস্থান অর্জনে ভিভোকে সহায়তা করেছে।
অভ্যন্তরীণ বাজারে চতুর্থ স্থানে রয়েছে অনর। এর ম্যাজিক ৫ সিরিজটি বাজার অবস্থান তৈরিতে সহায়তা করেছে। তবে শাওমি পঞ্চম স্থানেই রয়েছে। ৪০০-৬০০ ডলারের সেগমেন্টে কোম্পানির বাজার হিস্যা ১০ শতাংশ বাড়াতে সহায়তা করেছে শাওমি ১৩। অন্যদিকে রেডমি নোট ১২ সিরিজ বাজারে গ্রাহকের পছন্দের শীর্ষে ছিল।
অন্যদিকে বছরের প্রথম তিন মাসে ভাঁজযোগ্য ডিভাইসের বাজার স্থিতিশীলই ছিল। এ সময় ১০ লাখ ২০ হাজার ইউনিট ডিভাইস বাজারজাত করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। বর্তমানে আরো অনেক প্রতিষ্ঠান এ খাতে ডিভাইস বাজারজাতে কাজ করছে। তাই সংশ্লিষ্টদের আশা, চলতি বছর চীনের বাজারে ভাঁজযোগ্য সেলফোনের বাজার আরো বাড়বে।