স্মার্টফোন মানেই এখন আর ‘মেড ইন চায়না’, ‘মেড ইন কোরিয়া’ বা ‘মেড ইন ভিয়েতনাম’ নয়। এই তালিকায় এখন আরেকটি নাম ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। সরকারের নীতি সহায়তার কারণে গত পাঁচ বছরে দেশে প্রায় সব ব্র্যান্ড কারখানা স্থাপন করেছে। চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশ ফোন তারা উৎপাদন করছে। কিন্তু অবৈধ পথে আসা ফোনসেটের বাজার বা গ্রে মার্কেটের কারণে এই খাত নতুন সংকটে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গ্রে মার্কেটের আধিপত্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে কম্পানিগুলো।
উদ্যোক্তারা বলছেন, মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন কার্যকর না হওয়ায় দেশে সম্প্রতি বেড়েছে অবৈধ হ্যান্ডসেটের বাজার। ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার) সিস্টেম চালুর পর দেশে গ্রে মার্কেটের আকার কমে ৫ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল। পরে এই নিয়ম শিথিল করা হলে তা বেড়ে সম্প্রতি ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
অবৈধ পথে যাচ্ছে ৬০০০ কোটি টাকা
মোবাইল খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দেশে বছরে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি মোবাইল ফোনসেট বিক্রি হয়। বৈধ পথে আসা এবং দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের সঙ্গে এই সংখ্যা যোগ করলে তা আরো বেশি হবে। মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও অবৈধ ফোনের কারণে এই শিল্প হুমকির মুখে। চলমান ডলার সংকটের মধ্যেও প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে অবৈধ ফোনের কারণে। তাই ডলার সাশ্রয়ে অবৈধ ফোনের কারবার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি বলেছে, দেশে প্রতিবছর বিক্রি হওয়া মোবাইল হ্যান্ডসেটের প্রায় ৩৫ শতাংশ অসাধু উপায়ে কর ফাঁকি দিয়ে বাজারে ঢুকছে। ফলে এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
আনকোরা নতুন, অফিশিয়াল, আন-অফিশিয়াল, পুরনো—সব ফোনসেটই বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর শপিং মলগুলোতে। দেশের মার্কেটগুলোতে বৈধ পথে আসা (চ্যানেল প্রডাক্ট) এবং অবৈধ পথে আসা (নন চ্যানেল বা গ্রে প্রডাক্ট) ফোনসেট পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ায় অনেক ক্রেতাই নন চ্যানেল পণ্য কিনতে আগ্রহী হন।
মোবাইল বিক্রির অন্যতম শপিং মল মোতালেব প্লাজায় গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, শেলফে সাজানো কয়েকটি নামি-দামি ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন। বিক্রয়কেন্দ্রের কর্মী জানালেন, আগে মডেল নির্বাচন করতে হবে, তারপর গোডাউন থেকে এনে দেবেন।
রেইন ইলেকট্রনিকসের বিক্রয় প্রতিনিধি ইমরান হোসেন জানান, তাঁদের কাছে স্যামসাং ব্র্যান্ডের ৪ জিবি র্যাম ও ৬৪ জিবি স্টোরেজের এ১৩ মডেলের মোবাইল আছে। যার দাম চাইলেন ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু এর অফিশিয়াল দাম ১৯ হাজার টাকা।
এসব ফোন কোন দেশের, কিভাবে আসে জানতে চাইলে ইমরান বলেন, ‘আমাদের লোক আছে যাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন, ফিরে আসার সময় তাঁরা নিয়ে আসেন। আমরা তাঁদের কাছ থেকে কিনি। ’ এসব ফোনের কোনো ওয়ারেন্টি নেই বলেও জানান তিনি।
ওয়েস্টার্ন মোবাইল গ্যালারির বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আন-অফিশিয়াল ফোন চাইলে জানানো হয়, রিয়েলমি ব্র্যান্ডের ৯প্রো মডেলের ফোনটি আছে। দাম দিতে হবে ২৪ হাজার টাকা, অফিশিয়াল দাম ২৮ হাজার টাকা।
মোতালেব প্লাজায় বন্ধুর জন্য স্মার্টফোন কিনতে এসেছেন সবুজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘এখানে এসেছি কম দামে ফোন কেনার জন্য। দুই-চার হাজার টাকা কম দামে একই ফোন পাওয়া গেলে শোরুম থেকে কেন কিনব। ’ বিক্রয়োত্তর সেবা না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগে শাওমির একটি ফোন নিয়েছিলাম, সেটা সাত দিনের ওয়ারেন্টি দিয়েছিল। দুই বছর হয়ে গেল কিছুই হয়নি। এখনো ভালো আছে। এ জন্য এবার আবার এসেছি। ’