কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে আলোচনা পুরনো। কিন্তু ওপেন এআইয়ের চ্যাটজিপিটি বা জেনারেটিভ এআই প্রকাশ্যে আসার পর এর আলোচনার পরিধি ও ক্ষেত্র পরিবর্তিত হয়েছে। চ্যাটজিপিটির কারণে বৈশ্বিক কর্মসংস্থানে কেমন প্রভাব পড়বে সেটি নিয়েও জরিপ হয়েছে। বলা হচ্ছে এর প্রভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমবে। বিভিন্ন খাতের মধ্যে সাংবাদিকতাও এতে প্রভাবিত হবে বলে জানিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা। তবে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস ও পলিটিক্যাল সায়েন্স (এলএসই) সম্প্রতি একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করছে। যেটিকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জরিপের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে টেকটাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। এতে ৪৬টি দেশের ১০০টির বেশি গণমাধ্যম অংশ নেয়। তথ্যানুযায়ী, ৭৩ শতাংশ গণমাধ্যম মনে করে চ্যাটজিপিটি বা গুগল বার্ডের মতো জেনারেটিভ এআই সাংবাদিকতার জন্য ইতিবাচক ও সম্ভাবনা তৈরিতে সক্ষম।
সাংবাদিক, প্রযুক্তিবিদ, ব্যবস্থাপকসহ ৮৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এরই মধ্যে কর্মক্ষেত্রে ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কোড লেখা, ছবি তৈরি এমনকি সারাংশ তৈরির মতো বিষয় রয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা একটি বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে, ইন্টারভিউ ট্রান্সক্রিপশন বা অডিও থেকে টেক্সটে রূপান্তর ও ফ্যাক্ট চেকিংয়ের মতো পরিশ্রমের কাজ সহজ করবে এআই। এতে সময়ও বাঁচবে এবং সৃজনশীল হওয়ার সুযোগও পাওয়া যাবে।
ফ্রান্সভিত্তিক এক বিশ্লেষক জেনারেটিভ এআইয়ের রূপান্তরিত সম্ভাবনার ওপর জোর দিয়েছেন। তার মতে, বিশাল তথ্যভাণ্ডার নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে এটি সহায়তা করবে। এছাড়া তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে দুই পক্ষের মধ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিতেও সতর্ক হবে। এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে ইতিবাচক ধারণা দিলেও অংশগ্রহণকারীরা সতর্কও করেছেন। বিশেষ করে এর মাধ্যমে যেসব কনটেন্ট তৈরি করা হবে সেগুলোর স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে মানুষ নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা প্রণয়নের কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে ৬০ শতাংশেরও বেশি অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকতার নীতির ওপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক প্রভাব, যথার্থতা, ন্যায্যতা এবং স্বচ্ছতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম যখন এআই ব্যবহারের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে সেখানে দক্ষিণের বিভিন্ন দেশ অনেকে এখনো বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছে। বিশেষ করে ভাষা, অবকাঠামো ও রাজনৈতিক বিধিনিষেধ তাদের জন্য প্রধান অন্তরায়। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, বৈশ্বিকভাবে উত্তরে যাদের অবস্থান তারা এআই ব্যবহারে উন্নত অবকাঠামো ও তথ্য ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে।
৮০ শতাংশের মতে বর্তমানে গণমাধ্যমগুলোয় তথা নিউজ রুমে এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, এআইয়ের সহায়তা কাজের পরিধি বাড়িয়ে নেয়ার এটিই মোক্ষম সময়। জার্নালিজমএআইয়ের পরিচালক ও সহলেখক অধ্যাপক চার্লি ব্যাকেট বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে সাংবাদিকতা বর্তমানে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ও ভয়ংকর প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ’জরিপ বলছে নতুন জেনারেটিভ এআই সঠিক তথ্য ও সংবাদ মাধ্যমের মধ্যে সমন্বয় তৈরিতে প্রধান অন্তরায়। পাশাপাশি এটি সাংবাদিকতাকে আরো কার্যকর, বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠার সুযোগ দেবে।’
জার্নালিজমএআইয়ের আরেক সহলেখক ও প্রধান গবেষক মিরা ইয়াসিন এক নোটে বলেন, ‘জেনারেটিভ এআই দুই পাশ ধারালো তলোয়ারের মতো। তবে আমাদের প্রতিবেদনে এআইয়ের যে বৈষম্য সেটি উঠে এসেছে। বর্তমানে উত্তরে বসবাসকারীরা এআইয়ে পুরো সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু পৃথিবীর দক্ষিণাংশ সব দিক থেকেই বঞ্চিত।’