অভ্যন্তরীণ বাজারে কঠিনতম প্রতিযোগিতার মুখে রয়েছে ভারতের সবক’টি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি। এর মধ্যে টানা ১১টি প্রান্তিক নিম্নমুখী প্রবণতার পর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এক লাফে ২৯ শতাংশ মুনাফা বেড়েছে ভারতী এয়ারটেলের। এছাড়া টানা ১০ প্রান্তিক রাজস্বে নিম্নগামী প্রবণতার পর রাজস্বেও ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে।
গত সোমবার প্রকাশিত এয়ারটেলের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে কোম্পানির সমন্বিত নেট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১০৭ কোটি ২০ লাখ রুপি। ব্যবসায় এককালীন প্রবৃদ্ধির কারণেই এ মুনাফা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অবশ্য ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের বাজারে রিলায়েন্স জিও প্রবেশের পর অন্যান্য অপারেটরের মতো এয়ারটেলও বেশ চাপে পড়ে। পরিস্থিতি এখনো অনুকূল নয়। অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে কোম্পানিটির নেট মুনাফা আগের প্রান্তিকের তুলনায় বড় উল্লম্ফন মনে হলেও বছরওয়ারি হিসেবে এ মুনাফা প্রায় অর্ধেক।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এয়ারটেলের গত মার্চে সমাপ্ত বার্ষিক নেট মুনাফা ৪০৯ কোটি ৫০ লাখ। যেখানে আগের বছর ছিল ১ হাজার ৯৯ কোটি রুপি। এ সময়ের মধ্যে রাজস্বও কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রাজস্ব ৮১ হাজার ৭১ কোটি ৪০ লাখ রুপি, যেখানে আগের বছর ছিল ৮২ হাজার ৮৮৭ কোটি ৬০ লাখ রুপি।
সুনীল মিত্তালের মালিকানাধীন এ টেলিকম কোম্পানি চলতি অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে অবিশ্বাস্যরকম ক্যাপিটাল গেইনও করেছে। আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময়ের নেট ক্যাপিটাল গেইন ২ হাজার ২২ কোটি ১০ লাখ রুপি। এর মধ্যে নেটওয়ার্ট পুনসংযোজন ও হালনাগাদকরণ বাবদ পরিচালন ব্যয় এবং কর (লেভি) পুনর্মূল্যায়ন বাবদ খরচ রয়েছে।
এদিকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মোবাইল অপারেটর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে রাজস্ব আয় করেছে ১০ হাজার ৬৩২ কোটি রুপি, যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজস্বের এ প্রবৃদ্ধি কোম্পাানিটির ঘুরে দাঁড়ানোরই লক্ষণ প্রকাশ করছে।
বলা হচ্ছে, কোম্পানির ‘মিনিমাম চার্জ প্ল্যান’ রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ অফারের কারণে গ্রাহক প্রতি রাজস্ব (এআরপিইউ) এবং ডাটার ব্যবহার বেড়েছে। ভারতে এয়ারটেলের রাজস্বে ৭০ শতাংশ অবদান রেখেছে এ ধরনের বিভিন্ন মোবাইল সেবা।
অবশ্য এর পরও রাজস্ব আয়ে এয়ারটেল এখনো রিলায়েন্স জিওর চেয়ে অনেক নিচেই অবস্থান করছে। চতুর্থ প্রান্তিকে ১১ হাজার ১০৬ কোটি রুপি রাজস্ব আয় করেছে মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন জিও। এপ্রিলের শুরুর দিকে জিওর পক্ষ থেকে জানানো হয়, টানা ষষ্ঠ প্রান্তিকের মতো কোম্পাানির নিট মুনাফা হয়েছে ৮৪০ কোটি রুপি, যা জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। জিওর বর্তমান গ্রাহক ৩০ কোটি ৬৭ লাখ বলে দাবি করা হয়।
এর আগে এয়ারটেল জানায়, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ তাদের সক্রিয় ও রাজস্বে অবদান রাখা গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৮ কোটি ৪২ লাখ। নিষ্ক্রিয় গ্রাহক বাদ দেয়ার পর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে বলে জানায় এয়ারটেল। অপরদিকে আফ্রিকার ১৪টি দেশ, দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মিলিয়ে কোম্পানির মোট গ্রাহক ৩৮ কোটি ৪৭ লাখ বলে দাবি করা হয়।
চতুর্থ প্রান্তিকে আফ্রিকায় প্রবৃদ্ধির কারণে এয়ারটেলের সমন্বিত রাজস্বও ৬ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৬০২ কোটি রুপি। আফ্রিকার ১৪টি দেশে ভয়েস ও ডাটা সার্ভিস থেকে কোম্পানির আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর নেট মুনাফা ও রাজস্বে এ উল্লম্ফনের খবর প্রকাশের আগেই গত সোমবার ভারতী এয়ারটেলের শেয়ার দর বেড়ে যায়। এদিন প্রতিটি শেয়ারের দাম শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৩৩৩ দশমিক ৪ রুপিতে বেচাকেনা হয়েছে।