সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মহানিসংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু ছড়িয়ে পড়া রোধে স্ন্যাপচ্যাট ও টিকটকের সঙ্গে কাজ করছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি মেটা। থ্রাইভ নামে এ উদ্যোগের মাধ্যমে তারা ক্ষতিকর কনটেন্টের ঝুঁকি কমানোর জন্য নজরদারি ও হস্তক্ষেপের কৌশল উন্নত করার লক্ষ্য নিয়েছে।
মেন্টাল হেলথ কোয়ালিশনের সঙ্গে অংশীদারত্বে ‘থ্রাইভ’ নামক প্রোগ্রামটি তৈরি করা হয়েছে। জোটটি বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত, যা এ সমস্যা নিয়ে স্টিগমা (তীব্র নেতিবাচক ধারণা) কমানোর জন্য কাজ করছে। মূলত এ প্রোগ্রাম মানসিক সুস্থতা প্রচার ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সহায়তা প্রদান করার ওপর জোর দিচ্ছে। এনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থ্রাইভ প্রোগ্রামের মাধ্যমে মেটা, স্ন্যাপ ও টিকটক একে অন্যের কাছে আত্মঘাতি প্রবণতা বা স্বহানি সংক্রান্ত কনটেন্টের বিরুদ্ধে তথ্য শেয়ার করতে পারবে। আর যদি কোনো প্লাটফর্মে এমন ক্ষতিকর কনটেন্ট ধরা পড়ে, তবে তারা একে অন্যকে তা জানিয়ে দিতে পারবে। একইভাবে অনুরূপ কোনো কনটেন্ট যদি তাদের নিজস্ব অ্যাপে প্রকাশ হয়, তবে কর্তৃপক্ষ তা নিরীক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে পারবে।
মেটার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, থ্রাইভ একটি ডাটাবেস হিসেবে কাজ করবে। এ প্রোগ্রামে সব অংশগ্রহণকারী কোম্পানির অ্যাকসেস রয়েছে, যা তাদের এসব সমস্যার সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে সহায়তা করবে। এক্ষেত্রে টেক কোয়ালিশনের ল্যানটার্ন প্রোগ্রামের জন্য তৈরি করা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে মেটা। ল্যানটার্ন প্রোগ্রামটি শিশুদের জন্য প্রযুক্তি নিরাপদ করার ওপর মনোযোগ দেয় ও এতে অ্যামাজন, অ্যাপল, গুগল, ডিসকর্ড, ওপেনএআইসহ অন্যান্য বড় কোম্পানিগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। থ্রাইভ প্রোগ্রামের মাধ্যমে শেয়ার করা ডাটা নিরাপদে পরিচালিত করা ও অপ্রত্যাশিত প্রবেশাধিকার বা অপব্যবহার থেকে সুরক্ষিত রাখতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করবে তারা।
মেটার মুখপাত্র বলছেন, ‘যখন স্বহানির বিষয়বস্তু শনাক্ত করা হবে, তখন সেটি মুছে ফেলা হবে ও থ্রাইভ ডাটাবেসে ফ্ল্যাগ করা হবে। অর্থাৎ ওই কনটেন্ট থ্রাইভ সিস্টেমে ‘সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, ফলে অন্য সামাজিক মিডিয়াগুলো তাদের নিজস্ব প্লাটফর্মে একই বা অনুরূপ কনটেন্ট দেখে তারা ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে।’
মেটার গ্লোবাল হেড অব সেফটি অ্যান্টিগোন ডেভিস বলছেন, ‘মেটা আত্মঘাতি প্রবণতা বা স্বহানি সংক্রান্ত কনটেন্টকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ এ ধরনের কনটেন্ট বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়া প্লাটফর্মে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের লক্ষ্য ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষা করে ক্ষতিকর কনটেন্টের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা।’ তিনি জানিয়েছেন, যখন মেটার কোনো প্লাটফর্মে স্বহানি সংক্রান্ত বিষয়বস্তু শনাক্ত করা হবে, তখন এটিকে ‘হ্যাশ’ (#)”দিয়ে চিহ্নিত করা হবে। হ্যাশ কনটেন্টের একটি ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট হিসেবে কাজ করবে। থ্রাইভ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি এ হ্যাশ ব্যবহার করে তাদের প্লাটফর্মে একই কনটেন্ট খুঁজে বের করতে পারবে। যদি কেউ একই কনটেন্ট পায়, তাদের সেটি মুছে ফেলার অনুমতি থাকবে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোয় কিশোর-কিশোরীদের যে কনটেন্ট দেখানো হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করতে মেটা, টিকটক ও স্ন্যাপচ্যাটের কোনো চেষ্টা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্লাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিভাবক ও কমিউনিটিগুলো মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, এসব কনটেন্ট আত্মঘাতি প্রবণতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।