মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবা (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ এর বিরুদ্ধে কাজ করিয়েও পারিশ্রমিক না দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন রোবটিক্স গবেষক এ এস ফারদীন আহমেদ। ‘ফারবট রোবটিক্স’ নামের একটি স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা ফারদীনের দাবি, প্রায় আড়াই বছর একটি প্রকল্পে কাজ করিয়েও তার কোন মূল্য দেয়নি দেশের প্রথম ইউনিকর্ন বিকাশ। দফায় দফায় প্রকল্পের নানান অনুষঙ্গ তৈরি ও উন্নয়ন করেছেন ফারদীন। দীর্ঘদিন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাজ করলেও পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শুধু আশ্বাস পেয়েছেন বলে দাবি এই তরুণ গবেষক ও উদ্যোক্তার। ফারদীনের সাথে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাজের বিষয়টি এক প্রকার স্বীকার করেছে বিকাশ। তবে ‘চুক্তি বা সমঝোতা’ না থাকায় ফারদীনের থেকে রোবট কেনা যায়নি বলে বক্তব্য প্রতিষ্ঠানটির।
দীর্ঘদিন যাবত দেশেই রোবটিক্স বিষয়ে গবেষণা করছেন ফারদীন আহমেদ। ইতোমধ্যে সফলভাবে বেশ কয়েকটি রোবটও তৈরি করেছেন তিনি। তাকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন মূলধারাবার গণমাধ্যমে ফিচারও প্রকাশিত হয়েছে। তেমনই এক সংবাদের সূত্র ধরে বিকাশ তার সাথে যোগাযোগ করে বলে জানিয়েছেন ফারদীন। এর আগে শুক্রবার বিকাশের সাথে নিজের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন ফারদীন। মুহুর্তেই সেটি ভাইরাল হয় এবং নেটিজেনরা বিকাশের এমন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে থাকে।
বিস্তারিত উল্লেখ করে ফারদীন বলেন, ২০২১ সালের শেষদিকে একটি ফিচার দেখে বিকাশ আমার সাথে যোগাযোগ করে। ২০২১ সালের শেষদিকে বিকাশের তিন জনের একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় আমাদের অফিসে আসেন। রোবটের খরচ সহ আরও বেশকিছু তথ্য তাদের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের জন্য একটি রোবট নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন তারা। নমুনা হিসেবে একটা রোবট চায়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাধীনতা টাওয়ারে তাদের প্রধান কার্যালয়ে একটি রোবট নিয়ে দেখাই তাদেরকে। সেখানে বিকাশের চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) আলী ভাইও ছিলেন। তখন তারা একটা কাস্টমাইজেশনের (চাহিদামাফিক পরিবর্তন) কথা বলে। আমার রোবট ব্লুটুথের মাধ্যমে স্মার্টফোনের সাথে যুক্ত হয়ে পরিচালিত হতো। তারা এটা সরাসরি চাইলো। পাশাপাশি গ্রাহকের সাথে হওয়া কথোপথনের উপাত্ত সংরক্ষণের (ডাটা স্টোর) সুবিধা চাইলো। প্রায় ৬ মাস কাজ করে সেটি করি। এরপর তাদেরকে আপডেট দেখালে আবার পাঁচটি প্রশ্ন সিস্টেমে দিতে বলে। সেটা দেওয়ার পর আরও প্রায় ১০০ প্রশ্ন রোবটে যুক্ত করতে বলে। গ্রাহকরা এসব প্রশ্ন করবে রোবটকে, হিউম্যানয়েড রোবট হিসেবে সেগুলোর উত্তর দেবে রোবট।
দফায় দফায় কাজ করিয়ে নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে ফারদীন বলেন, প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস কাজ করে সিস্টেমে তাদের নতুন প্রশ্নগুলো যুক্ত করি। একটা অ্যাপ বানাই। এরপর তারা ইউজার ইন্টারফেজ এ দুটো আলাদা ডিসপ্লে চায়। একটিতে এডমিন মুডে নিজেদের নানান বার্তা দেখাতে পারবে বিকাশ। আর অন্যটি ইউজার মুড। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আবার তাদের অফিসে গিয়ে রোবটটা দেখালাম। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তারা দেখতে আসে আমার অফিসে। তখন বাজেট নিয়ে বিকাশের অফিসে যেতে বলে। সময়ের ভিত্তিতে তিনটি ভিন্ন বাজেট তাদেরকে দেই। এতকিছু করার পর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিকাশের সাপ্লাই চেইন বিভাগ থেকে জানানো হয় যে, তারা আমাদেরকে টাকা দিবে কিনা সেটা নিশ্চিত নয়। তখন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। যদিও বিকাশের যেসব কর্মকর্তাদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল শুরু থেকে, তারা বারবার আশ্বস্ত করছিলেন যে, আমি টাকা পাবো। বিকাশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অবগত আছেন বলেও আমাকে আশ্বস্ত করেন তারা। তবে ২০২৪ সালের মে মাস থেকে তারা আর আমার সাথে যোগাযোগ করে না। সর্বশেষ গত সপ্তাহেও তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোন সাড়া পায়নি।
ফারদীনের এই ঘটনাটি ইতোমধ্যে ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুক থেকে তার পোস্টটি সাড়ে সাত হাজার বারের বেশি শেয়ার করা হয়েছে। নেটিজেনদের এমন প্রতিক্রিয়ায় এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছে বিকাশ। নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে বিকাশ জানায় যে, বিস্তারিত ব্যাখ্যা: বিকাশ ২০২২ সালে ফারদীনের সাথে তার রোবট প্রকল্প সম্পর্কে সম্ভাব্য যৌথভাবে কাজ জন্য যোগাযোগ করেছিল। প্রাথমিক আলোচনা পরবর্তী সময়ে বিকাশ তার তৈরি রোবটের কিছু উন্নতি করার পরামর্শ দেয়। একইসাথে, বিকাশ এর সরবরাহকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করা হয় যেন ভবিষ্যতে দাপ্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। তবে, তিনি এখনো বিকাশের সাথে তালিকাভুক্ত হতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রদান করেননি। তিনি ২০২৪ সালের মার্চে বিকাশের চাওয়া প্রকল্পের বাজেটও প্রদান করেননি। এখন পর্যন্ত বিকাশ এবং ফারদীনের মধ্যে কোনও রোবট কেনার জন্য অফিসিয়াল চুক্তি বা সমঝোতা হয়নি। বিকাশ তার সাথে কোনও দাপ্তরিক সংশ্লিষ্টতা শুরু না হওয়া পর্যন্ত কোনো ক্রয় সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতি বা নিশ্চয়তা দেয়নি। একটি কমপ্লায়েন্ট কোম্পানি হিসেবে বিকাশ ফারদীনকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য রাখে না। তবে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাকে কোনো সহায়তা প্রদান করতে পারছি না।
যদিও বিকাশের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন ফারদীন। ফারদীন জানান, বিকাশে তালিকাভুক্ত হতে প্রয়োজনীয় আটটি নথির মধ্যে সাতটিই তিনি দিয়েছেন। ফারদীন বলেন, আটটির মধ্যে সাতটি ডকুমেন্ট তাদেরকে দিয়েছি। মেইলে দিয়েছি, আমার কাছে প্রমাণ আছে। বাকি নথির বিষয়টি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সুরাহা করা হবে বলে তারা জানিয়েছিল। আর তাদের সাথে হয়তো কোন চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করিনি। কিন্তু আড়াই বছর নিরলস কাজ করেছি এই রোবটের জন্য। আমার সাথে আমার টিমের অন্যান্য সদস্যরাও আছে। আমরা একটা উঠতি স্টার্টআপ। একটি বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আশ্বাসে কাজ করে গেছি। তারা তো অস্বীকার করেনি যে, তারা আমার সাথে কাজ করেছে। তাহলে আড়াই বছরে আমি এই মূল্য পেলাম?