সারা বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট ফেসবুক। এখানে মানুষ দিন রাত সময় কাটায় নিজেদের প্রফাইলে, পেজে এবং গ্রুপে। বাংলাদেশেও ফেসবুক অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং শক্তিশালি ওয়েবসাইট এবং প্রভাবের দিক থেকে চিন্তা করলে এর ধারে কাছে মনে হয় অন্য কেউ হয়। তবে এদেশে অনেকেই মনে করেন যে ফেসবুক হল সময় নষ্ট করার জায়গা এবং বেশ নেতিবাচক ধারনা রয়েছে অনেকের মধ্যে। কিন্তু আমরা কিছু লোক চেষ্টা করছি ফেসবুককে ভাল কাজে লাগাতে, বিশেষ করে লেখাপড়ার কাজে।
এই ধরনের কথা শুনে পরিচিত অনেকেই আমার দিকে বেশ বাঁকা চোখে তাকায়। কারন পরিক্ষার সময়ে ফেসবুক বন্ধ রাখার দাবিও উঠে এদেশে কোন কোন মহল থেকে। প্রশ্ন ফাস, পরিক্ষার সময় পড়ালেখা ফেলে ফেসবুকে সময় নষ্ট- এসব চিন্তা থেকেই এমন দাবি উঠে এবং এমন চিন্তা অনেকেই করেন। তাছাড়া অনেক অভিভাবক, শিক্ষক এবং এমনকি অনেক শিক্ষার্থী নিজেরাও মনে করেন যে ফেসবুক একটি বাজে নেশা এবং এটি লেখাপড়ার জন্য ক্ষতিকারক।
এত কিছুর পরেও আমি ব্যক্তিগত ভাবে ফেসবুককে লেখাপড়ার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বানাতে কেন আগ্রহী বা এজন্য দিন রাত কেন কষ্ট করছি? এর খুব স্পস্ট কারন হল আমরা ইন্টারনেট গ্রহন করতে অনেক দেরি করেছি। ১৯৮৮ সালের দিকেই ইন্টারনেট আসার সম্ভাবনা ছিল তাও ফাইবার অপটিক দিয়ে। কিন্তু আমাদের অনেকেই এমন যুক্তি দিয়েছেন যে ইন্টারনেট আসলে দেশের সব তথ্য পাচার হয়ে যাবে। ফাইবার অপটিকে আমরা যুক্ত হই ২০০৬ সালের দিকে।
অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে দিলে দেশের সব টাকা পাচার হয়ে যাবে এমন কথাও অনেকের থেকে শুনেছি আমরা। এই ধরনের চিন্তা থেকে দেশে অনলাইনে লেনদেন অবৈধ ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ই-কমার্স এর সত্যিকারের যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। সব কিছুতেই এভাবে আমরা ১০-২০ বছর পিছিয়ে গেছি শুধুমাত্র প্রযুক্তিকে খারাপ হিসেবে বিবেচনা করে।
এমনি করে ফেসবুকে লেখাপড়া করা সম্ভব তাও অনেকে মানেন না। সার্চ ইংলিশ গ্রুপের নিয়মিত মেম্বারদের অনেকেই দিন রাত গ্রুপে সময় দিয়ে ভয় আর লজ্জা থেকে মুক্ত হয়ে ইংরেজি প্র্যাকটিস করছেন একদম বিনা মূল্যে। কিন্তু অনেকের অভিভাবক এটিকে বেশ খারাপ চোখে দেখেন এবং তাদের বন্ধু বান্ধবীরাও উপহাস করে, বাজে কথা বলে।
ফেসবুকে সার্চ ইংলিশের মত বেশ কিছু বাংলাদেশী গ্রুপ আছে, পেইজ আছে যেখানে লেখাপড়া করা যায় এবং মানুষ করছে। ফেসবুকের কিছু সুবিধা আছে এদিকে। প্রথমত বাংলাদেশে কয়েক কোটি লোকের ফেসবুক আইডি আছে। তাই নতুন করে আর তাদের এদিকে আনতে হবে না। তারা ইতিমধ্যেই ফেসবুকের ভেতর আছে এবং ফেসবুক ব্যবহার করছে। তাই নতুন করে টেকনিক্যাল কিছু শেখাতে হবে না।
তাছাড়া ফেসবুক ব্যবহার করতে টাকা লাগে না। এমনকি মোবাইল ফোনের ডাটা না কিনেও একদম বিনামূল্যে তা ব্যবহার করা যায় (অবশ্য ছবি ও ভিডিও দেখা যায় না)। গ্রামের দিকে ইন্টারনেটের গতি তেমন বেশি না এবং তাতেও ফেসবুক ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা হয় না।
মূলত এসব কারনে এই সোশ্যাল মিডিয়া লেখাপড়ার কাজে ব্যবহার করা যায়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে বাংলা আর ইংরেজি ভাষার বেসিক গড়ে তুলতে ফেসবুক আসলেই খুব ভাল কাজ করে। আমরা এমনিতেই ঘন্টার পর ঘণ্টা এদিকে সময় দিচ্ছি। সেই সময় হয়তো আমরা ভাইরাল টপিক নিয়ে, ট্রল করে নষ্ট করছি। তাই যে সময়টা আমরা নষ্ট করছি সে সময়টা যদি একটু লেখাপড়ার চর্চার দিকে দেই তাহলে খুব ভাল কিছু হবে কোন সন্দেহ নেই।
এখন যা দরকার তাহল ফেসবুক যে লেখাপড়ার কাজে ব্যবহার করা যায় সেই আইডিয়াকে প্রচার করা এবং মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। আজ থেকে ৫ বছর আগে মানে ২০১৪ সালে ই-কমার্স নিয়ে এমন একটি অবস্থা বিরাজ করছিল। অনলাইনে ব্যবসা করা সম্ভব তা অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইতেন না। না দেখে মানুষ কিনবে না এমন কথা অনেকেই বলতেন। তাছাড়া কিছু প্রতারনা ও কাঙ্ক্ষিত মানের পন্য না পাবার গল্প গুলো মিডিয়াতে অনেক বেশি ভাইরাল হত এবং ফলে অনেকেই মানতে চাইতেন না যে এদেশে ই-কমার্স আসলেই কোন দিন জনপ্রিয় হবে। ৫ বছরের মধ্যে সব বদলে গেছে।
ঠিক তেমনি ফেসবুকের মাধ্যমে লেখাপড়া করা সম্ভব শুধু না এটি প্রতিষ্ঠিত হতে হয়তো আর ২-৩ বছরের বেশি সময় লাগবে না। দরকার তরুণদের এগিয়ে আসা এবং এদিকে সময় দেয়া, অভিভাবকদের এটুকু বুঝার চেষ্টা করতে হবে যে অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ হয় না। ফেসবুকে যদি মানুষ নেশার মত সময় নষ্ট করতে পারে তাহলে ভাল কাজেও আসক্ত হতে পারে, শিক্ষকদের বুঝতে হবে যে ফেসবুকে যদি তাদের ছাত্ররা প্র্যাকটিস করে তাহলে ছাত্ররা লেখাপড়াতে আরো ভাল করবে। মিডিয়ার সাপোর্ট খুব দরকার আর দরকার ইউনিভার্সিটি গুলোর এগিয়ে যাওয়া।
উন্নত বিশ্বে অনলাইনে লেখাপড়া এখন প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয়। বাংলাদেশে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। এখনই সময় এদিকে চেষ্টা করার।
একটি প্রশ্ন উঠতে পারে- অনলাইন এডুকেশন বা ই-লার্নিং এর কথা না বলে ফেসবুকে লেখাপড়ার কথা কেন বলছি? এর কারন হল বাংলাদেশে ফেসবুকেই থাকে বেশির ভাগ তরুন তরুণী। তাই তাদের আগ্রহী করে তুলতে হলে ফেসবুক সবচেয়ে ভাল জায়গা।
রাজিব আহমেদ, প্রতিষ্ঠাতা সার্চ ইংলিশ, সাবেক প্রেসিডেন্ট ই-ক্যাব