বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত একদিকে যেমন ব্যাপক উত্থান দেখেছে, অন্যদিকে বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খাতের ভবিষ্যৎ মূলত নির্ভর করছে তিনটি মূল বিষয়ের উপর—আইনি কাঠামো, গ্রাহকের আস্থা এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
প্রফেসর ড. কামরুল হাসান (অর্থনীতিবিদ ও প্রযুক্তি বিশ্লেষক):
“বাংলাদেশে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সরকারের নীতিগত সমর্থনের উপর নির্ভর করছে। যদি শক্তিশালী ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম এবং গ্রাহকের আস্থার পুনর্নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া না হয়, তবে এই খাত স্থিতিশীলতা হারাতে পারে। তবে নতুন ব্যবসায়িক মডেল এবং গ্রামীণ অঞ্চলে বিক্রয় প্ল্যাটফর্মের বিস্তার, নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে।”
মো. ফয়সাল আহমেদ (টেকনোলজি বিশেষজ্ঞ):
“ই-কমার্স এখন একটি বৈশ্বিক প্রবণতা, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বৈশ্বিক সংকট এবং অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার কারণে গ্রাহকরা ভয় পাচ্ছে। তবে, একটি শক্তিশালী আইনগত কাঠামো এবং ট্রান্সপারেন্ট কার্যক্রম ই-কমার্সকে সুদৃঢ় করবে। ডিজিটাল ওয়ালেট সিস্টেম এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি এর ভবিষ্যত উন্নতির সম্ভাবনা উন্মোচিত করছে।”
রাশেদা পারভিন (ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও প্ল্যাটফর্ম মালিক):
“আমরা যারা ছোট উদ্যোক্তা বা স্টার্টআপ, তাদের জন্য বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতটি এখনও অনেক সুযোগ নিয়ে এসেছে। যদিও বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর কিছু সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, কিন্তু সামাজিক মিডিয়া ও গ্রামীণ এলাকায় অনলাইন ব্যবসা তীব্র গতিতে বেড়ে যাচ্ছে। আমার মতে, আগামী কয়েক বছরে ছোট উদ্যোগগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে ই-কমার্স খাতকে নেতৃত্ব দিতে পারে।”
সোফি রহমান (আইটি বিশেষজ্ঞ):
“এখনকার বাংলাদেশে ই-কমার্সে সাইবার নিরাপত্তা ও গ্রাহক সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্য ফাঁস এবং অনলাইনে প্রতারণার ঘটনা যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে ই-কমার্সের প্রতি জনগণের আস্থা হারানো নিশ্চিত। তবে, ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ে এর সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে।”
ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে সম্ভাবনা:
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ই-কমার্স খাতকে আরো শক্তিশালী করবে। ডিজিটাল ওয়ালেট সিস্টেম, অটোমেটেড ডেলিভারি সিস্টেম এবং এআই সাপোর্টেড গ্রাহক সেবা সেগুলি নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসবে।
তবে, ভবিষ্যতের দিকে তাকালে, বিশেষজ্ঞরা বলেন, ই-কমার্স খাতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল গ্রাহক আস্থা, এবং তা তৈরি করতে হলে স্বচ্ছতা, সঠিক আইনগত পদক্ষেপ এবং বিক্রেতাদের পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
সম্ভাবনাময় দিক:
গ্রামীণ অঞ্চলে ই-কমার্স বিস্তার: শহরের বাইরে গ্রামীণ এলাকাগুলিতে এখনো যথেষ্ট অনলাইনে কেনাকাটা করার সুযোগ তৈরি হয়নি। এখানেও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
নতুন ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম: বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম গ্রাহকের মধ্যে আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে।
বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সেগমেন্টেশন: বিশেষভাবে ডিজাইন করা প্ল্যাটফর্মগুলো যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লাইফস্টাইল, ফ্যাশন—ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।