সচিবালয়ে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা ধরে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন গ্রামীণফোনের সাবেক ও ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সোমবার (১৯ মে ২০২৫) পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী দুপুর ১২টা থেকে ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এবং অতিরিক্ত সচিব (শ্রম) ফাহমিদা আখতার উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে গ্রামীণেফান ৫% বিলম্ব বেকয়া আদায় ঐক্য পরিষদ আহ্বায়ক আবু সাদাত মোঃ শোয়েবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন এস. এম. কামরুল হাসান, আদিবা জেরিন চৌধুরী, আজহারুল ইসলাম ও মোঃ সাইদুর রহমান।
বৈঠক সূত্রে প্রকাশ, দ্বি-পাক্ষিক এই বৈঠকে ৪০ মিনিটের মতো মৌলিক আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত সচিবকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মীদের দাবিকৃত ৫% বিলম্ব বকেয়া পাওনার বিষয়টি সমাধানে ত্রিপক্ষীয় একটি বৈঠকের নির্দেশনা দিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা। সূত্রমতে, কোরবানীর ঈদের পরেই হবে এই বৈঠক।
এর আগে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষাভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে গ্রামীণফোনের সাবেক অর্ধশত কর্মী। সমাবেশে ‘জবাব দাও গ্রামীণফোন!, অধিকার লুণ্ঠন, ছাঁটাই, নির্যাতনের জবাব চাই!,
অবৈধ ছাঁটাই বন্ধ কর!, ৫% জরিমানা পাওনা এখনই পরিশোধ কর!, মিথ্যা মামলার অভিশাপ থেকে মুক্ত কর!, টেলিনরের নীরবতা ভাঙো — আমরা রাস্তায়! ইত্যাদি ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষেভ প্রদর্শন করে তারা।
দুপুরের বৈঠক বিষয়ে জানতে চাইলে আবু সাদাত মোঃ শোয়েব জানান, বৈঠকে গ্রামীণফোন ও এর মূল অংশীদার টেলিনরের বিরুদ্ধে শ্রম আইন সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে—বিশেষত ২০১০-২০১২ সালের ৫% বকেয়া জরিমানা এখনও পরিশোধ না করা, অতীতের কিছু গণছাঁটাই, এবং দীর্ঘদিন ধরে চলমান কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতার উল্লেখ করে গ্রামীণফোনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়।
তিনি বলেন, এসব বিষয় বহু সাবেক কর্মীর জন্য আর্থিক ও মানবিক সংকট তৈরি করেছে—এমন বাস্তবতাও আমরা তুলে ধরি। এছাড়া আমরা অবহিত করি যে, সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপন (SRO No. ৩৩৬- আইন/২০১০) কার্যকর হওয়ার পরও এই অর্থ এখনো পরিশোধ করা হয়নি। যদিও সংশ্লিষ্ট কোম্পানি একটি রিট মামলা দায়ের করেছিল, তারা ৬ মার্চ ২০২৩ তারিখে সেই রিট প্রত্যাহার করে নেয়, যা আইনানুসারে এক মাসের মধ্যে গ্রামীণফোন শ্রমিকদের পাওনা দিতে বাধ্য।
তারপরও অর্থ পরিশোধ না হওয়ায় উপদেষ্টার সক্রিয় হস্তক্ষেপ কামানা করেন গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মীদের এই প্রতিনিধি দলটি।
দলের অপর সদস্য আদিবা জেরিন বলেন,গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ প্রাক্তন শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের যে তান্ডব লীলা- হামলা, মামলা, জেল, জুলুম বিষয়ে তুলে ধরলে উপদেষ্টা বলেন, আমি আপনাদের সব বিষয় জানি, আপনাদের নিউজ, ভিডিও আমি দেখি; বলেই তিনি বলেন “এসব দেখে তো আমি ঠিকমত ঘুমাতে পারি না”।
জানাগেছে, শ্রমিকদের সমস্যার সমাধানে সরকার শিগগিরই একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করবে। যেখানে সরকার, গ্রামীণফোন ও প্রাক্তন কর্মীদের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
এরপর বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর আবদেলুহাব সাইদানির সঙ্গে সাক্ষাতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন সহজিকরণ এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বর্তমান সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.)।