চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) মধ্যেই বিশ্বের বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হওয়ার লক্ষ্য ছিল হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেডের। কিন্তু চলতি বছরের মধ্যে চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সে লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। গতকাল প্রতিষ্ঠানটির এক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী এমনটা জানিয়েছেন।
হুয়াওয়ে কনজিউমার বিজনেস গ্রুপের চিপ স্ট্র্যাটেজি অফিসার শাও ইয়াং বলেন, ‘চলতি বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের মধ্যে আমরা শীর্ষস্থানে চলে যেতাম। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা মনে করছি পূর্বঘোষিত সময়ে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। অর্থাৎ এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের আরো কিছুটা সময় লাগবে।’ কিন্তু কেন ঘোষিত সময়ে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি এ কর্মকর্তা।
বিশ্বের বৃহৎ টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ে। বাজারে গ্রাহক চাহিদার আলোকে ডিজাইন এবং প্রযুক্তি সংবলিত স্মার্টফোন সরবরাহের মাধ্যমে দারুণ সাড়া ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে আইফোনের মতো জনপ্রিয় স্মার্টফোন নির্মাতা অ্যাপলকে পেছনে ফেলে বৈশ্বিক বাজারের দ্বিতীয় বৃহৎ ডিভাইস নির্মাতার তকমাটি দখলে নিতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। ডিভাইস সরবরাহে অ্যাপলকে পেছনে ফেলার পরপরই স্যামসাংকে হটিয়ে বিশ্বের বৃহৎ ফোন নির্মাতার আসনটিও দখলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল হুয়াওয়ে। চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিককে এ লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা ধরা হয়েছিল।
সাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত সিইএস এশিয়া টেকনোলজি শোতে শাও ইয়াং জানান, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে হুয়াওয়ে এ মুহূর্তে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করছে।
গত মাসে হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। হুয়াওয়ের পণ্যে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকার অভিযোগে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমতি ব্যতীত দেশটির কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার কিংবা সেমিকন্ডাক্টর পণ্য ক্রয় করতে পারবে না হুয়াওয়ে। অর্থাৎ এর ফলে নিজেদের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং স্মার্টফোন তৈরিতে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার পণ্য ব্যবহার করতে পারবে না হুয়াওয়ে। নিষেধাজ্ঞা মেনে বেশ কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসায় সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। তবে নিষেধাজ্ঞা ৯০ দিনের জন্য শিথিল করা হলে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা কার্যক্রম শুরু করে।
হুয়াওয়ে গত জানুয়ারিতে জানিয়েছিল, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ছাড়াই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্মার্টফোন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তকমা দখলে নেবে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) হুয়াওয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ছিল। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে এখন হুয়াওয়ের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং ইলেকট্রনিকস কোম্পানি লিমিটেড।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে চলতি বছর হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রি এক-চতুর্থাংশ কমে যেতে পারে। অর্থাৎ ঘোষিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়িত হলে চলতি বছর প্রতিষ্ঠানটির স্মার্টফোন সরবরাহ ৪ থেকে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আগামী ছয় মাসের মধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে হুয়াওয়ের সরবরাহে উল্লেখযোগ্য টান পড়তে পারে। তবে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন নিয়েই এখনো অনেকে সন্দিহান। যে কারণে আগামী ছয় মাসে হুয়াওয়ের সরবরাহ হ্রাস নিয়ে সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস দিতে চান না।