জাপানের ‘হামামাতশু’ শহরের একটি মধ্যবিত্ত শহরের ১৯০৬ সালের ১৭ই নভেম্বর জন্ম হয় ‘স চিরু হোন্ডা’র। ১৭ বছর বয়সে তিনি একটি অটোমোবাইল গেরেজে কাজ শুরু করেন। সেখানকার একটি অব্যাবহৃত গাড়িকে তিনি রেসিং গাড়িতে রূপান্তরিত করে ফেলেন। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে সেই রেসিং গাড়িটি একটি রেসিং কম্পেটিশনও জিতে যায়। সেই গেরেজের মালিক বুঝে যায় যে ‘স চিরু হোন্ডা’র রয়েছে অনেক ট্যালেন্ট। ১৯৩৭ সালে জাপানের ‘টোকাইশিকি’তে ‘স চিরু হোন্ডা’ একটি ‘পিস্টন’ তৈরীর ফ্যাক্টরী দিয়ে দেন। যে কারনে পরের বছরই ‘টয়োটা’র কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে যান তিনি। কিন্তু পরে সেই অর্ডার ক্যান্সেল হয়ে যায়। কারন, ‘টয়োটা’ যে ধরনের কোয়ালিটি চাচ্ছিলো ‘স চিরু হোন্ডা’ সেরকম দিতে পারেনি। এরপর তিনি জাপানের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে ভর্তি হয়ে যান। কিন্তু, সেখানে গ্রাজুয়েশন শেষ না করেই তিনি পুরো জাপান খুজে বেড়ান শুধুমাত্র ‘টয়োটা’ কোন ধরনের পিস্টন চায় সেটার জন্য। টানা ২ বছর ঘোরাঘুরির পর ১৯৪১ সালে ‘স চিরু হোন্ডা’ সেই ধরনের একটি ফ্যাক্টরী দিতে সক্ষম হয়, যেখানে ‘টয়োটা’ গ্রহন করবে এরকম পিস্টন তৈরী সম্ভব। ১৯৪৩ সালের শেষ দিকে এসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চরম আকার ধারন করে। পরের বছর আমেরিকার নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বোমার আঘাতে জাপানের ‘টোকাইশিকি’তে অবস্থিত ‘স চিরু হোন্ডা’র একটি প্লান্ট পুরো ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৪৫ সালের ১৩ই জানুয়ারী একটি মারাত্মক ঘূর্নিঝড়ের মাধ্যমে ‘স চিরু হোন্ডা’র দ্বিতীয় প্লান্টটিও ভেঙে যায়। তবে এর অবশিষ্ট কিছু মালামাল ৪,৫০,০০০ ইয়েনে সে ‘টয়োটা’র কাছে বিক্রি করে দেয়। এই টাকা দিয়ে ১৯৪৬ সালে তিনি ‘হোন্ডা ট্যাকটিকাল ইন্সটিটিউট রিসার্চ’ স্থাপন করেন। ১৯৪৮ সালে সে প্রথমবারের মতো একটি ইঞ্জিনচালিত এ টাইপ বাইক তৈরী করে। এটির নাম ছিলো ‘বাটা বাটা’। সেই সময় ‘স চিরু হোন্ডা’ রিসার্চ করতে থাকেন কিভাবে আরও ভালো মানের বাইক তৈরী করা যায়।
১৯৪৯ সালে ‘স চিরু হোন্ডা’ একটি ডি টাইপ বাইক নিয়ে আসে বাজারে। যেটি মার্কেটে বেশ জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করেছিলো। এর কারনে ‘স চিরু হোন্ডা’ দ্রুতই লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন। ১৯৫০ সালে সেই বাইকটিকেই কিছুটা আপগ্রেড করে ‘স চিরু হোন্ডা’ একটি ‘রেসিং বাইকেব পরিনত করেন। যে বাইকটি সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত বড় ধরনের রেসগুলো খুব দ্রুতই জিতে যায়।
১৯৫৮ সালে ‘স চিরু হোন্ডা’ তৈরী করে ৫০সিসি যুক্ত বাইক। যেটি সারা বিশ্বে মটরসাইকেলের ধারনাই বদলে দিয়েছিলো। যেটি জনপ্রিয়তা পেতে থাকে আকাশছোঁয়া। পরবর্তী বছরের মধ্যেই ‘স চিরু হোন্ডা’র তৈরী বাইকগুলো জাপানে’র ৫০% বাইক মার্কেট দখলে নিয়ে নেয়।
১৯৫৯ সালে আমেরিকাতে ‘স চিরু হোন্ডা’ প্রথমবারের মতো বাইক প্লান্টস স্থাপন করে। যেটিও দুই বছরের মধ্যেই সেখানের মার্কেটগুলোও দখল করে নেয়। ১৯৬৩ সালে ‘স চিরু হোন্ডা’ তার এই বাইকগুলোর ব্যাপারে চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন নিয়ে আসে। সেই বছরই ‘হোন্ডা’ বাজারে একটি ‘মিনি পিকআপ’ নিয়ে আসে। যেটি ছিলো ৩৫৬সিসি যুক্ত একটি গাড়ি। তবে এটি দিয়ে খুন বেশী লাভ হয় না ‘হোন্ডা’র। তবে অন্যদিক দিয়ে তারা তাদের মটরসাইকেলের উৎপাদন বাড়াতে শুরু করেছিলো। ১৯৬৭ সালে ‘স চিরু হোন্ডা’ ‘সিভিসিসি’ নামক একটি ইঞ্জিন আবিষ্কার করতে করতে সক্ষম হন। ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো এই ইঞ্জিনের গাড়ি বাজারজাত করতে সক্ষম হয় ‘হোন্ডা’। এর মাধ্যমে ‘হোন্ডা’র লাভ আরও বাড়তে শুরু করে।
১৯৮০ সালে ‘হোন্ডা’ প্রথমবারের মতো আমেরিকায় গাড়ির প্লান্টস সেটআপ করে।
২০০৬ সালে ‘হোন্ডা’ প্রথম নিয়ে আসে গ্যাস টাইপ গাড়ি। বর্তমানে ‘হোন্ডা’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘কনভাস্টন ইঞ্জিন’ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম অটো প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানও ‘হোন্ডা’।
১৯৮৫ সাল থেকে ‘হোন্ডা’ রোবট তৈরী নিয়েও কাজ করে আসছে। এছাড়াও এদের রয়েছে ‘অ্যারোস্পেস’।
‘হোন্ডা’ পৃথিবীর একমাত্র কোম্পানি যারা পৃথিবীতে যতগুলো রেস রয়েছে তার সবগুলোর শিরোপা জিতেছে। ‘হোন্ডা’ প্রথম কোনো কোম্পানি যারা গাড়িতে প্রথম ‘জিপিএস নেভিগেশন’ সিস্টেম নিয়ে এসেছিলো।
‘হোন্ডা’র তৈরী গাড়ি এবং বাইক সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়। আমাদের দেশের বাজারেও ‘হোন্ডা’ বেশ জনপ্রিয়। আশা করা যায় ‘হোন্ডা’র এই জনপ্রিয়তা আস্তে আস্তে আরও বাড়বে।