দেশে অ্যাপের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং চালু হওয়ার পর তা দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ ছিল নিরাপত্তা। এই পদ্ধতিতে যাত্রী ও মোটরসাইকেলচালক—উভয়ের ব্যক্তিগত তথ্য ও তাৎক্ষণিক অবস্থানের তথ্য অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকে। রমজানে যাত্রী নিরাপত্তা দিতে আইন ভাঙলেই মামলা দিচ্ছে পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ মামলাই দেওয়া হচ্ছে অ্যাপবিহীন রাইডশেয়ারিং-এর জন্য। যাকে সবাই খ্যাপ বলে চিনে, এবং এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। অ্যাপবিহীন রাইডশেয়ারিং ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিরাপদ। এতে যাত্রীদের বা রাইডার কেউই জানে না কার বাইকে উঠছেন বা কাকে বাইকে নিচ্ছেন। কারও কাছেই রাইডটি সম্পর্কিত কোন তথ্য থাকেনা। তাই থাকেনা নিরাপত্তা নিয়ে কোন বালাই।
রাইডশেয়ারিং কোম্পানীর নীতিমালার বাইরে থাকার জন্য এই অবৈধ রাইডশেয়ারিংয়ের আশ্রয় নেয় কিছু বাইকার। তাই সাধারণ জনগণকে এসকল ঝামেলা থেকে রক্ষা করতে পুলিশ এবার মামলা দিচ্ছে রাইডশেয়ারিং সার্টিফিকেট ছাড়া রাইডারদের। এছাড়াও, ফুটপাথে বাইক চালনা, যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং, সিগনাল অমান্য করা, লেইন না মানা, হেলমেট ব্যবহার না করা, ইত্যাদির জন্যও মামলা দিচ্ছে পুলিশ।
পান্থপথ মোড়ে যাত্রীর আশায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মোটরসাইকেল চালক আরিফ হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, রমজানে রাস্তায় বের হওয়া নিয়ে বেশ বিব্রত এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। আমাদের আয়ের একটি বড় অংশ এখন চলে যাচ্ছে জরিমানা দিয়ে। এভাবে জরিমানা দিতে থাকলে দিনশেষে হাতে কিছুই থাকছে না তাই ভাবছি অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ারিং-এ যুক্ত হব ।
গুলশান ১ থেকে যাত্রী নিয়ে কাওরান বাজার আসলেন আশরাফ আলী, অ্যাপে না খ্যাপে আসলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ারিং পাঠাও এর সাথে যুক্ত আছি ৩ বছর। আমি আমার নিজের নিরাপ্তার কথা চিন্তা করে খ্যাপে যায়না। আর রমজান মাসে রাস্তায় পুলিশের চেকিং-এর মধ্যে কয়েকবার পড়তে হয়েছে , রাইড শেয়ারিং সার্টিফিকেট এবং অ্যাপ থাকায় কোনপ্রকার জরিমানা দিতে হয়নি।
অন্যদিকে জনগণ এটিকে পুলিশের বেশ ইতিবাচক ভূমিকা বললেও কিছু বাইকারদের দেখা গিয়েছে বেশ অসন্তুষ্ট। তাঁদের সাথে কথা বলে জানা গেলো, তারা এত কড়াকড়ি এই রমজানে আশা করেনি, ছোটখাট ভুলেও মামলা হয়ে যাচ্ছে ১০০০ থেকে ৩০০০ পর্যন্ত। তাই তারা এর সমালোচনা করছেন। তবে সাধারণ জনগণ একে স্বাগতম জানাচ্ছেন, এবং এমন কড়াকড়ি আরও আগে থেকে হওয়া প্রয়োজন ছিলো এবং অ্যাপবিহীন রাইডশেয়ারিয়ের ভোগান্তি থেকে তারা মুক্তি চান বলে মন্তব্য করেছেন। এভাবে আইন প্রয়োগ হলে অদূর ভবিষ্যতে রাস্তাঘাটে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল সম্ভব হবে, অনিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক সমস্যা সমাধান হবে এবং সড়বে নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।
পুলিশ বলছে, অ্যাপ ছাড়া মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারে যাত্রী পরিবহন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএও বলছে, এটি বৈধ নয়। এ নিয়ে অভিযান চালানো হয়। বিষয়টি দুই পক্ষের সমঝোতায় হচ্ছে বলে অপরাধী চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
এ ছাড়া কোনো অসাধু ব্যক্তি বা চক্র যাত্রী সেজে চালককে মেরে মোটরসাইকেল নিয়ে সটকে পড়তে পারে। অনেক সময় চালক কোনো যাত্রীকে তুলে সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে তাঁর সর্বস্ব কেড়ে নিতে পারে। সে ধরনের ঘটনা ঘটলে অপরাধীকে খুঁজে পাওয়া পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে যাত্রী ও চালক—দুই পক্ষেরই সচেতনতা জরুরি। উভয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে অ্যাপ ছাড়া মোটরসাইকেল চলাচল অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।