বাংলাদেশের ফোনের কথা শুনলে শুরুতেই আমাদের বেশিরভাগ মানুষের গা কেমন যেন গুলিয়ে ওঠে। আমরা সহজে আমাদের দেশীয় কম্পানী যেমন সিম্ফনি বা ওয়ালটোনকে পাত্তা দেই না। কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য বিদেশী কম্পানি যেমন, শাওমি বা রিয়ালমি কম দামে যত ভালো ফোন দিতে পারে আমাদের দেশীয় কম্পানি তেমন ভালো ফোন দিতে পারে না। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টা একদম উলটা। এই লেখায় আমরা আলোচনা করব বাংলাদেশে তৈরি এবং ১১ হাজার টাকায় সেরা ফোন নিয়ে।
এই বাজেট ফোন তৈরি করেছে আমাদের দেশীয় কম্পানি সিম্ফনি এবং ফোনের মডেল হচ্ছে Z35। এই ফোনের শুরুতে বাজারমূল্য ১০ হাজার টাকা থাকলেও অনিবার্য কারণে এর মূল্য বর্তমানে প্রায় ১১ টাকা। এই বাজেটে এই ফোন আমাদের যা যা দিচ্ছে সেগুলোর ব্যাপারে জানলে আমাদের চোখ একপ্রকার উলটে যেতে পারে।
১১ হাজার টাকার এই ফোন পাওয়া যাবে দুইটি ভ্যারিয়েন্টে। একটি ৩ গিগাবাইট মেমরি ও ৩২ গিগাবাইট স্টোরেজ এবং আরেকটি ৪ গিগাবাইট মেমরি ও ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজের। সারাদিন ব্যবহারের জন্য এই ফোনে পাবে ৬০০০ mAh ক্যাপাসিটির ব্যাটারি। পেছনে ট্রিপল ক্যামেরা সেটাপ ও সামনে ৮ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা। লক্ষ্যণীয়, কম স্টোরেজের ভ্যারিয়েন্ট বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে যা বাজারের অন্যান্য সকল ফোনকে হার মানাতে সক্ষম এই বাজেটে। আশা করি কিছুটা ধারণা পেয়েছেন, এবারে আমরা এই ফোনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
এই ফোন ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে বের করা হয় এবং এখনো মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে। এই ফোনে আপনি 2G, 3G ও 4G নেটওয়ার্কের সর্বোচ্চ দুইটি সিম ব্যবহার করতে পারবেন। এই ফোন মূলত সাধারণ দৈনন্দিন কাজের জন্য তৈরিকৃত বলে এর সারাদিন ব্যাটারি ব্যাকাপ থাকা অত্যন্ত দরকারি। তাই এখানে দেওয়া হয়েছে ৬০০০ mAh ক্যাপাসিটির লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি। এবং এই বড় ব্যাটারি চার্জ করার জন্য সাথে পাবেন ১০ ওয়াটের চার্জার যা দিয়ে ব্যাটারি ফুল চার্জ করতে সর্বোচ্চ ১.৫ ঘন্টা লাগবে।
প্লাস্টিক বডির এই ফোনের ওজন মাত্র ২০৮ গ্রাম যা প্রথম প্রথম হয়তো ভারী মনে হতে পারে কিন্তু কিছুদিন ব্যবহারেই ঠিক হয়ে যাবে। এই ফোনে মুভি/সিরিজ বা অন্য কোন মিডিয়া উপভোগ করার জন্য দেওয়া হয়েছে বিশাল বর ৬.৮২ ইঞ্চির ডিস্প্লে। তবে ডিস্প্লেটি HD+ 1600×720 রেজুলেশনের একটি এইপিএস প্যানেলের ডিস্প্লে।
এই ফোনের প্রোসেসর হিসেবে আছে MediaTek Helio G35 প্রসেসর। এটি ১২ ন্যানোমিটারের অক্টাকোর প্রোসেসর। এবং এই প্রসেসর কে চালানোর জন্য এখানে আছে এন্ড্রোয়েড ১১ যা মোটামুটি নতুন বলা যায়।
ক্যামেরার কথায় যদি আসি তাহলে অবাক করা বিষয় হলো যে এই ফোনের পেছনে একটি ১৩ মেগাপিক্সেল এর মেইন শুটার, একটা ২ মেগাপিক্সেলের ডেপথ সেন্সর এবং আরেকটা ০.০০৮ মেগাপিক্সেলের সেন্সর আছে। এবং সামনে একটি ৮ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা আছে। ফুল এইচডি রেজুলেশনের ভিডিও রেকর্ডিংসহ, অটো ফোকাস, এলইডি ফ্ল্যাশ, পোর্ট্রেইট মোড, এইচডিআর সহ আরও অনেক সুবিধা পাবেন।
এই ফোন চার্মিং গ্রিন, ফ্যান্টাস্টিক ব্লু্ মডার্ন ব্লু এবং সুপার গ্রিন এই চারটি রঙ এর পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে তৈরি এই বাজেট ফোনের জন্য আপনি সিম্ফনি থেকে ১ বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি পাবেন। তাই আপনার যদি উদ্দেশ্য এমন হয়ে থাকে যে একদম বেসিক কাজ করবেন, হেভি ফটোগ্রাফি বা গেমিং একটাও করবেন না, তাহলে এই ফোন আপনার জন্য এই বাজেটে সেরা ফোন। আমি এই ফোন গত এক বছর হলে ব্যবহার করছি এবং এখনো তেমন কোন সমস্যা খুঁজে পাই নি। এবারের মত এখানেই ইতি টানছি। পরবর্তীতে আমার এই এক বছরের এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে একটু আলোচনা করব। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।