দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনসহ (এফবিসিসিআই) সব বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, সহসভাপতিসহ সব পদে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। নির্বাহী কমিটি বা পর্ষদের মেয়াদ হবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ২৪ মাস। টানা দুবার নির্বাহী কমিটি বা পর্ষদে থাকলে একবার নির্বাচনে বিরতি দিতে হবে। নিয়মটি ভবিষ্যতের পাশাপাশি বিগত সময়ের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
এমন বিধান রেখে সংশোধিত বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ২০২৫-এর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত মঙ্গলবার বিধিমালাটির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, এই বিধিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে। ১৯৬১ সালের বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশ বাতিল করে ২০২২ সালে নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন প্রণয়ন করে সরকার। এ আইনের ভিত্তিতে নতুন বিধিমালা হচ্ছে। বিগত সরকারের সময় বিধিমালার খসড়া করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার সেই খসড়ায় সংযোজন-বিয়োজন করে চূড়ান্ত করেছে।
এফবিসিসিআইয়ে সংস্কার
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয় সংগঠনটির সদস্যদের একাংশ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি পদ থেকে মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেন। পরে ১১ সেপ্টেম্বর ফেডারেশনের পর্ষদ বাতিল করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের সদস্য—এই ব্যানারে যাঁরা পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন, পরে তাঁরাই এফবিসিসিআইয়ের বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ গঠন করেন। তাঁরা গত সেপ্টেম্বরে মনোনীত পরিচালক প্রথা বাতিল, পর্ষদের সদস্যসংখ্যা কমানোসহ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাব দেন। পরে অক্টোবরে বিভিন্ন চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ১২টি সংস্কার প্রস্তাব পাঠান প্রশাসক।
নতুন বিধিমালায় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের আকার ছোট ও মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা কমানো হয়েছে। সর্বশেষ ফেডারেশনের পর্ষদ ছিল ৮০ জনের। তার মধ্যে মনোনীত পরিচালক ছিলেন ৩৪ জন। এখন থেকে পর্ষদের আকার হবে ৪৬ জন। এর মধ্যে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৫ জন করে ১০ জন মনোনীত পরিচালক থাকবেন। এর বাইরে নারী চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ১ জন করে ২ জন মনোনীত পরিচালক পর্ষদে যুক্ত হবেন।
বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর ফেডারেশনের প্রথম নির্বাচনে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে সভাপতি এবং চেম্বার গ্রুপ থেকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্বাচিত হবেন। অন্যদিকে পর্ষদে ১২ জন মনোনীত পরিচালকদের ফেডারেশনের সাধারণ পরিষদের সদস্য হতে হবে। দুই বছরের মেয়াদের জন্য গঠিত সাধারণ পরিষদের প্রত্যেক সদস্যকে এককালীন ২০ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি দিতে হবে।
নির্বাচনে একবার বিরতিতে ‘ক্ষুব্ধ’
টানা দুবার নির্বাহী কমিটি বা পর্ষদে থাকলে একবার বিরতি দিয়ে আবার নির্বাচন করা যাবে। এই নিয়মটি ভবিষ্যতের পাশাপাশি বিগত সময়ের জন্যও প্রযোজ্য হবে। নতুন বিধিমালায় থাকা বিধানটির কারণে এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের অনেক সাবেক ও বর্তমান নেতা পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
নতুন এই বিধানের কারণে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাঁরা বলছেন, কৌশলে কিছু ব্যবসায়ীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতেই একটি গোষ্ঠী তৎপর।
জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ গতকাল বুধবার বলেন, কোনো কালো আইন চলবে না। বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর নিয়মটি কার্যকর হতে হবে। ফেডারেশনসহ অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের সদস্যরা সেটাই চান।
এদিকে ফেডারেশনের সহায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাশেম হায়দার বলেন, ‘আমরা যে সংস্কারগুলো চেয়েছিলাম, তার অধিকাংশই বিধিমালায় চলে এসেছে। এখন পর্ষদ নির্বাচন করা যাবে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল হয়ে যাবে।’ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর একবার বিরতির বিষয়ে তিনি বলেন, নৈতিক কারণেই তো একবার বিরতি দেওয়া দরকার। তাহলে নতুনদের নেতৃত্বে আসার পথ প্রশস্ত হবে।