২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ড দ্বারা দেশের নাগরিকদের আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঘরে বসে পণ্য কেনার সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়, যা দেশের ডিজিটাল শিল্প সম্প্রসারণে কার্যকরী ভূমিকা রেখে চলেছে।
তবে সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু ব্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ডের সুবিধা সীমিতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ।
সংকট থেকে উত্তরণে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীরের নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জনাব আহমেদ জামালের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেসিসের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি (প্রশাসন) জনাব শোয়েব আহমেদ মাসুদ এবং বেসিস ডিজিটাল কর্মাস স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জনাব সৈয়দ কামাল। সংকটাপন্ন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন বেসিস সভাপতি।
ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল শিল্পের সাথে জড়িত আছে বড়ো-ছোটো প্রায় ১০০০ এর মতো এজেন্সি। এছাড়া এই শিল্পের সাথে জড়িত আছে অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার, প্রোডাকশন হাউজ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ছাড়াও আরও অনেকে। এই শিল্পে কর্মরত আছে আনুমানিক ৫০,০০০ হাজার থেকে ৮০,০০০ হাজার এর মতো জনবল যারা ব্যবসায় প্রতিস্থানের জন্য প্রতিনিয়ত তৈরি করে যাচ্ছে অসংখ্য ডিজিটাল কন্টেন্ট এবং প্রদান করছে ডিজিটাল মিডিয়ার বিভিন্ন সার্ভিস (বিজ্ঞাপন বিতরণ, ক্রয়, বিজ্ঞাপনের প্রযুক্তি প্লাটফর্ম, দেশীয় কনটেন্ট প্লাটফমর্ ইত্যাদি)।
প্রতি বছর ২০০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে ফেসবুক এবং গুগলসহ অন্যান্য বিদেশি অনলাইন বিজ্ঞাপনী চ্যানেলে পরিশোধ করা হচ্ছে। এই অর্থের একটা বড় অংশ পরিশোধ করা হয় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ড দ্বারা। এই সমস্ত কার্ডে ট্রাভেল কোটায় বছরে ১২,০০০ ডলার পর্যন্ত খরচের সুবিধা থাকে। বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ছোটো এজেন্সি, ই-কমার্স ও এফ-কমার্স মডেলের অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা ব্যবহার করেই গুগল এবং ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের মূল্য পরিশোধ করে থাকে।
সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু ব্যাংক এই সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ডে ট্রাভেল কোটায় বরাদ্দ ডলার থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং খাতে মূল্য পরিশোধের সুযোগ থাকছে না। ফলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, ফলে দেশে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মতো একটি সম্ভাবনাময় খাতের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে এই পরিস্থিতি সমস্ত ছোটো উদ্যোক্তাদের জীবিকার দায়ে “হুন্ডি” এর মতো অবৈধ প্রক্রিয়া ও বিভিন্ন অসদুপায় অবলম্বন করে আর্থিক লেনদেন পরিচালনায় বাধ্য করতে পারে।
ব্যাংকগুলো দ্বারা গৃহীত এই পদক্ষেপ বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণে কার্যকরী ভূমিকা না রেখে বরং ব্যবসায়িক পরিবেশ নষ্ট করে উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম ব্যাহত করবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের চালিকা শক্তি এই প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসাগুলোকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য করবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
বৈঠকে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবনাসমূহ নিরূপ-
ডিজিটাল মার্কেটিং কাজে ব্যবহারের জন্য বিকল্প সমাধান হিসেবে সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার যেমন মাস্টার কার্ড/ভিসা সম্বলিত বিশেষ নিরবিচ্ছিন্ন কার্ড প্রদান করা যেতে পারে যা শুধুমাত্র অনুমোদিত মিডিয়া চ্যানেলগুলোতে পেমেন্ট পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা যাবে।
বেসিসের অনুমোদনক্রমে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এই বিশেষ কার্ড গ্রহণ করতে পারবেন যা ডিজিটাল মার্কেটিং কাজে বছরে ২৫,০০০ হাজার ডলার পর্যন্ত মূল্য পরিশোধের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
যতদিন একটি বিকল্প ব্যবস্থার প্রচলন না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ড দ্বারা ট্রাভেল কোটায় ডিজিটাল মার্কেটিং খাতে মূল্য পরিশোধের সুবিধাটি সক্রিয় রাখা হোক। আমার প্রত্যাশা, আপনি দেশের ডিজিটাল শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের পথে এই অনিবার্য প্রতিবন্ধকতা এড়াতে একটি বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিবেন, যা দেশের উদীয়মান তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, প্রচলিত নিয়মে ব্যাংক থেকে কার্ডের নির্দিষ্ট মার্চেন্ট কোড-কে ব্লক করে দেয়া সম্ভব যা গ্যাম্বলিং, ফরেক্স ট্রেডিং-এর লেনদেন বন্ধ করতে সাহায্য করবে। এ জন্যে সব আন্তর্জাতিক ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড ট্রান্সেকশন বন্ধ করার প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর বেসিসের প্রস্তাবনাসমূহ মনোযোগ দিয়ে শোনেন। আগামী সপ্তাহে সকল ব্যাংকের সাথে সভার আয়োজন করে প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর।