লেখাপড়া শেষ করে বাবার ব্যবসায় বা চাকরিতে না গিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে ২০১৬ সালে ফেসবুক পেজের মাধ্য ক্যারিয়ার গড়ার সূচনা করেন নিগার ফাতেমা। উইমেন এন্ড ই-কমার্স (উই) গ্রুপের একজন একটিভ মেম্বার এবং তাঁকে সম্প্রতি উইতে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন উই এর এডভাইজার এবং গ্রুপের এডমিন ও ই-ক্যাব এর সাবেক ও প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ। টেকজুমের সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি জানিয়েছেন তার কার্যক্রম ও পরিকল্পনা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
টেকজুম : উইতে কিভাবে আসলেন?
নিগার ফাতেমা : আমার কলিগ তৃণার আপুর মাধ্যমে আমার উইতে আসা এবং রাজিব আহমেদ স্যার একটিভ হওয়ার কারণে একটিভ হওয়া। আমি কখনও অন্য কোন গ্রুপে একটিভ ছিলাম না। স্যারের পোস্ট গুলো পড়ে নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছা হলো। সবচেয়ে বড় কথা হলো পোস্ট করে নিজের সম্পর্কে অন্যকে জানানো আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।
উইতে যোগ দেবার পর নিশা আপুর সম্পর্কে জেনেছি। মেয়েদের ই-কমার্সে নিয়ে আসার জন্য গত ৪ বছর ধরে তাঁর অবদানের কথা জানতে পেরে বুঝেছি যে আমি ভাল একটি প্লাটফর্ম পেয়েছি।
টেকজুম : উইতে কিভাবে উপকৃত হচ্ছেন?
নিগার ফাতেমা : উই থেকে অনেক ভাবেই উপকৃত হচ্ছি। ই-কমার্স নিয়ে কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে আমরা শিখতে পারবো। উই থেকে আমি শিখছি ডোমেইন, হোস্টিং, ওয়েবসাইট, ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক একাউন্ট সহ ই-কমার্স চালানোর পদ্ধতি। আমি যখন উইতে এসেছি তখন জানতাম না আজকের অবস্থানে আসতে পারবো। আমি আগেও বলেছিলাম উইতে এসে আমি প্রথম মেলা এবং ইভেন্ট করেছি। এখন স্যারের পাশে বসে কথা বলতে পারতেছি। মানুষ আমার কথা মন দিয়ে শুনছে। আমি যদি অপরিচিত কেউ হতাম তাহলে কেউ আমাকে শুনত না। আমার দৃষ্টিতে ব্যবসার অন্যতম উপাদান নেটওয়ার্ক তৈরি করা। আর সেটা হচ্ছে উইতে। গ্রুপে ২২ হাজার মেম্বারের মধ্যে আমি যদি অনিয়মিত মেম্বার হতাম কেউ আমাকে জানত না, চিনতনা, কথা শুনার আগ্রহ করত না। উই হচ্ছে সবচেয়ে বড় দেশি পণ্যের প্লাটফর্ম। আমি চোখ বন্ধ করে আস্থার সাথে কেনাকাটা করতে পারতেছি। আমি একজন ক্রেতা, বিক্রেতা, স্টুডেন্ট সহ সব দিকদিয়ে উপকৃত হচ্ছি।
আমি কৃতজ্ঞতার সাথে উই এর প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশা আপুর অবদানের কথা স্মরণ করছি। তাঁর কারনে আজ আমার মত অনেক নারী ই-কমার্সে এসে টিকে থাকার সাহস পাচ্ছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের জন্য অনলাইনে এটি সেরা প্লাটফর্ম এবং নিশা আপুর জন্যই সম্ভব হয়েছে। তিনি একজন নারী বলেই হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন যে ই-কমার্সে মেয়েদের জন্য আলাদা করে কিছু একটি থাকা দরকার।
টেকজুম : উইয়ের অফলাইন আড্ডা সম্পর্কে বলুন।
নিগার ফাতেমা : রাজিব আহমেদ স্যার একটিভ হওয়ার পর থেকে উইয়ের সব আড্ডাতে আমি ছিলাম। অফলাইন আড্ডা গুলোতে জয়েন হওয়ার কারণে ৮০-১০০ জন মেম্বারের সাথে দেখা হয় কথা হয় আর এভাবে জানা হয় আমাকে এবং আমার পণ্যকে। এভাবে তৈরি হয় আস্থা। আরেকটি ব্যপার হলো উই একটা পরিবার। এখানে নিজেদের ও ব্যবসার পরামর্শ পাই সবসময়।
টেকজুম : অনলাইন আড্ডার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলুন।
নিগার ফাতেমা : বিশেষ করে যারা ঢাকার বাহিরে থাকে, তারা বিভিন্ন কারণে অফলাইন আড্ডা গুলোতে থাকতে পারে না। তাদের জন্য অনলাইন আড্ডা গুলো পরিচিত হওয়ার বিশাল সুযোগ। রাত আড্ডা থেকে ভোর রাত ৪ টা পর্যন্ত আমরা অনলাইন আড্ডায় থাকি। শুরুতে সবাই নিজের পরিচয় দেই, পরের অংশে নিজেদের পণ্য সম্পর্কে জানি ও জানাই এবং শেষ অংশে প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে ডেলিভারি, ব্র্যান্ড ইত্যাদি সহ সকল সমস্যা নিয়ে জানতে পারি। বোনেরা নিজের, পরিবার, বাচ্চা, ব্যবসা সহ সবদিকে সামলিয়ে নিজের কক্ষ থেকে সরাসরি আড্ডা দিতে পারে, আমি বলবো এটাই সবচেয়ে বড় সুবিধা।
টেকজুম : সম্প্রতি উই গ্রুপে দেখা গেছে অনলাইন আড্ডা আর অফলাইন আড্ডা সহ উই এর বেশ কয়েকটি কাজের দায়িত্ব আপনার উপর দিয়েছেন রাজিব আহমেদ। এ নিয়ে আপনার চিন্তা কি?
নিগার ফাতেমা : দায়িত্ব পাওয়াটা আমার জন্য বড় অর্জন। আমি অনলাইন এবং অফলাইন আড্ডায় সক্রিয় ছিলাম। গ্রুপে দেওয়া স্যারের প্রতিটা পরামর্শ সর্বাত্মক ভাবে মানার চেষ্টা করতাম। তাই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। আর এভাবেই আমার পরিচিতি ও ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হয়েছে। অন্যেরাও একটিভ হলে পরিচিতি বাড়বে ও ভ্যালু বাড়বে এবং এটা সরাসরি ব্যবসায় সহায়ক হবে। আমি নিজের জীবনে ভাল কিছু করতে চাই যাতে করে অনেকে আমাকে চিনবে আর পাশাপাশি মানুষের জন্য ভাল কিছু করতে পারবো। উইতে আমি এখন সেই সুযোগ পেয়েছি। আমি চাই উইকে এগিয়ে নেবার জন্য কাজ করতে এবং এর মেম্বাররা যাতে উপকৃত হয় তা নিশ্চিত করতে। যে স্বপ্ন নিয়ে নিশা আপু উই প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং নিজের সন্তানের মত পালন করছেন তা যাতে সফল হয় সেদিকে আমি আমার মত অবদান রাখতে চাই।
আমি আসলে রাজিব আহমেদ স্যার যেভাবে কষ্ট করে উইকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সে কাজে তাঁকে সাহায্য করছি এবং করে যেতে চাই। এটি আমার প্রথম ও প্রধান ইচ্ছা।
টেকজুম : খেশ শাড়ি সম্পর্কে বলুন।
নিগার ফাতেমা : এটি টাঙ্গাইলের তৈরি তাতের শাড়ি। অন্য শাড়ির থেকে পার্থক্য- তাতিরা পুরাতন কাপড় সংগ্রহ করে ধুয়ে শুকিয়ে চিকন চিকন করে পালি তৈরি করে। সুতা এবং পুরাতন কাপড় উভয়ের মিশ্রণে আবার নতুন শাড়ি তৈরি হয়। এ শাড়িটা অন্য শাড়ির তুলনায় আরামদায়ক হয়। প্রচারের অভাবে এ শাড়ি সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ এতো দিন জানতে পারে নাই। উই হচ্ছে এমন একটা প্লাটফরম যেখানে আমি মেম্বারদের সামনে খেশ শাড়ি সম্পর্কে বলতে পেরেছি যার ফলে মেম্বারগণ চিনেছে এবং আগ্রহী হচ্ছে। আমাদের দূর্ভাগ্য হচ্ছে বড় বড় ব্র্যান্ড গুলো খেশ শাড়ি বিক্রি করছে কিন্তু প্রচার করছে না। পাশের দেশেও এ শাড়ির জনপ্রিয়তা রয়েছে।
টেকজুম : বাটনা সম্পর্কে কিছু বলুন।
নিগার ফাতেমা : বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ পাটায় পিষে ভর্তা তৈরি করে। আর রংপুরের মানুষ ভর্তা তৈরি করে বাটনায় পিষে। বাটনা তৈরিও হয় উত্তর বঙ্গে। আমরা খালার বাড়ি রংপুরে সেখানে বাটনার ব্যবহার দেখেছি তাই দেশি ও আঞ্চলিক পণ্য হিসেবে উইতে প্রচার করেছি মেম্বারদের জানানোর জন্য। ভাগ্যক্রমে গত কয়েকদিন প্রায় ১’শ বাটনা বিক্রি হয়েছে গত কয়েকদিনে।
টেকজুম : আপনি মূলত শাড়ি বিক্রেতা কিন্তু নেত্রীত্ব দিচ্ছেন নকশীতে?
নিগার ফাতেমা : এটা হচ্ছে রাজিব আহমেদ স্যারের পরামর্শ। স্যার আজকেও পোস্টে উল্লেখ করে আমাকে বলেছে চোখ বন্ধ করে উইতে এক বছর সময় দেওয়ার জন্য। আমি চোখ বন্ধ করেই স্যারের প্রতিটা পরামর্শ পালন করতে চাই। ই-কমার্সের মাধ্যমে শাড়ীর ব্যবসা করা আমার নিজস্ব স্বপ্ন। আমি চাইলে বাবার ব্যবসা দেখতে পারতাম। আর স্বপ্ন পূরণ করতেই উইতে এসে স্যারের পরামর্শ গুলো মান্য করার ফলে বেশ কিছু বিষয়ে নেত্রীত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমি জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করবো সুন্দর ভাবে দায়িত্ব পালন করার।
টেকজুম : টেকজুমে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নিগার ফাতেমা : উইয়ের সাথে আমার পথচলা তুলে ধরার সুযোগ দেওয়ায় টেকজুমকেও ধন্যবাদ।
নিগার ফাতেমা সম্পর্কে উই এর এডভাইজার রাজিব আহমেদ বলেন, “উইতে আমরা খুব ওপেন একটি সিস্টেম তৈরি করার চেস্টা করেছি যেখানে প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশার নেতৃত্বে উইকে এগিয়ে নেবার জন্য যারা একটিভ হবে তারা পরিচিতি পাবে এবং অবদান রাখার সুযোগ পাবে। নিগার আপুর মাধ্যমে আমরা ই-কমার্সে লেখাপড়ার দিকে ভাল কিছু করতে পারবো বলে আশা রাখি।“