শিক্ষক বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে ফারদীন হক জ্যোতির জন্ম ও বড় হওয়া রংপুরে। জ্যোতি সরকারি কারমাইকেল কলেজে স্নাতক শেষ বর্ষে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত আছে। উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন নিজেকে। জ্যোতির উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন। ফারদীন হক জ্যোতির সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মেহজাবীন রাখী।
টেকজুমঃ উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু কিভাবে?
জ্যোতিঃ উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল অর্জন করায় ২০১৯ জানুয়ারিতে ‘পাঁচ হাজার টাকা’ বৃত্তি পাই। বৃত্তির পাঁচ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে একই বছর মার্চে ‘রঙ্গিলা রং’ এর যাত্রা শুরু করি। তার আগেও আমি বেশ কিছু ব্যবসা শুরু করেছি কিন্তু সফল হতে পারিনি।
টেকজুমঃ ক্যারিয়ারে ই-কমার্স কেন বেছে নিলেন?
জ্যোতিঃ আমি একটু স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পছন্দ করি। নতুন কিছু এবং কঠিন চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে আমার বেশ ভালো লাগে। বাংলাদেশের ই-কমার্স এখনো খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি। সাধারণ মানুষ এখনো ই-কমার্স কে মেনে নেয়নি। আমরা এখনো দোকান খুলে বসে দোকানদারের সাথে দামাদামি করে কেনাকাটা বেশি পছন্দ করি। আর যেখানেই সমস্যা সেখানে সমাধান দেওয়া উদ্যোক্তাদের কাজ। আর তাই, ক্যারিয়ারের জন্য বেছে নিলাম ই-কমার্স বিজনেস।
টেকজুমঃ ‘রঙ্গিলা রঙ’-কে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?
জ্যোতিঃ ‘রঙ্গিলা রং’ এর জন্য স্বপ্নের জায়গাটা অনেক বড়। আর এই স্বপ্ন টা আমি কখনোই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি নি। হয়তো আমার স্বপ্নের কথা গুলো শুনলে আপনি অথবা আপনারা হাসবেন, ঠিক যেমন এক বছর আগেও মানুষ হাসাহাসি করেছে। কিন্তু আজ কিছু করতে পেরেছি বলেই আপনি ইন্টারভিউ নিচ্ছেন। রঙ্গিলা রং পাঁচ হাজার দিয়ে শুরু হয়েছিল, এইটাকে পঞ্চাশ হাজার কোটির বিজনেসে পরিণত করতে চাই। রংপুর এর শতরঞ্জি শিল্প নিয়ে এক চেটিয়া কিছু প্রতিষ্ঠান গতানুগতিক কাজ করে যাচ্ছে। আমি ঠিক এই জায়গাটাতেই কাজ করতে চাই, আমি চাই রংপুর এর শ্রমিক, কারিগর, তাঁতী ওরা সবাই রংপুর এর মাটিতে বসেই রোজগার করবে, পেটের দায়ে যেন অন্য অঞ্চলে যেতে না হয়।
টেকজুমঃ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন?
জ্যোতিঃ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে যত চ্যালেঞ্জ তো দু চারটে কথায় প্রকাশ করা সম্ভব না। সব নারীর মত আমাকেও পারিবারিক, সামাজিক বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। পণ্যের কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য যখন গিয়েছি তখন ও অনেক ভাবেই আমাকে বাধা দেয়া হয়েছে। মেয়ে এবং বয়স কম তাই ঠকানোর চেষ্টা ত্রুটি রাখেনি। তবে এই আমার জন্য পজেটিভ ছিল, তারা বাধা না দিলে হয়তো এতটা পথ আসতে পারতাম না, তাদের একটা ধন্যবাদ দিতে চাই।
টেকজুমঃ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) কিভাবে আপনার উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছে?
জ্যোতিঃ উই এর ভূমিকাটা যদি আমি গাণিতিক ভাষায় বলি তাহলে বলতে হয় ৯৫% বা তার ও বেশি। আমি যখন উইর সাথে যুক্ত হই, তখন ছিলাম ঝড়ে আহত ছোট্ট পাখির মত। তারপর আস্তে আস্তে সেবা যত্নে উই আমাকে বড় করলো এবং আমি এখন উড়তে পারি, ই-কমার্সের বিশাল আকাশে। রাজিব স্যার আমার জীবনে এমন একজন মানুষ যিনি শিখিয়েছেন কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়, কিভাবে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে হয়, কি ভাবে টিকে থাকার লড়াই করতে হয় এবং কিভাবে বাঁচতে হয়। আমরা যারা কেবল শিখছি তাদের আসলে অনেক কিছুই অজানা থাকে যার জন্য আমাদের ঠকানো সহজ হয় কিন্তু এখন তো আমাদের পাশে উই আছে বিনা টাকায়, আমাদের এতো কিছু শিখিয়ে দিয়েছে যে আমরা এখন প্রচণ্ড রকম শক্তিশালী। এই করোনার মধ্যে যখন সব বন্ধ তখন ‘উই’ ছিল বলে আমার বিক্রি হয়েছে, কারিগররা বেতন পেয়েছে, আবার ঈদের চাঁদ রাতে যখন সব বন্ধ করে দিয়েছি, তখন চাঁদ রাতের কেনাকাটার জন্য ‘উই’ থেকে কাস্টমার আসা শুরু করায় আবার সব খাতা কলম নিয়ে বসে গেলাম অর্ডার নিতে, এসব ‘উই’ না থাকলে হতো না। এখন আপনি ভাবেন পারেন উই আমার জীবনে, আমার উদ্যোগে কত বড় ভূমিকা রেখেছে।
টেকজুমঃ ধন্যবাদ, জ্যোতি টেকজুমকে সময় দেওয়ার জন্য।
জ্যোতিঃ অসংখ্য ধন্যবাদ টেকজুমকে।