বাবা মায়ের দুই মেয়ের মধ্যে রওশান ইকা বড়। যশোর জেলা সদরে তার জন্ম ও বেড়ে উঠা। বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে হিসান বিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। সরকারি একটা ফ্রি ট্রেনিং এ অংশগ্রহণ করে সেখানে থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা তৈরি হয় । শুরু করি আমার নিজের উদ্যোগ । একদম শূন্য থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। দেশীয় ঐহিত্যবাহী পণ্য পৌঁছে দেবে দেশের অন্যান্য জেলাসহ দেশের বাইরে, এই প্রত্যয়, জেদ, আর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে রওশন ২০১৭ সালে তার ফেসবুক পেজ রওশন’স ক্রিয়েশন (Rowshans Creations) চালু করেন।
উদ্যোক্তা বীজ কিভাবে বপন হলো?
সবার মত আমিও চেয়েছিলাম, পড়া লেখা শেষ করে চাকুরিজীবী হব। কিন্তু সে অনেক কাহিনী! কাঙ্ক্ষিত চাকরি আর হলনা। ব্যর্থ হলাম! তারপর সরকারি একটা ফ্রি ট্রেনিং এ অংশগ্রহণ করি সেখানে আমার মেন্টর উদ্যোক্তা হওয়ার উৎসাহ দেয়। মায়ের কাছে থেকে মাত্র ৬৫০ টাকা নিয়ে রওশন ব্যবসা শুরু করি। প্রথম দিকে তার আত্মীয়-স্বজন আর প্রতিবেশীরা তার ব্যবসা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করত। তাদের কথা হলো মাস্টার্স পর্যায়ের পড়া শেষ করে অন্তত কিছু না হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরিও তো করতে পারত।
ইকমার্সে আসার কারণ কি ছিল?
আমি যশোরের মেয়ে। যেহেতু কাঙ্ক্ষিত সরকারী চাকরি হয়নি। এদিকে বাবাও চান নি, যশোরের বাইরে গিয়ে কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কিন্তু আমাকে কিছু করতেই হবে। কিন্তু কী করব? ২০১৭ এর মার্চের দিকে একটা সুযোগ হল, যশোর আইটি পার্কে কল সেন্টার ম্যানেজমেন্টের উপর একটা ট্রেনিং করার। সুযোগটা কোন রকম হাত ছাড়া করলাম না। সেখানে আমাদের মেন্টর যিনি ছিলেন, আমার ইকমার্সের হাতেখড়ি তার মাধ্যমেই। সত্তিই তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।
যশোরের সব দেশীয় প্রোডাক্টের সোর্সিং করতে লাগলাম, মাইলের পর মাইল হেঁটে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বাঁশের বুননের পণ্য সহ আরও নানা প্রোডাক্ট। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে সূচশিল্পে ফোকাস করলাম। কিন্তু কুরিয়ারের সমস্যার সমাধান হলে কুটিরশিল্প নিয়েও (বাঁশের বুননের) কাজ করার ইচ্ছে আছে। সব কিছু মিলিয়ে , যশোরের ঐতিহ্যকে সবার সামনে তোলে ধরতে জানপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আর ভেবেছি বারে বারে, হাত বদল ছাড়া যশোরের মুল্যবান ঐতিহ্যবাহী সূচশিল্পের পণ্য যেন দেশের বাইরেও যায়। তা বাস্তবায়ন করতে ইকমার্স হবে সহজ মাধ্যম। এজন্যই ইকমার্সকে বেছে নেয়া।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
যশোরে আরও নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করা। নতুন নতুন ডিজাইন বাস্তবায়ন করা। ফ্যাশনে বৈচিত্র আনা। সূচশিল্পকে আরও ফিউশন্ড আকারে প্রেজেন্ট করা। দেশ ও দেশের বাহিরে যেন মানুষ যশোরের ঐতিহ্যবাহী সূচশিল্প জানতে ও ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। প্রচারনা বাড়ানোর জন্যও করছি।
আপনার চ্যালেঞ্জ গুলো কিভাবে জয় করেছেন?:
উদ্যোক্তা মানেই প্রতিমুহুর্তই চ্যালেঞ্জ। ফ্যাশন, চালচলন, সোর্সিং, ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করা সহ ইত্যাদিতে চ্যালেঞ্জ। মেয়ে হয়ে ই-কমার্স বিজনেস করা পরিবার ও সমাজ মেনে নিতে পারতো না শুরুতে। কিন্তু আমি লেগেছিলাম এবং কাজ করে গেছি। তাই ধাপেধাপে সমস্যা গুলো কমেছে।
উই যেভাবে আমার ক্যারিয়ারে অবদান রাখছে?
প্রতিটা কাজে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি। উইতে সবাই মিলে এই ধারা ধরে রাখতে পারছি। প্রতি সপ্তাহে অনলাইনে ক্লাস করছি। কনটেন্ট রাইটিং, পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং, আই সি টি, ওয়েব ডেভেলপ, মোটিভেশনসহ সব কিছু নিয়ে সাম্যক ধারনা পাচ্ছি আর নিজের ভীত শক্ত করতে উদ্যম নিতে পারছি।