করোনার সময়ে ক্রেতার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক রেস্টুরেন্ট। যে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট এখন ব্যবসা করছে তাদের অধিকাংশই অনলাইন অর্ডারনির্ভর। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানা রকম অফার দিচ্ছে অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
অনলাইনে খাবার বেশি অর্ডার হলে রেস্টুরেন্ট যেমন লাভবান হয় তেমনি লাভের অংশীদার হয় ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এই লাভের হার বাড়ানোর জন্য খাবারের দাম বাড়িয়ে ডিসকাউন্টের অফার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ‘ফুডপান্ডা’র বিরুদ্ধে।
খাবারের হোম ডেলিভারি সার্ভিস ফুডপান্ডা বয়কটের একটা শোরগোল উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে রেস্টুরেন্টগুলোকে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ এনেছেন মালিকদের কয়েকজন। তাদের দাবী, পরোক্ষভাবে খাবারের দাম বাড়ানোর জন্য তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে ফুডপান্ডা কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার দুপুর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাজধানীর ধানমন্ডির হার্ট ওয়ার্ল্ড রেস্টুরেন্টের এক পোস্ট নিয়ে চলছে সমালোচনা। ফুডপান্ডা থেকে ওই রেস্টুরেন্টকে খাবারের বর্তমান দাম ২০% বাড়িয়ে ২০% ডিসকাউন্ট দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই পোস্টে। একই সঙ্গে খাবার অর্ডার এবং ডেলিভারির জন্য কমিশন ২০% থেকে বাড়িয়ে ২৮% করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
একজন খাবার বিক্রিতা জানান, খাবার বিক্রির লভ্যাংশ থেকে ৫১% দিতে হবে তাদের। রেস্টুরেন্ট মালিকরা রাজী না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি তাদের পরোক্ষভাবে বলেছে খাবারের দাম বাড়িয়ে দিয়ে হলেও যেন লাভের পরিমাণ বাড়ানো হয়। ডিজিটাল মাফিয়াগিরি ছাড়া এটাকে আর কীইবা বলা যায়?
খাবার বিক্রি করে পাওয়া লাভের সিংহভাগ যদি ফুডপান্ডাই নিয়ে যায়, তাহলে বাধ্য হয়েই রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে খাবারের দাম বাড়াতে হবে। রেস্টুরেন্ট মালিকদের হিসেবে, খাবারের দাম প্রায় দেড়গুন বাড়াতে হবে এজন্য। অর্থাৎ যে খাবারের দাম ছিল একশো টাকা, সেটার দামই এখন দেড়শো টাকা হয়ে যাবে। ফুডপান্ডা হয়তো গ্রাহক আকর্ষণের জন্য ফ্রি ডেলিভারি বা এরকম আকর্ষণীয় অফার দেবে, কিন্ত খাবারের দাম বেড়ে যে আসল ভোগান্তিটা গ্রাহকদেরই পোহাতে হবে, সেটা পান্তাভাতের মতোই সহজ একটা ব্যাপার।
যেখানে লোকাল ভেন্ডরগুলো ২০-২৫ শতাংশ রেভিনিউ সিস্টেমে অপারেশন চালাচ্ছে, সেখানে নিজেদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিক্রেতাদের ব্ল্যাকমেল করে খাবারের দাম বাড়াতে বাধ্য করে গ্রাহককে ভোগান্তির মুখে ফেলাটা কোন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাজ হতে পারে না।
এর আগেও ফুডপান্ডা বয়কটের একটা ট্রেন্ড শুরু হয়েছিল মালয়েশিয়ায়, রাইডারদের লভ্যাংশ কমিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ঘটেছিল সেই ঘটনাটা। সেবার প্রতিবাদের মুখে নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
এই বিষয় ফুডপান্ডা এক বিবৃতিতে জানায়, আসলে, গত ৩ মাসে আমরা আরও অনেক বেশি রেস্টুরেন্ট ও দোকানের সাথে চুক্তি করেছি, যাতে করে আমাদের পার্টনার রেস্টুরেন্টগুলো উপার্জন অব্যাহত রাখতে পারে এবং আরও বেশি গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারে। বাজারে ব্যবসায়িক গতি সচল রাখার জন্য আমরা আমাদের চুক্তি ও ছাড়ে অনেক বেশি বিনিয়োগ করেছি, যাতে করে আমাদের গ্রাহকরা সামর্থ্যের মধ্যে পছন্দের রেস্টুরেন্ট থেকে পছন্দের মেন্যুটি উপভোগ করতে পারেন, বর্ধিত চাহিদার কারণে যাতে পুরো ইকোসিস্টেম লাভবান হয়, আমাদের পার্টনার রেস্টুরেন্টগুলো যাতে আরও বেশি বেশি অর্ডার পায় এবং আমাদের পার্টনার রাইডাররা যেন বেশি বেশি ডেলিভারি দিতে পারেন।
রেস্টুরেন্ট শিল্পকে সচল রাখার জন্য এতো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরও, আমাদের একটি পার্টনার রেস্টুরেন্ট কর্তৃক বাড়তি কমিশন বিষয়ক দাবি এবং অপেশাদার ব্যবসায়িক আচরণ আমাদের মর্মাহত করেছে। বিশেষ করে এই সময়টাতে, যখন কী না আমাদের মতো অনেকেই এই ইকোসিস্টেমটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । তাছাড়া আমরা এই ঘটনার পেছনের সঠিক কারণ শনাক্ত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো এটি প্রকৃতপক্ষে ব্যবসার মালিক পক্ষের সাথে আমাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে একটি ধারাবাহিক আলোচনা হচ্ছিলো , যা কোন প্রয়োজন ছাড়াই সকলের সামনে উপস্থাপন করা হলো।
আমাদের পার্টনার রেস্টুরেন্টগুলো যেকোন সমস্যার মুখোমুখি হলে, তা সুষ্ঠুভাবে সমাধানের জন্য আমাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হলো। বিশেষ করে এই কঠিন সময়ে আমরা সকলে একসাথে এগিয়ে যেতে চাই। যখন আমরা সবাই মিলে ব্যবসায়িক ইকোসিস্টেম ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তখন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের ইকোসিস্টেমের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমাদের সকলের লক্ষ্য একটাই, আর তা হলো আমাদের গ্রাহক, রাইডার এবং রেস্টুরেন্ট পার্টনার সহ সকল স্টেকহোল্ডারদের জন্য একটি টেকসই মার্কেটপ্লেস গড়ে তোলা।