দক্ষিন এশিয়া থেকে শুরু করে সারা বিশ্ববাসী সবাই তাকে চেনে৷ বিশ্বের অন্যতম বড় অনলাইন শপিং প্লাটফর্ম আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা কে নিয়ে একটি সিনেমা বানানো যেতে পারে৷ যে সিনেমার গল্প হবে সিনেমার থেকে বেশি কিছু৷
২০১৭ সালের দিকে বিশ্বের ৫০ জন লিডারের নাম ঘোষণা করে ফরচুন ম্যাগাজিন । তার মধ্যে জ্যাক মা কে দ্বিতীয় স্থান প্রদান করে এ ম্যাগাজিনটি৷
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের এক তথ্য অনুসারে জ্যাক মার বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ ৪০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ তবে আপনি কি জানেন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এবং ধনী ব্যক্তি হওয়া সত্বেও একসময় মাত্র মাসিক ১২ ডলার বেতনের বিনিময় স্কুল শিক্ষকতা করতেন । আজকে আমরা জানবো এক জ্যাক মার গল্প৷
জ্যাক মার আসল নাম মা ইউন। একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার ১৫ ই অক্টোবর ১৯৬৪ সালে মা চু ইউএন চাই এবং বাবা “মা লাইফার” ঘরে জন্মগ্রহণ করেন মা উইন ওরফে জ্যাক মা। তবে মা ইউন থেকে কিভাবে জ্যাক মার নাম হল তার সেই গল্প সামনে রয়েছে।
দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়া করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল জ্যাক মা কে । তবে কখনো পিছপা হননি তিনি৷ তেমন ভাল ছাত্র ছিলেন না । আবার একদম খারাপ তাও ছিলেন না । তবে ইংরেজি শেখার প্রতি তাঁর ছিল প্রবল আগ্রহ৷ এবং সেই কারণেই ইংরেজি শেখার বিনিময়ে তিনি অনেক হোটেলে ফ্রী গাইড হিসেবে কাজ করেছেন৷
এইভাবে এক পর্যটক এর সাথে তার বেশ বন্ধুত্ব হয় । এবং তিনি মা ইউন কে জ্যাক মা নামকরণ করেন৷
কিভাবে ইন্টারনেটের সাথে পরিচিত হলো জ্যাকমার?
১৯৯০ সালের দিকে এখনকার মতো গুগল ট্রান্সলেট ছিলনা৷ তখন মানুষদের দিয়েই ট্রান্সলেট অর্থাৎ অনুবাদ করানো হতো। জ্যাক মার একটি ট্রান্সলেট ফার্ম বা অনুবাদ ফার্ম ছিল৷
ঠিক তেমনি অনুবাদের কাজ নিয়ে একবার আমেরিকায় গিয়েছিলেন তিনি৷ এবং সেখানেই তিনি পরিচিত হন ইন্টারনেটের সাথে৷ ইন্টারনেটে তিনি সর্বপ্রথম সার্চ করেছিলেন ” বিয়ার ” লিখে। দেখলেন যে “বিয়ার” বিক্রি করে এমন অনেক ই- কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছ কিন্তু তার মধ্যে চিনের কোন ওয়েবসাইট ছিল না৷ তিনি ব্যাপারটাকে বেশ গভীর ভাবে নেন৷ এবং তার ভাবনা থেকেই তিনি মাত্র কয়েক ডলার দিয়ে ইন্টারনেটে একটি ওয়েবসাইট খুলে বসেন। যেখানে তিনি তার কাস্টমারদের সাথে কথা বলে বিয়ার বিক্রি করতো৷ জ্যাক মা সকাল ৯:৪০ মিনিটে ওয়েবসাইটটি খুলেছিলেন৷ এবং দুপুর ১২:৩৫ মিনিটের মধ্যেই তিনি সাতজন কাস্টমারের সাথে কথা বলে বিয়ার বিক্রি করে। ব্যাপারটা জ্যাক মা কে আরো গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলে । আরে! তিনি তো বেশ লাভবান হচ্ছেন। এরপরে জ্যাকমা একটি বড় উদ্যোগ নেন। তার স্ত্রী এর সহায়তা নিয়ে তিনি ২0,000 ডলার জোগাড় করেন এবং খুলে বসেন “চাইনা প্যাসেজ”৷ তারপরে আর কি?
অন্যান্য সফল উদ্যোক্তাদের মত আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
জ্যাক মার প্রতিষ্ঠান আলিবাবার নামকরণ এর পেছনে একটি গল্প রয়েছে৷ আমেরিকায় থাকা কালীন কোথা থেকে যেন আলিবাবা এবং চল্লিশ চোরের গল্প শুনিয়েছিলেন জ্যাকমা৷ ” আলিবাবা” নামটি তার বেশ মনে ধরে যায়৷ তিনি সবাইকে আলিবাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তারা সবাই আলিবাবা চল্লিশ চোরের গল্প সম্পর্কে তাকে অবগত করে৷ নামটি তার বেশ মনে ধরে এবং সেই থেকেই তিনি চায়না প্যাসেজ কম্পানির নামকরণ করেন আলিবাবা । স্টিভ জবস এর মতো তিনিও মিডিয়ার সামনে আসতে খুব একটা পছন্দ করতেন না৷
দিনশেষে জ্যাক মার গল্প থেকে আমরা এটুকুই বুঝি কোন উদ্যোগ গ্রহণ করার ইচ্ছা থাকলে কখনো টাকাপয়সা কাউকে ঠেকিয়ে রাখে না। বরং মানুষের অদম্য ইচ্ছা এবং আগ্রহ মানুষকে চরম শিখরে পৌঁছতে সহায়তা করে।
এর জলজ্যান্ত উদাহরণ জ্যাক মা৷ কোথায় ১২ ডলারের শিক্ষকতা আর কোথায় তিনি এশিয়ার পঞ্চম ধনী ব্যক্তি!