ই-কমার্স এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘ঘরে বসে স্বস্তির পেঁয়াজ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আজ রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) অনলাইনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেনে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন।
এতে জানানো হয়, ৩৬ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে পারবেন ভোক্তারা। প্রাথমিকভাবে দেশের পাঁচটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩৬ টাকা মূল্যে ৩ কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে একজন ক্রেতার কাছে। এছাড়া প্রতিটি অর্ডারের ডেলিভারি মূল্য ঠিক করে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের ই-কমার্সে পেঁয়াজ পেতে এ কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে এ পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করা হচ্ছে। পরে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও পেঁয়াজের পরিমাণ বাড়ানো হবে। পর্যায়ক্রমে ই-কমার্সের আওতায় দেশের সব স্থানে টিসিবি সাশ্রয়ীমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করবে।
ই-ক্যাব জানায়, আপাতত পাঁচটি অনলাইন প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত টিসিবির অনলাইন ডিলারশিপ পেতে যাচ্ছে- চালডাল, স্বপ্ন অনলাইন, সিন্দাবাদ ডট কম, সবজিবাজার ডট কম এবং বিডিসোল কম।
সোমবার থেকে যাচাই ডটকম, একশপ ও অন্য একটি প্রতিষ্ঠান এই ধারাবাহিকতায় যুক্ত হতে পারে। এছাড়া উইন্ডি নামে নারী উদ্যোক্তাদের একটি কমন প্ল্যাটফর্ম থেকেও টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে বড় ধরনের আমদানি ও সাশ্রয়ীমূল্যে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। যারা ট্রাকসেল থেকে কিনতে পাচ্ছেন না, তাদের জন্য টিসিবি ই-কমার্সের সহযোগিতায় সাশ্রয়ী মূল্যের পেঁয়াজ বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অন্য পণ্যের মতো এখন সাশ্রয়ীমূল্যের পেঁয়াজও ক্রেতারা বাসায় বসে কিনতে পারবেন। ই-কমার্সের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রির ধারণাটি নতুন, এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আসতে পারে। আমরা থেমে থাকবো না, সমস্যার সমাধান করে এগিয়ে যাবো।
পেঁয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরে দেশি ও আমদানি করা পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। ভারত ইতোমধ্যে ২৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে, এগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু হয়েছে। আশা করা যায় আরও ১০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেবে ভারত। মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়ে গেছে। এছাড়াও অনেক দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট হবে না। আমরা অস্থির না হয়ে শুধু প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ কিনলে কোনো সমস্যা হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন টিসিবির চেয়ারমম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান বলেন, টিসিবি সাধারণত ট্রাকসেলের মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষদের নিত্যপণ্য সরবরাহ করে। কিন্তু অনলাইন শপগুলো থেকে পেঁয়াজ বিক্রির মাধ্যমে যেসব ক্রেতা হয়তো লাইন ধরে পণ্য কেনেন না তাদের জন্য এই সুযোগ তৈরি হলো। সরকারের এই সেবা অনলাইনে বিস্তৃতির মাধ্যমে আরো বেশি মানুষকে সংযুক্ত করবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আপাতত দৈনিক আধাটন করে পেঁয়াজ পাবে এবং তিনদিন পর পর টিসিবি থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করবে। অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রি প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। প্রতিষ্ঠানগুলোর গুদামঘর, ডেলিভারি ক্যাপাসিটি, ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ই-ক্যাবের সুপারিশ বিবেচনায় টিসিবির ডিলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পুরো প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, টিসিবি ও ই-ক্যাব একটি অভিন্ন বিধিমালা বা এসওপি প্রণয়ন করেছে। যা মেনে চলতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বাধ্য থাকবে। এসব পেঁয়াজ অনলাইন ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবে না।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব (রপ্তানি) মো. ওবায়দুল আজম, অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) হাফিজুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক এবং ই-কমার্স প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, ই-কমার্সের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার, চালডাল কর্মসূচির পরিচালক ইসরাত জাহান নাবিলা ও নাদিয়া বিনতে আমীন।