দেশের বিখ্যাত মিষ্টি গুলোর মধ্যে মন্ডা অন্যতম। ইন্টারনেট তথা ই-কমার্সের কল্যাণের মন্ডার প্রচার ও প্রসার বেড়েছে কয়েকগুণ। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে মন্ডা। মক্তাগাছার মন্ডার পরিচিতি সর্বত্র থাকলেও পিছিয়ে নেই শেরপুরের মন্ডা। জেলা ভিত্তিক দেশি পণ্যের কনটেন্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে শেরপুরের মন্ডা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হয় আমাদের।
মন্ডা তৈরি করতে খাঁটি দুধ জাল দিয়ে ছানা করে নিতে হয়। এরপর ছানার সাথে ক্ষীর, সামান্য চিনি ও এলাচিগুড়া মিশিয়ে ছোট ছোট অংশে আলাদা করে তৈরি করা হয় মন্ডা। সম্পূর্ণ কাজ হাতের সাহায্যে করতে হয়ে। শেরপুর জেলা শহরের কয়েকটি মিষ্টির দোকান তৈরি হয় মন্ডা। এর মধ্যে অনুরাধা, স্বদেশ, আদি গিরীশের মন্ডার চাহিদা ব্যাপক।
মন্ডার কাস্টামর শিমুল মিয়ার জানায়, অন্যান্য মিষ্টিতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় তিনি খেতে পারেন না। মন্ডাতে চিনির পরিমাণ কম হওয়ায় এবং হালকা মিষ্টি হওয়ায় নিয়মিত খেয়ে থাকেন মন্ডা।
শেরপুর বিসিক উপ-ব্যবস্থাপক জনাব তামান্না মহল অনেক দিন যাবৎ কিডনি রোগে আক্রান্ত। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিলেও এক পর্যায়ে ডায়ালাইসিস করতে যেতে হয়েছে বাংলাদেশ কিডনী ফাউন্ডেশনে। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে পরামর্শ দিয়েছে ডাক্তার। বিসিক কর্মকর্তা জানায়, সরাসরি দুধ খেলে তাঁর গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে নিয়মিত মন্ডা খান তিনি।
মন্ডার উৎপাদনের শুরুর সময় জানতে চাইলে মন্ডা ব্যবসায়ী বাপ্পি দে বলেন, আমি সঠিক করে বলতে পারছি না, তবে চার পুরুষ অর্থাৎ তার বাবা, বাবার বাবা এবং বাবার দাদা থেকে চলমান রয়েছে মন্ডার ব্যবসা। শেরপুরে শুধু একপ্রকারের মন্ডা তৈরি হয়। তবে মুক্তাগাছায় দুই প্রকার অর্থাৎ শীত মৌসুমে গুড়ের মন্ডাও উৎপাদন হয়।
মুক্তাগাছা আর শেরপুরের মন্ডার পার্থক্য জানতে চাইলে বাপ্পি দে বলেন, মুক্তাগাছার মন্ডা আর শেরপুরের মন্ডা মূলত একই প্রক্রিয়াতে তৈরি হয়। তৎকালিন জমিদারদের কারণে মুক্তাগাছার মন্ডার নাম বেশি হয়েছে। শেরপুরের নাম টা সেভাবে হয়নি। বাপ্পি দে জানায়, মন্ডার মূল উপাদান ছানা। শেরপুরের কয়েকটি দোকানে সঠিক ভাবে ছানা উৎপাদন হয়। তাই মন্ডাটাও উৎপাদন হয় সঠিক ভাবে। গুণগত মানে কোন অংশে কম নয় শেরপুরের মন্ডা।
বাপ্পি দে আরও জানায়, ফ্রিজ ছাড়া সাধারণ ২৪-২৫ ঘন্টা মন্ডার গুণগত মান ঠিক থাকে। ২৫-২৬ ঘন্টা যাওয়ার পর মন্ডা নষ্ট হয় না তবে স্বাদের পার্থক্য তৈরি হয়। শেরপুরের মন্ডা এখন পর্যন্ত কানাডা, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কুয়েত সহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। প্রতি সপ্তাহে যাচ্ছে পাশের দেশ ভারতে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা শেরপুর আসলে সাথে করে নিয়ে যায় শেরপুরের মন্ডা। প্রবাসীদের সূত্র মতে, শুকন টাইপের মিষ্টি হওয়ায় বহন করা সুবিধা এবং নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম।
মন্ডা নষ্ট হলে বুঝতে পারা উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি খুবই সহজ জিনিস। মন্ডা নষ্ট হলে টক টক গন্ধ আসবে। যখনি টকটক গন্ধ আসবে তখনি বুঝতে হবে মন্ডার গুণগত মান নষ্ট হয়েছে।
তথ্য সংগ্রহ : মো : দেলোয়ার হোসেন, ইমরান হোসেন, ও প্রতাপ পলাশ।